সাভারকার ও গান্ধী হত্যা।। শ্রী চার্বাক

মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শ ও রাজনৈতিক ক্রিয়াপ্রনালী ও কৌশল কে কেন্দ্র করে সাভারকার ও তাঁর অনুগামী গোলওয়ালকার বিভিন্ন সময়ে তাঁদের লেখায় বিষদ্গার করেছেন। এই বিষোধগারের চরম পরীনতি ঘটল গান্ধী হত্যার মাধ্যমে। গান্ধীহত্যাকারী নাথুরাম গডসের আর এস এস-এর সঙ্গে  যোগসুত্রের সম্পর্কে বি জে পির নেতা আদবানির বক্তব্য কিঃ- ‘নাথুরাম গডসে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের কড়া সমালোচক ছিলেন। আর-এস – এস এর বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ ছিল যে এরা হিন্দুদের নিবীর্য করে দিয়েছে। গডসের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কই ছিল না। কংগ্রেস যখনই আর কোনো কিছুই পায় না তখন আমাদের বিরুদ্ধে নতুন করে এই অভিযোগ তোলে। এটা ওদের অভ্যস’। (ধনঞ্জয় কীর, বীর সাভারকার, পৃ ৫২৭)। এর বিরোধিতা করে নাথুরাম গডসের ভাই গোপাল গডসে একটি বিধ্বংসী সাক্ষাৎকারে এই অস্বীকৃতিকে মিথ্যা প্রমানিত করলেন।
‘ প্রঃ- আপনি কি আর এস এস –এর একটা অংশ ছিলেন?  
উঃ- আমরা সব ভাইরাই আর এস এস –এ ছিলাম। নাথুরাম, দত্তাত্রেয়, আমি আর গোবিন্দ। নিজেদের বাড়িতে বেড়ে ওঠার চেয়ে বরং আমরা আর এস এস –এর মধ্যেই বেড়ে উঠেছি বলতে পারেন। আমাদের কাছে এটা একটা পরিবারের মতো ছিল।
প্রঃ- নাথুরাম আর এস এস – এ ছিলেন? তিনি ওদের ছেড়ে যাননি?
উঃ – নাথুরাম আর এস এস –এ একজন বৌদ্ধিক কারিয়াভাহ (বৌদ্ধিক কর্মী) হয়েছিলেন। তাঁর বয়ানে তিনি বলেছেন যে তিনি আর এস এস ছেড়ে চলে এসেছিলেন। একথা তিনি বলেছিলেন কেননা গান্ধীহত্যার পর গোলওয়ালকার এবং আর এস এস খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়েছিল।  কিন্ত  তিনি আর এস এস ছাড়েননি।
প্রঃ-  সম্প্রতি আদবানী বলেছেন যে নাথুরামের সঙ্গে আর এস এস –এর কোনো সম্পর্ক ছিল না
উঃ – আমি এ কথার বিরোধিতা করছি। এরকম কথা বলা কাপুরুষতা। আপনি বলতে পারেন, আর এস এস তো এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয়নি যে, ‘যাও গান্ধীকে হত্যা কর’।  কিন্ত  আপনি তাঁকে (নাথুরাম) অস্বীকার করতে পারেন না। হিন্দু মহাসভা কখনো তাঁকে অস্বীকার করেনি। ১৯৪৪ সালে নাথুরাম যখন আর এস এস – এ বৌদ্ধিক কারিয়াভাহ হয়েছেন তখনি তিনি হিন্দু মহাসভার কাজ করতে শুরু করেন’। (সুত্রঃ - Robert Paine, The Life and Death of Mahatma Gandhi, page 209)  হিন্দুত্বের স্বার্থে ধর্মযুদ্ধের একটা অংশ হিসেবে সাভারকারের অনুগামীরা ৬ঐ ডিসেম্বর, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধূলিসাৎ করে দেয়। ব্যাপকঅর্থে গান্ধীজির হত্যার সঙ্গে এই অপরাধকে তুলনা করা যায়। উভয় ক্ষেত্রেই সঙ্ঘ পরিবারের কাছ থেকে দুঃখপ্রকাশ বা নিন্দাসূচক একটা শব্দও উচ্চারিত হয় নি। হত্যার কিছুদিন পরে ১০ ঐ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ সালে নেহেরু জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী মাহেরচাঁদ মহাজনকে লেখেন ‘আমি জানতে পারলাম যে সাভারকারের গ্রেপ্তারে জম্মুতে একদিনের হরতাল হয়েছে। জেনে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। কেননা গান্ধীজির হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে এটি তাঁর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে’। (সুত্রঃ- Selected Works of Jawaharlal Nehru, Jawarlal Nehru Memorial Trust, Oxford University Press, second series, Edited by S Gopal, 5th Volume, Page 52)সাভারকারের ভক্ত শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি যখন সাভারকার এবং হিন্দু মহাসভার পক্ষে সওয়াল করার চেষ্টা করেন, তখন বল্লভভাই প্যাটেল, ৬ঐ মে, ১৯৪৮ সালে, তাঁকে মনে করিয়ে দেন, সংগঠনটি যদিও সেভাবে এক্ষেত্রে যুক্ত নয়, ‘ কিন্ত  একই সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না যে, এই দুঃখজনক ঘটনায় মহাসভার যথেষ্ট সংখ্যক সদস্য উল্লসিত হয়ে উঠেছিল এবং মিষ্টান্ন বিতরণ করেছিল। দেশের সমস্ত প্রান্ত থেকে এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন এসে পৌঁছেছে’। (সুত্রঃ – Sardar Patel’s Correspondences 1945-50, Ed. Durga Das, Navjivan Publishing House, Ahmedabad, 1973, 6th Volume, Page 66)

