ডায়োজেনিস
– প্রাচীন সিনিক দর্শন
(আমি সিনিকের অনুবাদ করছি না
কারণ হতাশাবাদ শব্দটি সিনিক দার্শনিকদের
প্রতি সুবিচার করতে পারবে না)
(Diogenes and Alexander Master study of the the original by Gaetano Gandolfi, 1792) |
১৯৬৭ সালে ডিজনীর অ্যানিমেটেড
ফিল্ম ‘দ্য জাঙ্গল বুক’
এ ভালুক বালু গানে
গানে একটি দার্শনিক ম্যানিফেস্টো
ঘোষণা করেছিলো – শুধুমাত্র অবশ্য প্রয়োজনীয় কিছুর
উপর সবার দৃষ্টি আকর্ষণ
করে, বালু দর্শকদের ভুলে
যেতে বলেছিল সব চিন্তা
আর কষ্ট।বালু
তাদের শুধুমাত্র অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিস
নিয়ে জীবন কাটাতে বলেছিল,
কারণ বালু সবাই প্রতিশ্রুতি
দিয়েছিল, প্রকৃতি মায়ের রেসিপিগুলোই জীবনের
অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে বের করে আনে। অবশ্যই
বালু কোনো দর্শন পড়েনি,
তার জীবনের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি
সেখানে আমরা যেমন দেখি,
আর যদি সে দর্শন
পড়তো তাহলে, অবশ্যই সে
তার দর্শনের সাথে মিল পেতো
ডায়োজেনিস অব সিনোপে’র
দর্শনের।
ডায়োজিনিস
ভালুক ছিলেন না যদিও
– তিনি ছিলেন কুকুর ( হ্যা
তাকে সে নামে ডাকা
হতো)। কুকুরের
গ্রীক শব্দ kuon, আর ডায়োজিনিস ও
তার সেই দর্শনের অনুসারী
দার্শনিকদের বলা হতো, সিনিক,
Cynics, নামটি এসেছে এই প্রাণিটির
সন্মানে, মনে রাখা দরকার
যে, গ্রীক বিশ্বে তেমন
পছন্দের কোনো প্রাণি ছিল
না কুকুররা ( প্রাচীন গ্রীক ভাষায় kynikos যার
অর্থ কুকুর সদৃশ)।
অবশ্য তাদের এই নামে
ডাকার আরেকটি কারণ মনে
করা হয় প্রথম সিনিক
দার্শনিক অ্যান্টিসথেনিস ( Antisthenes) এথেন্সে যে জিমনেশিয়ামে পড়াতেন,
তার নাম ছিল Cynosarges, যে
নামটি অর্থ place of the white dog; এছাড়াও নিশ্চিৎভাবে বলা
যায় যে, প্রথম সিনিকদের
অপমান সূচক অর্থে কুকুর
বলা হতো, কারণ তারা
তাদের মতে নির্লজ্জভাবেই সামাজিক
সব রীতিনীতি অস্বীকার করতেন, এবং রাস্তায়
বসবাস করতেন বলে।
ডায়োজেনিস,
বিশেষ করে তাকে কুকুর
হিসাবে সম্বোধন করা হয়েছে প্রায়শই। তিনি
অবশ্যই এমন খেতাব পছন্দ
করতেন, তিনি বলতেন, ‘অন্য
কুকুরা তাদের শত্রুদের কামড়ায়
আর আমি আমি আমার
বন্ধুদের কামড়াই, তবে তাদের সুরক্ষা
করতে’। যাইহোক
ডায়োজেনিস কারো প্রশংসার জন্য
কখনোই চিন্তিত ছিলেন না।
তিনি রাস্তার কুকুরের মত জীবন যাপন
করতেন, ভিক্ষা করে খাওয়া
সংগ্রহ করতেন এবং যদি
মনে করতেন কারো দরকার
আছে, আসলেই তাকে উদ্দেশ্যে
করে চিৎকার করতেন, হয়তো
উপদেশ দিতেন।
(Diogenes sitting in his tub. Painting by Jean-Léon Gérôme (1860) |
ডায়োজেনিস
ও অন্য সিনিক চিন্তাবিদরা
এমন একটি শিক্ষা দেবার
চেষ্টা করেছিলেন, যার সাথে আমরা
ভালুক বালুর সেই গানের
মিল পাবো। সিনিকরাও
ভাবতেন আমাদের উচিৎ শুধুমাত্র
অবশ্য প্রয়োজনীয় কিছু নিয়ে প্রকৃতির
নিয়ম মেনেই বাঁচা উচিৎ। তাদের
