রক্তাক্ত লংগদু


পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সমন্বয়ে গঠিত জনগণের উপর বাঙালী শাসক শ্রেণী- মুৎসুদ্দি-বুর্জোয়া সামন্তদের ফ্যাসিস্ট সরকার তার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের উগ্র জাতীয়তাবাদী নিপীড়নের হিংস্র চেহারা এমন এক রূপ লাভ করেছে যার সাথে কেবল৭১ সালে পাক-বাহিনীর বাঙালীদের উপর পরিচালিত নৃশংসতারই তুলনা চলে

শাসক শ্রেণী প্রতিক্রিয়াশীল নিপীড়কদের প্রচারযন্ত্র- রেডিও, টিভি, ইত্তেফাক, ইনকিলাব, বাংলার বাণীর মতো সংবাদপত্রগুলি ভুলেও কখনো নিপীড়িতদের পক্ষে যেতে পারে এমন কোনো সংবাদ পরিবেশন করে না তবে নিপীড়িত জনতার সংগ্রামের বিরুদ্ধে সকল প্রকার কুৎসা অপপ্রচার করা এদের স্বভাব

পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রাম সম্পর্কে এরা সেটাই যে করে এসেছে তার প্রমাণ পার্বত্য চট্টগ্রামে লংগদু উপজেলায়৮৯ সালের ৪ঠা মে তারিখে সংঘটিত গণহত্যা লংগদু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকায় হাজার হাজার পাহাড়ী ছাত্রের শোক মিছিল, প্রেসক্লাবে দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের সামনে তাদের বক্তব্য- এসব কিছুই সমতল ভূমির একজন মানুষও জানতে পারেননি তথাকথিতজাতীয়পত্র-পত্রিকাগুলো থেকে রেডিও, টিভি তো দূরেই থাকুক


শুধু৮৯ সালের লংগদুতেই নয়, ইতিপূর্বেও ধরনের গণহত্যা ধ্বংসলীলা চালিয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙালী শাসক শ্রেণীর হাতিয়ার ফ্যাসিস্ট সেনাবাহিনী  এর মাঝে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ পাইকারী নির্যাতনের বিশেষ ঘটনাগুলো ঘটে ১৯৭১ সালে পানছড়ি কুর্কি চারায়, ১৯৮০-তে কাউখালীতে, ১৯৮৪ সালে ভূষণছড়ায়, ১৯৮৬ সালে পানছড়ি-দিঘীনালা-মাটিরাঙায় ১৯৮৮ সালে বাঘাইছড়ি (কাশলং)-

বাংলাদেশ সরকারের দালাল লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান আঃ রশিদকে গত বছরের ৪ঠা মে তারিখে অজ্ঞাত পরিচয় আততায়ীরা হত্যা করে এই ঘটনাটির সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় আর্মী ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর জাকিরের নেতৃত্বে স্থানীয় বাঙালী প্রতিক্রিয়াশীলরা পাহাড়ী জনগণের উপর উন্মত্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা মিসেস নমিতা চাকমার তিন মাসের শিশু কন্যা, ৭০/৭৫ বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ ৩২ জন নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা করে; মারাত্মকভাবে আহত করে অনেককে এই বর্বর অভিযানে ধ্বংস করা হয় নয়টি গ্রামের জুম্ম জনগণের সর্বস্ব পুড়িয়ে দেয়া হয় এক হাজার এগারটি ঘর, দুটি স্কুল ৬টি ধর্মীয় মন্দির


পাহাড়ী জনগণ আজ এমন এক পর্যায়ে রয়েছে যে নিজ জন্মভূমিতে পরিচয়পত্র ছাড়া ঢুকতে পারে না এই হলো সরলপ্রাণ সংগ্রামী পাহাড়ী জাতিসত্তার জুম্ম জনগণের কাছেগণতান্ত্রিকবাংলাদেশ সরকার তার সেনাবাহিনীর চেহারা কি অপরাধে এই ভয়াবহ দমন অভিযান? অপরাধ একটাই, তারা এই উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙালী শোষক শাসকদের ফ্যাসিস্ট নিপীড়ন থেকে মুক্তি চান, তারা তাদের জাতির উপর বাঙালী শোষকদের শোষণের অবসান চান, যুগ যুগ ধরে নিজস্ব বাসভূমি বলে পরিচিত পার্বত্য এলাকায় তারা জোরপূর্বক বসতকারী বাঙালীদের দ্বারা উচ্ছেদ হবার হুমকির অবসান চান কিন্তু পাহাড়ী জনগণের এই ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভকে পুঁজি করে সাহায্যের নামে এই জাতিসত্তার দিকে থাবা মেলে দিচ্ছে আরেক নিপীড়নকারী ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ- যারা শিখ, তামিল, গুর্খা, কাশ্মিরীসহ অনেক নিপীড়িত জাতির অস্তিত্ব বিলোপের চেষ্টায় নিয়োজিত ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কারণেই পাহাড়ী জনগণের ন্যায্য সংগ্রাম বিপথে চালিত হচ্ছে

বাঙালী শ্রমিক-কৃষক-বিপ্লবী বুদ্ধিজীবী সকল নিপীড়িত জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে পাহাড়ী জনগণের ওপর শাসক শ্রেণী রাষ্ট্রযন্ত্রের শোষণ-নির্যাতনের প্রতিবাদ করা এবং পাহাড়ী জনগণের ন্যায্য সংগ্রামের পক্ষে দাঁড়ানো কারণ একই শাসক-শোষক শ্রেণী, তাদের প্রভু মার্কিন-রুশ-ভারত এবং তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ-মিলিটারি, আইন-প্রশাসন বাঙালী নিপীড়িত জনতারও শত্রু বাঙালী শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত জনগণের মুক্তির জন্য একই শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হচ্ছে হবে  তাই পাহাড়ী বাঙালী নিপীড়িত জনগণের মুক্তি সংগ্রাম পরস্পরের মিত্র লংগদু গণহত্যাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘঠিত সকল হত্যাযজ্ঞ ধ্বংসলীলা এবং বর্বর মধ্যযুগীয় নিপীড়ন-নির্যাতন তীব্র নিন্দা যোগ্য আহ্বান জানাই, পাহাড়ী বাঙালী নিপীড়িত জনগণের যুক্ত সংগ্রামে সবার জোটবদ্ধ হওয়ার...!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