গোলওয়ালকার যতই আর এস এস এর অরাজনৈতিক চরিত্রের পক্ষে সওয়াল করতেন  না কেন, আর এস এস – এর সাথে মহাসভার সখ্যতা ও সংযোগের এক জাজ্বল্যকর  প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সঙ্ঘ পরিবার কখনই তাঁর অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতের কথা মানুষকে ভুলিয়ে দিতে পারবেন না। হিংসা কিংবা নিপীড়নের সপক্ষে সাভারকারের যে ওকালতি তাঁর থেকে তাঁর হিন্দুত্বকে আলাদা করা যায় না। গডসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক এমনই এক ভ্রাতৃহত্যার চিহ্ন বিদ্যমান, যেটি সাভারকারের বিকৃত ও মানবতাবিরোধী মতবাদ এককভাবে বয়ে বেড়াতে হবে। যদি সাভারকারের দেহরক্ষী আর ব্যক্তিগত সচিব তাঁর বিরুদ্ধে কোর্টে সাক্ষী দিতেন, তাহলে গান্ধীহত্যার ষড়যন্ত্রে সাভারকারকে দোষী, অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা যেতো।



১৯৪৯ সালে ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কলকাতায় হিন্দু মহাসভার প্রকাশ্য সম্মেলনে। মাঝে কালো টুপি পরিহিত সাভারকার 

(সুত্রঃ - http://www.frontline.in/static/html/fl2207/stories/20050408001903700.htm)যদিও ঐতিহাসিক তথ্যের আর প্রামানিক দলীলের  আলোকে সাভারকারকে হয়তো জনসমক্ষে দোষী এবং ঘৃণ্য প্রতিপন্ন করা যাবে না কিন্ত সাভারকারের সম্পর্কে সমস্ত সরকারি দলীলে এবং অন্যান্য বইতে সাভারকারের তঞ্চকতাবিদ্বেষ আর হত্যার জন্য প্ররোচনার প্রবণতা প্রমাণিত হয়। সাভারকার মারা যান ১৯৬৬ সালে। তাঁর মৃতুর পরের বছরেগান্ধী হত্যাকারী নাথুরাম গডসের দাদা গোপাল গডসে তাঁর বইতে Gandhi Hatya Ani Mee’  (‘গান্ধী হত্যা আর আমি)।  পরিস্কার ভাষায় সাভারকারের সাথে নাথুরামের সখ্যতা ও সংযোগের সত্যতা  স্বীকার করে নেন।  তাঁরা গান্ধীহত্যার অপরাধে বিচারচলাকালীন তাঁদের সংযোগের কথা গোপন করতে আপ্রাণ চেষ্ঠা করেন।  
গান্ধীহত্যার মামলা চলাকালীন সাভারকারের আচরণ বেশ সংগতিপূর্ণ মনে হলেও ষড়যন্ত্রের মামলায় যে অংশটুকুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে, মামলার সেই নথিপত্রগুলো বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। গডসে হত্যার সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, পথপ্রদর্শককে রক্ষা করার জন্যই। কোনোরকম পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের কথা সে অস্বীকার করেছিলেন। কাজেই ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব এবং ষড়যন্ত্রকারীদের সনাক্তকরণ এই একটিমাত্র বিশয়ই অবশিষ্ট ছিল। এই মামলায় অভিযুক্তরা হলো নাথুরাম গডসে (বয়স ৩৭), নারায়ণ আপ্তে (বয়স ৩৪),পুনার ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-এর সম্পদক এবং প্রকাশক , বিষ্ণু কার্কারে (বয়স ৩৮), যে আমেদাবাদের একটা হোটেল চালাত, মদনলাল পাহ (২০), শঙ্কর কিস্তোয়া (২০), গোপাল গডসে (২৭), ভি ডি সাভারকার (৬৫) এবং দত্তাত্রেয় পার্চুর (৪৭), গোয়ালিয়রের একজন চিকিৎসক। রাজসাক্ষী দিগম্বর ব্যাজ (৩৯) যাকে ক্ষমা করা হয়েছিল, তাঁর বাড়ির ভৃত্য শঙ্কর কিস্তোয়া। কিস্তোয়া ছাড়া আর সকলেই মহাসভাপন্থী, সাভাকারের অন্ধ সমর্থক।



(২৭শে মে, ১৯৪৮, গান্ধীহত্যার আদালতের কার্য্যকালের বিচারবিভাগীয় তদন্তের প্রথম দিনে অভিযুক্ত প্রথম সারির বাম দিক থেকে ডান দিক,  নাথুরাম বিনায়ক গডসে, নারায়াণ দত্তাত্রয় আপ্তে আর বিষ্ণু রামকৃষ্ণ কারকারে, পিছনে দিকে  বাম দিক থেকে দিগম্বর রামচন্দ্র ব্যাজ, শঙ্কর, বিনায়ক দামোদর সাভারকার আর গোপাল বিনায়ক গডসে)।


 নাথুরাম গডসে