ক্ষেত্রে এটি ছিল, গাছ
থেকে কোনা ফল পেড়ে
না, বরং সামান্য পরিমান
ডাল খেয়ে বাঁচা, একটি
লাঠি বা চামড়ার থলে
ছাড়া যাদের আর কোনো
সম্পদ ছিল না, এবং
তারা থাকতেন কোনো না
কোনো ভাবে গড়ে নেয়া
আশ্রয়ে। যেমন
ডায়োজেনিস থাকতেন একটা বড়
মাটির কলসে। সবকিছু
থেকে বিচ্যুত জীবনাচরণের উপদেশ দিয়েছিলেন তারা,
কোনো চিন্তা আর সমস্যা
ছাড়া বাঁচা শেখাতে।
বেশ কিছু গ্রীক দর্শনের
চিন্তাধারার মত তাদেরও সর্ব্বোচ্চ
উদ্দেশ্য ছিল সব ধরনের
ataraxia আর apatheia: গ্রীকভাষায় Ataraxia, মানে সব উদ্বেগ
আর চিন্তা থেকে চলমান
অব্যাহত মুক্তি, একটি শক্তিশালী স্থিরতা,
আর অ্যাপেথিয়া, হচ্ছে মনের সেই
অবস্থা যাকে কোনো প্যাশন
বা তীব্রতম আবেগ বিচলিত করতে
পারেনা, তবে এটি নির্বিকার
কোনো পরিস্থিতি বলা যাবে না,
বরং মন-মেজাজে বিরাজমান
প্রশান্তি।
আর কোনো সমস্যা এড়ানোর
জন্য সিনিকদের বৈপ্লবিক উপায়গুলো অনেককেই ভাবতে বাধ্য করেছে
সিনিকদের নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে,
যেন তারা নিজেরাই মনে
হয় আক্রান্ত নানা অস্থিরতায়।
ধারণা করা হয়, প্লেটোই
ডায়োজিনিসকে বলেছিলেন, ‘পাগল হয়ে যাওয়া
এক সক্রেটিস’। তিনি
সেই সময়ের পরিচিত ব্যক্তিত্ব
ছিলেন, যদিও প্লেটোর সময়ে
না হয়ে থাকেন তবে
অবশ্যই অ্যারিস্টেটলের সময়। অ্যারিস্টোটল
তার কথা বলেছিলেন ও
এমনকি তাকে ডেকেছিলেন, ‘কুকুর’
নামে। কিন্তু
সিনিকদের অ্যারিস্টোটল পরবর্তী কোনো আন্দোলন হিসাবে
ভাবা যাবে না, বরং
বলা যেতে পারে সক্রেটিস
পরবর্তী একটি আন্দোলন।
এমন কি ডায়োজেনিস এর
আগেও সিনিক ছিলেন অ্যান্টিসথেনিস.
তিনি তার পেশা শুরু
করেছিলেন বিখ্যাত সোফিস্ট গর্গিয়াসের এর সাথে।
কিন্তু তিনি বক্তৃতা ছেড়ে,
নিজের লেখা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন,
সক্রেটিসের সাথে তার দেখা
হবার পর। জেনেফোন
এবং ডায়োজেনিস লেইয়ারশিয়াস তাকে একধরনের চরমপন্হী
সক্রেটিসবাদী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন
(ডায়োজেনিস লেইয়ারশিয়াস Lives of the
Philosophers নামে দার্শনিকদের জীবনী সংকলন লিখেছিলেন,
তিনি ডায়োজেনিস দ্য সিনিক নন)। অ্যান্টিসথেনিস
শুধুমাত্র সক্রেটিসপন্হী ছিলেন না, তিনি
ছিল আদি বা প্রোটো-সিনিক। তিনি
তার দারিদ্রতাকে সম্মানসূচক একটি চিহ্ন হিসাবে
ধারণ করতেন, দাবী করতেন
এটাই সত্যিকারের সম্পদ। তিনি
বলেছিলেন, ‘আনন্দ অনুভব করার
চেয়ে বরং ভালো পাগল
হয়ে যাওয়া’। সম্পদ
আর আনন্দের এই অস্বীকার সিনিসিজমের
প্রধান বৈশিষ্ট্য।
অ্যান্টিসথেনিসই
সমাজের সব ভণ্ডামী আর
অহংকারগুলোকে ঠাট্টা করার সিনিকবাদী
আচরণটির অগ্রদূত। এথেন্সেবাসীদের
গর্ব যে, তারা মাটি
থেকে জন্ম নেয়া মানুষের
বংশধর, এমন অংহারকে শ্লেষ
করে তিনি বলতেন, ‘পোকামাকড়
আর শামুকের জন্য এটা প্রযোজ্য’। তিনি
আরো প্রস্তাব করেছিলেন যে, ‘তাদের একটি
গণতান্ত্রিক সম্মেলন করা উচিৎ এবং
গাধারা আসলে ঘোড়া, এমন
একটি আইন পাশ করা
উচিৎ , আর যাই হোক,
তারা তো ভয় পায়
না, সেই সব বোকাদের
সেনানায়ক হিসাবে ঘোষণা করতে,
যারা খানিকটা বুদ্ধিমান’। ডায়োজেনিস
লেইয়ারশিয়াস এর মতে, তিনি
সেই পরিচিত সিনিক সজ্জায়
ঘুরে বেড়াতেন হাতে লাঠি আর
ছোট একটি ব্যাগ নিয়ে,
পাতলা কাপড় ছাড়া যাদের
পরণে কিছুই থাকতো না,
শীতের সময় যেটি তারা
আরেক ভাজ করে নিতেন,
এছাড়া দাড়ি গোফ তো
ছিল, যা কখনোই কাটতেন
না। কিন্তু
ডায়োজেনিস দ্য সিনিকের নানা
গল্প আর বিস্তারিত বিবরণ
কতটা পূর্বদৃষ্টিতে প্রয়োজ্য ছিল অ্যান্টিসথেনিসের ক্ষেত্রে
সেটা নিয়ে ভাবনার অবকাশ
আছে। কিন্তু
ডায়োজেনিস দ্য সিনিকের গল্পও
এসেছে একই জায়গা থেকে,
হতে পারে বিশাল একটি
অংশই হয়তো কাল্পনিক।
অ্যান্টিসথেনিসের
যতটুকুই ভূমিকা থাকুক না
এই দর্শনের আন্দোলনটি শুরু করার জন্য
বা সিনিক নামটি দেবার
জন্য, ডায়োজেনিস অব সিনোপে মূলত
সিনিসিজমের প্রতিভূ হয়ে আছে প্রাচীন
সেই স্বপ্নে। তাকে
নিয়ে নানা ঘটনা মাত্র
কয়েক হাজার শব্দে সীমাবদ্ধ
করা কারো পক্ষে সম্ভব
না। শুধুমাত্র
সেই ঘটনাগুলো বর্ণনা করা যেতে
পারে যে ঘটনাগুলোর দার্শনিক
অর্থ আলোচনা করতে পারি।
তার সম্বন্ধে সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনাটি
দিয়ে শুরু করতে পারি
আমরা – আলেক্সাণ্ডার দ্য গ্রেট বিখ্যাত
দার্শনিক ডায়োজেনিস সম্বন্ধে শুনেছিলেন, এবং তিনি তাকে
খুজে বের করেছিলেন দেখা
করার জন্য। এই
দার্শনিককে তিনি দেখেন একটি
মদ রাখার মাটির পাত্র,
যা তার ঘর, তার
সামনে বসে রোদ পোহাচ্ছেন। তার
সামনে এসে আলেক্সাণ্ডার বলেন,
আপনার জন্য আমি কি
করতে পারি? ডায়োজেনিস উত্তর
দিয়েছিলেন, ‘আমার সামনে থেকে
সরে যান, সূর্যের আলোটা
আমাকে উপভোগ করতে দেন’। আরেকটি
গল্প বললে, আলেক্সাণ্ডার নাকি
বলেছিলেন, ‘যদি তিনি আলেক্সাণ্ডার
না হতেন তাহলে ডায়োজেনিস
হতেন’। যৌথভাবে
এই দুটি কিংবদন্তীর কাহিনী
ডায়োজেনিস সম্বন্ধে আমাদের মনে একটা
স্পষ্ট ধারণা দেয়।
তিনি দরিদ্র এবং তার
কিছু ছিল না, কিন্তু
তারপরও তিনি পুরোপুরিভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাচীন
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাজারও তাকে দেবার
মত কিছু নেই, কারণ
প্রকৃতি – এই ক্ষেত্রে সূর্যের
আলো ছাড়া আর কিছুর
দরকার নেই তার।
তার প্রজ্ঞা মূলত সেটাই, এমন
কিছু কামনা না করা
যা কারোর দরকার নেই।
ডায়োজেনিস
এর প্রতি আলেক্সাণ্ডারের মুগ্ধতাও
একই সাথে অনেক কিছু
বলছে। এমনকি
বিত্তবান, শক্তিশালী মানুষরাও সিনিকদের প্রশংসা করতে পারে, কারণ
তারা একধরনের স্বাধীনতা উপভোগ করে, আত্মনিয়ন্ত্রন,
যা অর্জন করতে প্রচুর
পরিশ্রম করতে হয়, যদি
আদৌ সেটি কেউ করতে
পারে। একজন
বিখ্যাত স্টয়িক বা বৈরাগ্যবাদী
দার্শনিক মন্তব্য করেছিলেন, ‘সিনিসিজম হচ্ছে ভার্চু বা