 ব্যাজের সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সেশন জজ সাভাকারকে নির্দোষ বলে রায় দিলেন  কিন্ত  ১৯৭০ সালে সুপ্রিম কোর্টেরপ্রাক্তন বিচারপতি জে এল কাপুর গান্ধীহত্যা রিপোর্টের পূনর্মূল্যায়ন করতে গিয়ে গান্ধীহত্যায় সাভারকার ও তাঁর অনুচরেদের ষড়যন্ত্রের  গন্ধ পেয়েছেন সাভারকাররে জীবিতকালেগান্ধীহত্যা  মামলায় সাভারকারের দেহরক্ষী আপ্পা রামচন্দ্র কাসার এবং তাঁর সচিব গজানন বিষ্ণু দামলে সাভারকারের বিরুদ্ধে কোর্টে সাক্ষ্যপ্রমাণ দেননি। সাভারকারের মৃত্যুর পর  তাঁরা কিছু তথ্যপ্রমান বিচারপতি কাপুরের কাছে জমা করেন। সাভারকারের মৃত্যুর মাত্র এক-দু’বছর পরে তাঁর সহকারীরা কাপুর কমিশনের সামনে মুখ খুলেছিল এবং ব্যাজ-এর সাক্ষ্যের সপক্ষে প্রচুর সমর্থন উপস্থাপিত করেছিলো। কমিশনের প্রতিবেদনে লেখা হয়, ‘ ভি ডি সাভারকারের দেহরক্ষী আপ্পা রামচন্দ্র কাসারের যে বক্তব্য ৪ঠা মার্চ, ১৯৪৮ বোম্বে পুলিশ নথিবদ্ধ করেছিল তাতে দেখা যায় যে এমনকি ১৯৪৬ সালেও আপ্তে এবং গডসে প্রায়শই সাভারকারের কাছে যেত এবং কার্কারেও মাঝে মাঝে তাঁর সঙ্গে দেখা করত... ১৯৪৭ সালে আগস্ট মাসে একটি সভার কাজে সাভারকার যখন পুনা যান তখন গডসে আর আপ্তে সারাক্ষণ সাভারকারের সঙ্গে থাকতো এবং তাঁর সঙ্গে হিন্দু মহাসভার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করতো। তিনি তাঁদের বলতেন যে, তিনি বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছেন। এবার তাঁদের সব কাজকর্ম চালাতে হবে। ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসের শুরুতে ৫ কি ৬ তারিখে দিল্লিতে সর্বভারতীয় হিন্দু কনভেনশন ছিল এবং সাভারকার, গডসে আর আপ্তে একত্রে বিমানে সেখানে গিয়েছিলেন। কনভেনশনে কংগ্রেসের নীতির তীব্র সমালোচনা হয়। ১১ ঐ আগস্ট সাভারকার, গডসে এবং আপ্তে সকলে একসঙ্গে বিমানে বোম্বে ফিরে আসে...১৩ কি ১৪ঐ জানুয়ারি বা ঐরকম সময় কার্কারে একজন পাঞ্জাবী যুবককে সঙ্গে নিয়ে সাভারকারের কাছে আসে এবং প্রায় পনেরো-কুড়ি মিনিট ধরে সাভারকারের সঙ্গে তাঁদের কথাবার্তা চলে। ১৫ কি ১৬ ঐ তারিখে বা ঐরকম সময় আপ্তে আর গডসে রাত সাড়ে নটায় সাভারকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এক সপ্তাহ বা ঐরকম কিছু দিন পরে, জানুয়ারি ২৩ কি ২৪ তারিখ নাগাদ আপ্তে আর গডসে আবার রাত দশটা কি সাড়ে দশটার সময় সাভারকারের সঙ্গে প্রায় আধঘণ্টা যাবৎ কথা বলতে আসে......সাভারকারের সচিব সজানন বিষ্ণু দামলে-কেও বোম্বে পুলিশ ৪ ঠা মার্চ ১৯৪৮ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। সে বলেছিল যে, ‘অগ্রণী’- র এন ডি আপ্তেকে সে গত চার বছর ধরে চেনে। আহমেদনগরে আপ্তে একটি রাইফেল ক্লাব শুরু করেছিলো এবং যুদ্ধের সময় অবৈতনিক নিয়োগ অফিসার হয়েছিল। আপ্তে সাভারকারের বাড়িতে প্রায়ই আসতো এবং কখনো কখনো তাঁর সঙ্গে গডসেও আসতো। অগ্রণীর জন্য যখন জামিনের দরকার পড়েছিল তখন আপ্তে আর গডসেকে সাভারকার  কাগজের জন্য ১৫০০০ টাকা ধার দিয়েছিলেন। কাগজটি বন্ধ হয়ে যায় আর হিন্দু রাষ্ট্র নামে একটি কাগজ বেরোনো শুরু হয়। তাঁর পরিচালকবর্গের একজন ছিলেন সাভারকার আর আপ্তে ও গডসে ছিল এর কার্যনিবাহী দালাল। ভি আর কার্কারেকে সে প্রায় তিনবছর ধরে চিনত। সে ছিল আহমেদনগরে হিন্দু মহাসভার কর্মী এবং কখনো সখনো সে সাভারকারের সঙ্গে দেখা করতে আসতো। গত তিন বছর ধরে ব্যাজও ছিল তাঁর পরিচিত। সে-ও সাভারকারের সঙ্গে দেখা করতে আসতো।
১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে কার্কারে এবং একজন পাঞ্জাবী উদ্বাস্তু বালক সাভারকারের সঙ্গে দেখা করতে আসে এবং তাঁরা দুজনেই আধঘন্টা কি ৪৫ মিনিট ধরে সাভারকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। এদের কেউ-ই আর সাভারকারের সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। আপ্তে আর গডসে ১৯৪৮-এর জানুয়ারির প্রায় মাঝামাঝি একটু বেশী রাতে সাভারকারের সঙ্গে দেখা করতে আসে। দুজন সাক্ষীর বক্তব্যই দেখা যায় যে, আপ্তে ও গডসে উভয়েই সাভারকারের নিয়মিত দর্শনপ্রার্থীদের একজন ছিল এবং সম্মেলনে আর প্রতিটি সভায় তাঁদের সাভারকারের সঙ্গে দেখা যেত...সাক্ষ্যে এটাও দেখা যাচ্ছে যে, কার্কারেও সাভারকারের বেশ পরিচিত ছিল এবং  নিয়মিত অভ্যাগতদের একজন ছিল। ব্যাজও সাভারকারের কাছে আসতো। ডঃ পানচারও আসতেন তাঁর কাছে। এই সমস্ত ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে, পরবর্তীকালে মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সকলেই কোনো এক সময়ে বা অন্য সময়ে সাভারকার সদনের এসে জড়ো হচ্ছিল। এবং কখনো কখনো সাভারকারের সঙ্গে তাঁদের  দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা হচ্ছিল। এটা তাতপর্যের বিষয় যে, কারেকারে আর মদনলাল দিল্লী যাবার ঠিক আগে সাভারকারের সঙ্গে দেখা করেছিল এবং আপ্তে আর গডসে দুজনেই বোম ছোঁড়ার ঠিক আগে ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিল। প্রতিবারই তাঁদের বেশ দীর্ঘ কথাবার্তা হয়েছিল।