সদগুণ অর্জন করার সংক্ষিপ্ততম
উপায়’। সে
কারণেই ডায়োজিনিস ও তার অনুসারীদের
আবেদন চিরন্তন। এমনকি
সেটি পৌছেছিল ফ্রিয়েডরিশ নিচাহ অবধি, যিনি
মন্তব্য করেছিলেন, ‘সিনিসিজম হচ্ছে একটি মাত্র
রুপ , যেখানে নিম্নমানের আত্মা
সততার নিকটে পৌছাতে পারে’।
(Diogenes by Jules Bastien-Lepage (1873) |
ডায়োজেনিস
জীবনী সম্বন্ধে খুব বেশী তথ্য
নেই। তবে
তিনি অবশ্যই সিনোপে জন্মগ্রহন
করেছিলেন, কৃষ্ণ সাগরের তীরের
একটি শহর। এবং
তার বাবা শহরের মুদ্রা
তৈরীর কারখানায় কাজ করতেন।
কোনো অদ্ভুত কারণে তার
বাবা মূদ্রার উপরের খোদাই কাজ
নষ্ট করতেন, আরেকটি গল্পে
এই দোষটি দেয়া হয়েছে
ডায়োজেনিসকে। সিনিক
আন্দোলনে এটি প্রতীকি রুপ
পেয়েছে – মুদ্রা নষ্ট করা। এর
মানে সামাজিক প্রথাকে আক্রমন করা।
এখানে একটি তথ্য দেয়া
যেতে পারে যায় যে
মুদ্রা বা কয়েন এর
গ্রীক শব্দ – nomisma, প্রথার জন্য ব্যবহৃত
শব্দ nomos এর মতই শুনতে
এবং প্রত্নতত্ত্ববিদরা আসলেই সিনোপে এমন
মূদ্রা খুজে পেয়েছেন যেখানে
মুদ্রার উপর খোদাই নষ্ট
করা, এদের সময় কাল
মধ্য চতুর্থ শতাব্দী।
যাই হোক না কেন,
ডায়োজেনিস তার জন্ম শহর
থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল, তিনি অবশ্য তার
জন্য কোনো অনুশোচনা করেননি। বলেছেন,
‘নির্বাসনই আমাকে দার্শনিক বানিয়েছে’। আরেকটি
বেশী কল্পনাপ্রবণ কাহিনী বলছে, দেশ
ছেড়ে পালাবার সময় তাকে দাস
হিসাবে নিলামে তোলা হয়েছিল,
তিনি বলেছিলেন, ‘তাকে এমন কারো
কাছে বিক্রি করতে, যার
মনিব দরকার’। তবে
ডায়োজেনিস এর ভৌগলিক অবস্থানগুলো
চিহ্নিত করা কঠিন, আলেক্সাণ্ডারের
সাথে তার দেখা করার
ঘটনাটি ঘটেছিল মনে করা
হয় করিন্থে। অন্যরা
এই ঘটনায় তাকে রেখেছেন
এথেন্সে; যেখানে তিনি সক্রেটিস
যেমন করে থাকতেন সেভাবে
থাকার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন, যেমন অ্যান্টিসথেনিসও করেছিলেন। যেমনটা
ভাবা সম্ভব, প্রাচীন তথ্যসূত্রগুলো
তাকে অ্যান্টিসথেনিসের এর ছাত্র হিসাবে
উল্লেখ করেছে, কারণ প্রতিটি
বিখ্যাত দার্শনিক আরেকজন বিখ্যাত দার্শনিকের
ছাত্র হবে এমনভাবে ভাবার
একটি প্রবণতা ছিল সেই সময়। তবে
তিনি যেখানে ছিলেন সেখানেই
তিনি অনন্য ছিলেন।
তিনি তার নিজের আইনে
চলেছেন। তিনি
যেভাবে পছন্দ করেন, সেভাবেই
আচরণ, কথা বলার অধিকার
প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি
বলেছেলিনে,‘বাক স্বাধীনতা, চিন্তার
স্বাধীনতা মানুষের সবচেয়ে সেরা সম্পদ’,
এবং তিনি এই স্বাধীনতা
ব্যবহার করেছিলেন গ্রীকদের বিরুদ্ধে, তাদের ভণ্ডামীগুলোকে তিরষ্কার
করতে। একটি
বিখ্যাত গল্পে আমরা তাকে
বাজারে লন্ঠন হাতে হাজির
হতে দেখি, তাকে জিজ্ঞাসা
করলে বলেন, তিনি আসলে
মানুষ খুজছেন। যেন
এই কথায় শহরের লোক
যথেষ্ঠ অপমানিত হয়নি, তিনি আরো
যোগ করেন, গ্রীসের কোথায়
তিনি সৎ আর ভালো
মানুষ খুঁজে পাবেন কেউ
কি বলতে পারবে?
কিন্তু
স্বদেশী গ্রীকরা তার এত ঘৃণার
কারণ কেন হয়েছিল? একটি
উত্তর হচ্ছে তারা আসলে
দরিদ্রতাকে গ্রহন করে নেয়নি,
সেই সাথে এর সঙ্গে
অদ্ভুতভাবে যুক্ত থাকা স্বাধীনতা
আর স্বনির্ভরতাকেও। যদি
নির্বাসন তাকে একজন দার্শনিক
বানিয়ে থাকে, এর কারণ
নির্বাসন তাকে দারিদ্রতার অমূল্য
উপহার দিয়েছে। ডায়োজেনিস
লেইয়ারশিয়াস থিওফ্রাসটাসকে উদ্ধৃত করে বলেন
যে, ‘সিনিকরা ইদুর যেমন কোনো
কিছু ছাড়াই তাদের জীবন
গড়ে নেয় তেমনি একটি
জীবন মেনে নেয়।’
এমন একটি গল্পে আমরা
তাকে দেখি লাঠি, থলে
আর খাবার জন্য একটি
পেয়ালা ছাড়া কিছু তার
নেই, আর যখন তিনি
একটি শিশুকে দুই হাত
দিয়ে পানি খেতে দেখেন,
তিনি তার পেয়ালাটাও ফেলে
দিয়েছিলেন।
(Diogenes Searching for an Honest Man, c.1642 – Jacob Jordaens) |
ডায়োজিনিস
তার এই কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি
অন্যদের উপরও আরোপ করেছিলেন,
নিজের উপরে যেমন করেছিলেন। একবার
তিনি এক ধনী ব্যক্তির
বাড়িতে নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন, তিনি সেই বিলাসবহুল
বাসার নানা জায়গা ঘুরে
মালিকের মুখের উপর থুতু
ছুড়ে মারেন। তিনি
হতভম্ব হয়ে যাওয়া সেই
মালিককে ব্যাখ্যা করেন যে, তার
বাসার সব কিছু এত
সুন্দর যে, তিনি কোথাও
থুতু ফেলতে পারছিলেন না। তাকে
নিয়ে আরো অনেক গল্প
আছে, যেমন তিনি টাকা
পয়সা সহ্য করতে পারতেন
না, তিনি বলতেন, ‘সোনার
রং হলুদ কারণ এটি
ভয় পেয়েছে এত মানুষের
লালসার কারণ সেটি’।
তিনি অর্থলালসাকে সব অশুভ কাজের
জননী হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন
( একই রকম বাক্য আমরা
পরে গসপেল বা যীশুর
জীবন কাহিনীতেও পাই) অ্যান্টিসথেনিসের মতই
তিনি তাকে তার দরিদ্রতায়
সমৃদ্ধ মনে করতেন।
সবকিছুই
তবে একটি প্রশ্নের জন্ম
দেয়, কেন অ্যান্টিসথেনিস আর
ডায়োজেনিস, তবে না খেতে
পেয়ে মারা যাননি কেন?
ধনী ব্যক্তিদের অপমান করা ঠিক
আছে, কন্তু খাদ্য ঘাটিতির
সম্ভাবনা তার চেয়ে অনেক
বেশী। তাহলে
তারা কিভাবে বেঁচে ছিলেন। ডায়োজেনিস
এর কাছে এর উত্তর
হচ্ছে, ভিক্ষা করে।
বিষয়টি খানিকটা ভণ্ডামী মনে হতে পারে,
যখন কিনা সিনিকরা তাদের
স্বনির্ভরতার দাবী করছে।
কিন্তু ডায়োজিনিস অন্য মানুষের সম্পদের
উপর তার দাবী সমর্থন
করে বলতেন – ‘সব কিছু দেবতাদের,
আর বিজ্ঞরা দেবতাদের বন্ধু, আর বন্ধুরা
সব কিছু ভাগাভাগি করে
নিজেদের মধ্যে, সুতারং সব
কিছুই বিজ্ঞদের’।
তার ভিক্ষুক জীব্ন অবশ্যই আরো
কিছু কাহিনীর জন্ম দিয়েছে।
যেমন এক ব্যক্তি যখন
তাকে ভিক্ষা দেবার জন্য
সময় নিচ্ছিল, তিনি বলেন, ‘আমি
ভিক্ষা চাইছ, আমার অন্তেষ্টিক্রিয়ার
জন্য খরচ চাইছি না’। মাঝে
মাঝে তাকে মূর্তির সামনে
দাড়িয়ে ভিক্ষা করতে দেখা
যেত, মানুষ প্রশ্ন করতে
বলতেন, তিনি অনুশীলন করছেন,
ভিক্ষা দিতে কেউ অস্বীকার
করলে, সেই প্রত্যাখান কিভাবে
সামাল দিতে হয়।
আর প্রাচীন গ্রীসে এই সব
মূর্তি মূলত ছিল ধর্মীয়
প্রকৃতির। যা
আমাদের সিনিকদের সমাজ বিরোধী আরেকটি
দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নিয়ে আসে। ধর্মের
চেয়ে আর কিছুই গ্রীক
সমাজের কাছের ছিল না। আর
সিনিকরা জেনোফেনেস আর প্লেটোর পথ
অনুসরণ করেছিলেন জনপ্রিয় ধর্মবিশ্বাসকে সমালোচনা করে। অ্যান্টিসথেনিসের
সথে একটি যাজকের সাথে
সাক্ষাৎ হয়েছিল, যিনি দাবী করেছিলেন
যে তার মত ধর্মবিশ্বাসীরা
মৃত্যুর পর বিশেষভাবে পুরস্কৃত
হবেন – উত্তরে তিক্তভাবে তিনি
জানতে চাইছিলেন, ‘বেশ তাহলে তুমি
এখনই মরছো না কেন’?