এটা বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, ১৯৪৬, ১৯৪৭ এবং ১৯৪৮ – এর বছরগুলোতে গডসে আর আপ্তে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জনসভায় তাঁর সঙ্গে থাকতো। আদালতে এগুলো যদি প্রমাণ করা যেত, তাহলে সাভারকার দোষী সাব্যস্ত হয়ে যেতেন। ১৪ঐ এবং ১৭ঐ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে গডসে এবং আপ্তের সাভারকারের সঙ্গে দেখা করার প্রসঙ্গেকে ঘিরে কোনো অস্পষ্টতা ছিল না। সাভারকারের দেহরক্ষী এ আর কাসার, কাপুর কমিশনকে বলেছিল যে বোমা বিস্ফারণের ঘটনার পর দিল্লি থেকে ফিরেই জানুয়ারীর ২৩ কি ২৪ তারিখে তাঁরা সাভারকারের সঙ্গে দেখা করেছিল। সাভারকারের সচিব জি ভি দামলে সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, গডসে আর আপ্তে সাভারকারের সঙ্গে দেখা করেছিল ‘জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়ে এবং তার(সাভারকার) সঙ্গে তাঁরা তাঁর বাগানে বসেছিল’। (সুত্রঃ – কাপুর কমিশন প্রতিবেদন, অংশ II, পৃষ্টা ৩০০, অনুচ্ছেদ ২৫.৯২ এবং ২৫.৯৩)। 

সাভারকার সদন মুম্বাইয়ে, যেখানে সাভারকার তাঁর অনুগামীদের সাথে মিটিং করতেন।

বিচারপতি কাপুরের রায়ের সমস্ত অংশটিও পরিস্কার। নাগরওয়ালার কাছ থেকে পাওয়া সমস্ত তথ্য তালিকাবদ্ধ করে তিনি সিদ্ধান্ত করেন, ‘এই সমস্ত তথ্য একত্রিত করলে সাভারকার এবং তাঁর দলবলই যে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল এছাড়া অন্য কোনো তত্ত্ব্য নস্যাৎ হয়ে যায়’। নাগরওয়ালা অকৃতকার্য হয়েছিলেন কেননা, গান্ধিজীকে অপহরণ করা হবে এই ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ধারণার পিছনে ছুটেছিলেন তিনি। (সুত্রঃ – কাপুর কমিশন প্রতিবেদন, অংশ II, পৃষ্টা ৩০৩, অনুচ্ছেদ ২৫ ১০৬)।  নাগরওয়ালা তাঁর অপরাধ সম্পর্কিত ১ নং প্রতিবেদনে ব্যক্ত করেছেন যে, ‘এই ষড়যন্ত্রের পেছনে সাভারকার ছিলেন এবং তিনি অসুস্থতার ভান করেছিলেন’। (সুত্রঃ – কাপুর কমিশন প্রতিবেদন, অংশ II, পৃষ্টা ৩০৫, অনুচ্ছেদ ২৫ ১১৩) হত্যার ঠিক পরের দিন নাগরওয়ালার ৩১ শে জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখের চিঠিতে উল্লেখিত হয়েছে যে, কাসার এবং দামলে তাঁকে যা বলেছে তাঁর সারবস্তু হলো, সাভারকার, গডসে এবং আপ্তে ‘তাঁদের দিল্লি যাবার প্রাক্কালে’ চল্লিশ মিনিটের মতো কথাবার্তা বলেছিল। ‘কোনো বিধিনিষেধ ছাড়াই এই দুজনের সাভারকারের বাড়িতে যাতায়াত ছিল’। (সুত্রঃ – কাপুর কমিশন প্রতিবেদন, অংশ I, পৃষ্টা ৩৬, অনুচ্ছেদ ৩ ১৮)।সংক্ষেপে বলা যায়, ১৪ঐ থেকে ১৭ঐ জানুয়ারির সাক্ষাৎকারের পরে গডসে এবং আপ্তে ব্যাজ-এর অনুপস্থিতিতে আবার সাভারকারের সঙ্গে দেখা করেছিল। ‘বীর’ সাভারকারের জায়গায় ‘নীচ’ সাভারকারের পরিচয় পাওয়া যায়, সুযোগ্য আইনজীবী পি এল ইনামদারের স্মৃতিকথায়। ইনামদার একজন হিন্দুমহাসভার সদস্য এবং সাভারকারের একজন অত্যুৎসাহী গুণমুগ্ধ ভক্ত  ছিলেন। পি এল ইনামদার ট্রায়াল কোর্টে এবং আপিলের সময়ে দত্তাত্রেয় সদাশিব পার্চুর এবং গোপাল গডসের সপক্ষে সওয়াল করেছিলেন। হাইকোর্টে তিনি পার্চুররের জন্য মামলা জিতে তাঁকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করেছিলেন।  কিন্ত  তাঁর স্মৃতিকথায় (পি এল ইনামদার, The Story of the Red Fort Trial 1948-49, Popular Publication, Bombay, 1979)সাভারকারের অধ্যায়ে অনেক বেশী নিন্দাই প্রতিফলিত হয়েছে। এই বইতে একটা অংশে সাভারকার একজন অপদার্থ, আত্মকেন্দ্রিক চরিত্র ছাড়া আর কিছুই নন। (ঐ বই, পৃঃ ১৪১)। আদালতে নিজের সপক্ষে সাভারকারের লিখিত বিবৃতি প্রসঙ্গে একমাত্র রবার্ট পেইন-ই অবজ্ঞাসূচক কথা লেখেননি, ইনামদারও তাই করেছিলেন। আর তাঁর কথার ওজন অনেক বেশি। সাভারকার যা যা করেছিলেন, ইনামদার ছিলেন তাঁর একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী। (ঐ, পৃঃ ১৪২)। ১৯৪৮ সালে সেপ্টেম্বর মাসে সাভারকার আরো একবার অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়েছিলেন। সাংঘাতিক বিব্রত অবস্থায় পড়ে, তিনি ইনামদারের পেশাগত সাহায্য ভিক্ষা করেছিলেন। আদালত এই সাক্ষাৎকারের অনুমতি দিয়েছিল। সাভারকারের আইনজীবী এল বি ভোপাটকর তাঁকে জানিয়েছিলেন যে, ইনামদার অভ্রান্ত এবং যোগ্য বলেই সাভারকার তাঁর সাহায্য চান।(ঐ, পৃঃ ১৪৩)। নিজের স্মৃতিচারণায় ইনামদার সাভারকাররের ‘নির্দোষ’ প্রতিপন্ন হওয়ায় , তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে লিখলেন, ‘All I remember even today is that I had tried to look hard at [Judge] Atma Charan, asking myself if he was the same Atma Charan who had one day said to me: ‘Believe me, I shall do full justice to the case which you have so ably put up’ ( The Story of the Red Fort Trial 1948-49, Popular Prakashan, 1979; page 147)ইনামদার আরও লিখলেন যে মামলা চলাকালীন সাভারকার আতঙ্কিত, স্নায়বিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং মামলা যত এগোচ্ছিল ততই তিনি আরো আগে বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছিলেন। ( The Story of the Red Fort Trial 1948-49, Popular Prakashan, 1979; page 142) জেলে যাবার নিদারুণ আতঙ্কের হাত থেকে বাঁচবার জন্য সাভারকার রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়া, এমনকি হিন্দুত্বের স্বার্থ ত্যাগ করার প্রস্তাব দিতে চেয়েছিলেন, যদিও তা ফলপ্রসূ হয়নি। এই বিখ্যাত বিচারের দিনপঞ্জীতে কাপুরুষতা আর চাতুরীর যে কাহিনী রয়েছে , কোথাও এর তুলনা মেলা ভার। ‘On February 22, while in detention at the Arthur Road Prison in Bombay, Savarkar gave a written undertaking to the Commissioner of Police: “I shall refrain from taking part in any communal or political public activity for any period the government may require in case I am released on that condition” (Exhibit D/104 in the case) যদিও তাঁর নির্দোষ প্রমাণ হওয়ার পরে  তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনো আপিল নথিভুক্ত হয়নি, তবুও ১৯৫০ সালে ১৩ঐ জুলাই বোম্বে উচ্চন্যায়ালয়ের বিচারপতি এম সি চাগলা আর পি বি গজেন্দ্রগদকারের কাছে তিনি আবার একটি মুচলেখা নিবেদন করলেন। ‘He would not take any part whatever in political activity and would remain in his house” for a year ১৩ঐ জুলাই সাভারকার আদালতকে জানান, ‘তাঁকে একথা বলবার ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে, সাভারকার যদি এমন কোনো মুচলেখা দেন যে তিনি কোনো রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করবেন না এবং বোম্বেতে নিজের বাড়িতেই থাকবেন, তাহলে সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে রাজি। সাভারকারের পক্ষে কে এন ধারাপ একটি মুচলেখা দেন যে, সাভারকার আর কোনো রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, সে যাই হোক না কেন, তাতে অংশগ্রহণ করবেন না এবং বোম্বেতে তাঁর বাড়িতেই থাকবেন। এর ভিত্তিতে মহামান্য হুজুর ১৩ঐ জুলাই, মুক্তির আদেশ জারি করেন। এই মেয়াদ ছিল এক বছর অথবা ভারতের সাধারণ নির্বাচন অথবা ভারত যদি কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, এদের মধ্যে যে ঘটনাটি আগে ঘটবে সেটি পর্যন্ত’।  আবার সেই নির্লজ্জ আত্মসমর্পনের ও মুচলেখার বিবরণ যা সাভারকাররের ‘বীরত্বকে ’ নস্যাৎ করে দেয়।      