ডায়োজিনিস একবার একবার এক
চোরকে মারধোর করতে দেখেছিলেন
মন্দিরের প্রহরীদের, বলেছিলেন, ‘বড় চোররা ছোট
চোরদের ধরছে’। কিংবা
একবার এক মন্দিরে সমুদ্রে
ঝড়ে বেঁচে যাওয়া নাবিকদের
ধন্যবাদ জ্ঞাপনের উপহার দেখে তিনি
বলেন, ‘যারা বাঁচে নি
তারা যদি নিবেদন করতো,
পরিমান আরো বেশী হতো’। কিন্তু
তার মানে আবশ্যিকভাবে সিনিকরা
নাস্তিক ছিলেন না।
তার বক্তব্যে বোঝা যায় যে
তিনি নাস্তিক ছিলেন না।
সিনিকরা স্বর্গীয় সত্ত্বার ধারণাটিকে পরিত্যাগ করেননি ঠিকই তবে
এর সম্বন্ধে মিথ্যা ধারণাগুলো তারা
প্রত্যাখান করেছিলেন। ঠিক
যেভাবে সম্পদ আর স্বাধীনতার
ভ্রান্ত ধারণা তারা বাতিল
করেছিলেন, কিন্তু সত্যিকারের সম্পদ
আর সত্যিকারের স্বাধীনতা তারা কখনো পরিত্যাগ
করেনি।
এখন অবধি আমরা সিনিকদের
দেখেছি তারা বেশ বেপ্লবিক
উপায়ে তাদের ধারণাগুলো প্রচার
করতেন, কিন্তু তাদের ধারণাগুলো
আসলেই কি বৈপ্লবিক ছিল?
বহু দার্শনিকই অবাক হবেন না
শুনে যে, সম্পদ হচ্ছে
মূল্যহীন, এমনকি অ্যারিস্টোটল সম্পদকে
জায়গা দিয়েছিলেন ভালো জীবনে, শুধুমাত্র
সদগুণের উপকরণ হিসাবে।
আর সক্রেটিসতো এমন জীবনই কাটিয়েছিলেন। এছাড়া
বহু দার্শনিকরা নিজেদের সাধারণ প্রথাগত ধর্মীয়
আচার থেকে দূরে সরিয়ে
রেখেছিলেন। সিনিকটা
বেশী বৈপ্লবিক যদিও আনন্দের ব্যপারে। যদিও
প্লেটো কিংবা অ্যারিস্টোটল ভোগবাদী
ছিলেন না, কিন্তু পুরোপুরি
তারা সেটি বাদও দেননি। কারণ
যে দর্শন দাবী করে
আমরা সব আনন্দ বিসর্জন
দেবো, তা অনুসরণ করা
বেশ কঠিন। সিনিকরা
এর বিরোধী ছিলেন, যেমন
ডায়োজেনিস নিজেই বলেছিলেন, ‘আনন্দ
থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখার
কাজটাই তো আনন্দের’।
খুব প্রচলিত একটি সিনিক প্যারাডক্স
এটি আপনি হয়তো ভাববেন,
কিন্তু তিনি সেটি অনুসরণ
করতেন। সাধারণ
খাবারের মধ্যে একবার মিষ্টি
কিছু খুজে পেয়ে তিনি
সেটি ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন,
বলেছিলেন, ‘এই অত্যাচারীর কাছ
থেকে দূরে থাকো’।
আর অ্যান্টিসথেনিসকে আমরা দেখেছি বলতে
যে পাগলামীও আনন্দের চেয়ে ভালো।
আনন্দের
বদলে সিনিকরা কষ্টের জীবনকে সঠিক
মনে করতেন, গ্রীকরা যাকে
বলে ponos – তবে এর মানে
কিন্তু শারীরিক পরিশ্রমের কাজ নয়।
ডায়োজিনিস তো ভিক্ষা করে
বাঁচতেন, কোনো কাজ করতেন
না। এর
মানে হচ্ছে ইচ্ছা করেই
কঠোর জীবন বেছে নেয়া। যেমন
একটি মাত্র চাদর আর
খালি পায়ে হাটা এমনকি
শীতের সময়। তাহলে
কি সিনিকরা আমাদের বলছেন, আনন্দ
শুধু ভালো থেকে আলাদাই
নয়, আসলেই খারাপ কিছু?