 মোরারজী দেশাই।  তিনি কি আরও অনেক কিছু জানতেন ?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লবভাই প্যাটেল ১৯৪৮ সালের ২৭-এ ফেব্ররুয়ারী, প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুকে চিঠি মারফৎ জানালেন, ‘ I have kept myself almost in daily touch with the progress of the investigation regarding Bapu’s assassination case. It was a fanatical wing of the Hindu Mahasabha directly under Savarkar that “[hatched] the conspiracy and saw it throughসুত্র; - Sardar Patel’s Correspondence, Volume 6, page 56)। খুব স্বাভাবিকভাবেই হিন্দু মহাসভার সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির  প্যাটেলের কাছে সাভারকারের নির্দোষের নিরিখে আবেদন করলে প্যাটেল জবাব উল্লেখযোগ্য, ‘As regards Savarkar, the Advocate-General of Bombay, who is in charge of the case, and other legal advisers and investigating officers met me at a conference in Delhi before I came here. I told them, quite clearly, that the question of inclusion of Savarkar must be approached purely from a legal and judicial standpoint and political considerations should not be imported into the matter.... I quite agree with you that the Hindu Mahasabha, as an organisation, was not concerned in the conspiracy that led to Gandhiji’s murder; but at the same time, we cannot shut our eyes to the fact that an appreciable number of the members of the Mahasabha gloated over the tragedy and distributed sweets. On this matter, reliable reports have come to us from all parts of the country. Further, militant communalism, which was preached until only a few months ago by many spokesmen of the Mahasabha, including men like Mahant Digbijoy Nath, Prof. Ram Singh and Deshpande, could not but be regarded as a danger to public security. The same would apply to the RSS [Rashtriya Swayamsewak Sangh], with the additional danger inherent in an organisation run in secret on military or semi-military lines”  (সুত্রঃ - Sardar Patel’s Correspondence, Volume 6, page 56)। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির পুনরায় আবেদনের জবাবে প্যাটেল দেশের সামাজিক  পরিমণ্ডলে আর-এস-এস এবং মহাসভার ভুমিকায় এবং কার্যপ্রনালীতে যে একটা ঘৃণার ও হিংসার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে তাঁর উল্লেখ করলেন। ‘As regards the RSS and the Hindu Mahasabha, the case relating to Gandhiji’s murder is sub judice and I should not like to say anything about the participation of the two organisations, but our reports do confirm that, as a result of the activities of these two bodies, particularly the former, an atmosphere was created in the country in which such a ghastly tragedy became possible. There is no doubt in my mind that the extreme section of the Hindu Mahasabha was involved in this conspiracy. The activities of the RSS constituted a clear threat to the existence of government and the state. Our reports show that those activities, despite the ban, have not died down. Indeed, as time has marched on, the RSS circles are becoming more defiant and are indulging in their subversive activities in an increasing measure। (সুত্রঃ – ঐ, page 323)। আদালতে বোম্বে আয়টভোকেট জেনারেল সি কে দপ্তরী সরকারি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন। সরকার পক্ষের প্রধান উকিল অন্য কেউ নন, স্বয়ং সহ-প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী বল্লবভাই প্যাটেল। তদন্তের কাজ যতই এগোল, ততই মোরারজী দেশাই এবং বল্লবভাই প্যাটেল দুজনেই এই অপরাধে সাভারকারের যোগসাজশের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলেন। বোম্বের সংসদীয় কাউন্সিলের দাঁড়িয়ে ৩ ঐরা এপ্রিল, ১৯৪৮ সালে দেশাই অত্যন্ত তিক্তকণ্ঠে বললেন যে, সাভারকারের অতীতের সমস্ত সুকৃতি তাঁর বর্তমান দুষ্কৃতিতে একেবারে ম্লান হয়ে মুছে গেছে। এই বিষয়ে  স্মর্তব্য সাভারকার  হিংসা এবং রক্তপাতে সম্মতি জানাচ্ছেন, লক্ষ্য করে দেখা যাক।   ‘But so long as that divine age has not arrived, so long as the highly auspicious end remains only in the lines of saintly poets and in the prophecies of the divinely inspired, and so long as, even to make that state of universal justice possible, the human mind has to be busy eradicating sinful and aggressive tendencies, so long, rebellion, bloodshed, and revenge cannot be purely sinful. As long as the word “rule” is used for “authority” both just and unjust, so long its antonym “rebellion” can, also, be just as well as unjust. And till then, before passing judment on the history and the authors of any revolt, bloodshed, and revenge, there must be a full and minute inquiry of the circumstances under which they took place. Revolt, bloodshed and revenge have often been instruments created by nature to root out injustice and introduce an era of justice. And when Justice uses these terrible means for her salvation, the blame of it does not lie on Justice but on the preceding cruel Injustice, the power and insolence of which called forth the means....And it was the fire of such a divine vengeance that was burning in the heart of the sons of Hindusthan in 1857. Their thrones were broke, their crowns smashed, their country taken away, their religions trodden under foot, their lands confiscated, their properties robbed, and laws despised; they had been cheated with promises made only to be broken; insults and outrages had reached a climax. Life itself had lost all its charms for them on account of the dire dishonour in which they had sunk. Requests were in vain; so, also, were petitions, complaints, wailings, and cries; all in vain. Then the natural reaction began and everywhere could be heard the whispers of “Revenge!” India had been subjected to innumerable,. Cruel oppressions each of which, individually, would have justified the revenge. If there had been no revolution even after all this we would have had to say “India is dead!”...Indeed, if there was no propensity in human nature towards a terrible revenge for an horrible injustice suffered, the brute in man would have been still the dominating factor in human dealings. Is not one of the most important functions of law – the punishment of crime?’  (সুত্রঃ- সাভারকার, ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম- ১৮৫৭, ইংরাজি অনুবাদ, ইন্টারনেট সংস্করণ)।

 বল্লবভাই প্যাটেল

প্যাটেল যদি সাভারকারের অপরাধ সম্পর্কে নিশ্চিত না হতেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পেশ করা যেত না। তাঁর সমকালে তিনি ছিলেন দুঁদে ফৌজদারী উকিল। তাঁর দক্ষতা অত্যন্ত প্রশংসিত ছিল। এ হত্যাকাণ্ডের স্বীকৃত সহযোগী দিগম্বর ব্যাজ – এর স্বীকারোক্তির প্রমাণের ওপরেই যে সাভারকারের বিরুদ্ধে ঝুলে রয়েছে একথা তিনি জানতেন। সে পুলিসকে বলেছে এবং আদালতে শপথ নিয়ে বারবার একই কথা বলেছে যে, দুবার , ১৪ঐ এবং ১৭ঐ জানুয়ারি গডসে আর আপ্তের সঙ্গে সে বোম্বের সাভারকার সদনে গিয়েছিল। ২০ শে জানুয়ারি পাহওয়ার জ্বালানো এবং ৩০ শে জানুয়ারি গডসের গান্ধী হত্যার অল্প কদিন আগের ঘটণা এগুলো। দ্বিতীয়বার ১৭ঐ জানুয়ারি তাঁদের শেষ বিদায় জানাবার সময় সাভারকারকে সে ‘যশস্বী হৌন ইয়া’ (সফল হয়ে ফিরে এস) বলে শুভেচ্ছা জানাতে শুনেছে। ফেরার পথে আপ্তে ব্যাজকে বলেছিল, সাভারকার অনুমান করেছেন যে ‘গান্ধীজীর শতক শেষ। কাজটা যে সফলভাবে শেষ হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই’।