এটি ভোগবাদ বিরোধী দার্শনিকদের
চেয়েও বেশী দূর হয়ে
যাবে, যারা মনে করতেন
আনন্দ নিজেই ভালো বা
মন্দ কিছু না, তাহলে
আমরা তাদের সাথে মিল
পাবো এমনকি প্লেটোর, যিনি
ভালো একটি জীবন থেকে
আনন্দকে বাদ দিয়েছিলেন।
সিনিকদের
নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে হলে তারা
কি বর্জন করছে সেটি
দেখলে হবে না।
তারা সামাজিক নিয়ম কানুনকে উপেক্ষা
করেছেন, তারা কোনো আনন্দ
খোজেনি, তারা এমনকি নিজেদের
পরিচ্ছন্নতার ব্যপারে কোনো মাথা ঘামাতেন
না। তবে
এই সব কিছুইে একটি
ইতিবাচক ধারণার খাতিরে কোন
জিনিসটি আসলে জীবনে গুরুত্বপূর্ণ,
যা একটি মাত্র শব্দে
প্রকাশ করা যাবে – প্রকৃতি। তারা
মনে করতেন সমাজ হচ্ছে
প্রকৃতি বিরুদ্ধ, এবং তারা এমনভাবে
আচরণ করতো সেই সামাজিক
প্রথাকে অপমান যেন করা
যায়। তাদের
কাছে সদগুণ হচ্ছে প্রাকৃতিক
কোনো অস্তিত্ব যেমন যে, জীবন
কোনো কুকুরদের। সম্পদ
এবং বাড়তি কাপড় এই
প্রাকৃতিক জীবনের পরিপন্হী।
(Diogenes statue in Sinope, Turkey) |
ডায়োজেনিস
একবার তার নিজের ভিতরের
কুকুরটাকে পরীক্ষা করে দেখেছিলেন কাচা
মাংশ খেয়ে দেখে।
এটাই ব্যাখ্যা করে সিনিকদের জীবনাচরণের
অদ্ভুত কিছু বৈশিষ্ট্য।
যদিও তারা আনন্দকে বর্জন
করেছেন কিন্তু তারা প্রাকৃতিক
তাড়নাকে পুরণ করতেন যখন
ও যেখানে তারা সেটি
করার জন্য ভাবতেন।
যেমন একবার ডায়োজেনিসকে প্রশ্ন
করা হয়েছিল কেন, তিনি
বাজারের মধ্যে বসে খাচ্ছেন,
তিনি বলেছিলেন, কারণ আমার এখানেই
ক্ষুধা পেয়েছে। কুখ্যাতভাবে
তিনি নিজে বাজারের মধ্যে
হস্তমৈথুন করেছেন, কিন্তু যখনই তাকে
জিজ্ঞাসা করা হয়েছে এর
কারণ, তিনি তার অমর
একটি বাণী উপহার দিয়েছেন
– ‘হায় আমি যদি শুধু
আমারে পেটের উপর হাত
বুলিয়ে ক্ষুধা দূর করতে
পারতা ‘। অথবা
আলেক্সাণ্ডারের সাথে তার সেই
বিখ্যাত সাক্ষাৎটার কথা ভাবুন।
ডায়োজিনিস কিন্তু সেই মাটির
পাত্রের মাথা ঠুকে নিজের
জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছিলেন
না, তিনি রোদ পোহাচ্ছিলেন। মূলত
এসব প্রমাণ করে সিনিকরা
এভাবে আনন্দ বিরোধী ছিলেন
না, তারা শুধু সেই
আনন্দ বিরোধী ছিলেন যা
প্রকৃতি দেয় না।
যদি কোনো কষ্ট ছাড়াই
আনন্দ পাওয়া যায়, উপভোগ
করুন, যেমন কুকুররা করে,কিন্তু আপনার সুখকে
আনন্দের উপর নির্ভরশীল করে
ফেলবেন না যা কঠিন
অর্জন করা।
প্রকৃতি
যা দিতে পারে না
এমন কিছু প্রত্যাখ্যান করার
মাধ্যমে সিনিকরা নিজেদের কার্যত অনাক্রম্য করে
তোলেন। অথবা
সেই আদর্শের কাছ মানুষেন পক্ষে
যতটুকু যাওয়া সম্ভব।
একারণে ডায়োজেনিস বলতেন, ‘দর্শন আপনাকে ভাগ্যের
যে কোনো উত্থান পতনের
জন্য প্রস্তুত করবে, এটি আপনাকে
সমৃদ্ধ করবে কোনো টাকা
না থাকা সত্ত্বেও’।
সমসাময়িক অনেকেই, সন্দেহ নেই সিনিকদের
কাহিনী পড়তে ও সংগ্রহ
করতেন, কারণ তারা আমাদের
প্ররোচিত করে। ডায়োজেনিস
এর পরের বিখ্যাত সিনিক
ছিলেন ক্রেটিস, যদিও সিনিকদের সেরা
উক্তিগুলো সব অ্যান্টিসথেনিস আর
ডায়োজেনিসের, কিন্তু ক্রেটিস সিনিকদের
একটি মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন
– Philosophy is a quart of beans and to care for nothing । এই
আদর্শের অনুসন্ধানে তিনি সব সম্পদ
বিলিয়ে চুড়ান্ত দরিদ্রের জীবন বেছে নিয়েছিলেন
ডায়োজেনিসে মত। যৌনতার
ব্যপারে তিনি বলেছিলেন, Hunger puts an end to lust; if not,
time does; but if you can’t use these, use a rope, কিন্তু তার
একই কঠোরতা বাধা নেই
ভালোবাসা খুজে পাবার জন্য। প্রাচীন
সাহিত্যের বিষয় হওয়া তার
প্রেম কাহিনীর নায়িকা ছিলেন হিপপারকিয়া,
যিনি তাকে বিয়ে করে
যোগ দিয়েছিলেন তার সিনিক জীবনে। এমনকি
তার ভাইও তাদের সঙ্গী
হয়েছিল। আমরা
হিপপারকিয়ার দর্শন সম্বন্ধে এখন
তেমন কিছু জানিনা, কারণ
তারা কেউ কিছু লিখে
যাননি। যদি
একটি রিপোর্ট আছে সেখানে তিনি
নারী হিসাবে রমনীয় নানা
কর্মকাণ্ডে জীবন কাটানোর চেয়ে
দার্শনিক হওয়া শ্রেয়তর মনে
করেছিলেন। কিছু
গুজব এসেছে তার প্রতি
লেখা ক্রেটিস এর কিছু চিঠি
থেকে, সেখানে গৃহস্হালী নানা
বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন। এমনকি
তাকে যৌনবস্তু হিসাবে রুপান্তর করার
চেষ্টাও করা হয়েছে যারা
দাবী করতো ক্রেটিস আর
হিপপারকিয়া প্রকাশ্যেই সঙ্গম করতেন ডায়োজেনিসে
এর আত্মমৈথুনের পথ অনুসরণ করে।
কোনো কারণ নেই গ্রীকদের
জন্য সিনিকরা বড় ধাক্কা ছিল। পরের
সিনিকরাও কলম ধরেছিলেন তাদের
বার্তাকে সবার মথ্যে ছড়িয়ে
দেবার জন্য। একটি
বই In Praise of Lentil
Soup ( ডালের স্যুপের প্রশংসায়) ক্রেটিস এর লেখা বলে
মনে করা হয়।
এটাই সিনিকদের প্রিয় সাধারণ খাদ্য
ছিল। সিনিক
মতাদর্শ রোম সমাজেও প্রবেশ
করেছিল, তবে অবশ্যই তাদের
সমালোচক ছিল অনেক বেশী। রোমের
দার্শনিকদের মধ্যে যিনি সিনিক
হিসাবে নিজেকে পরিচিত দিয়েছিলেন,
তিনি ডেমেট্রিয়াস, তিনি একবার ভয়ঙ্কর
সম্রাট ক্যালিগুলার দেয়া উপহার প্রত্যাখ্যান
করেছিলেন, পরে যখন ক্যালিগুলা
সবচেয়ে সুন্দর একটি গোছলখানা
বানান, তিনি মন্তব্য করেছিলেন
ওখানে যারা গোছল করতে
যায় তারা নিজেদের নোংরা
করে।
0 মন্তব্যসমূহ