সাভারকার সম্বন্ধে রবার্ট পেইন ১৯৬৯ সালে তাঁর বই ‘The Life and Death of Mahatma Gandhi in 1969’ – তে উল্লেখ করলেন, ‘This is what Robert Payne wrote of Savarkar in: “Among those who sat in the dock he alone seemed to be well cast for the role he was playing. Some inner fire burned in him, in that deathly pale face which had been reduced by illness and suffering to the dimensions of a skull. He had been placed under house arrest within eight hours of the assassination, and the only surprising thing is that he was not arrested earlier, for he was the prime suspect, the one man who would inevitably be suspected of the crime. Suspicion would have fastened on him even if he had been living in London.’ ‘The prosecution had no difficulty in showing that Nathuram Godse had organised the conspiracy, but it was a vastly more difficult task to prove the direct complicity of Savarkar. He claimed that he was ill during the months preceding the assassinations, saw very few people, and had not been in communication with Godse or Narayan D. Apte for more than a year.
“[Digambar] Badge, the informer, claimed that on January 17, three days before the assassination, he accompanied Godse and Apte to Savarkar’s house in Bombay at nine o’clock in the morning. While Badge waited downstairs, Godse and Apte went upstairs to Savarkar’s study to receive the last darshan of their political leader and to obtain his final instructions. Five or ten minutes later they came downstairs accompanied by Savarkar, who said: ‘Be successful and come back.’ … Savarkar bore a heavy moral responsibility for the murder, and when he presented himself as a man who deplored the death of Gandhi with every fibre of his being, he was never convincing.
“In 1909 he had shown that he was perfectly capable of ordering a young Indian to murder Sir Curzon Wyllie. To his biographer Dhananjay Keer, who wrote an account of Savarkar and his times, he claimed full credit for the murder. He had given Madanlal Dhingra a nickel-plated revolver, saying curtly: “ Don’t show me your face if you fail this time.” Dhingra had acted like an automaton, blindly obedient to him, convinced that he was sacrificing himself on the altar of India’s freedom, and throughout the trial Savarkar continually encouraged him in the belief that he was a martyr whose name would be remembered for centuries. The London police strongly suspected Savarkar of complicity in the crime, but there was never enough evidence to convict him. He was finally convicted of complicity in the murder of Mr A.M.T. Jackson at the Nasik conspiracy trial and sentenced to transportation for life.
“The memory of this earlier murder hovered like a ghostly presence over the trial at the Red Fort, never mentioned in court, forgotten except by the oldest members of the audience who crowded the public benches. Savarkar had achieved respectability, and his crimes had taken place so long ago that they could be discovered only in the crumbling pages of ancient newspapers’  (pages 616-17).
১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হলো ল্যারি কলিন্স এবং ডোমিনিক ল্যাপিয়েরের সুবিখ্যাত বই ‘Freedom at Midnight।  এই বইতে পুলিশ দপ্তরের যাবতীয় রেকর্ড সংবলিত একটা মূল্যবান নথি ও প্রামানিক দলিল। ২০ জানুয়ারী ১৯৪৮ সালে গান্ধীজির এক প্রার্থণা সভায় মদনলাল কে পাহওয়া ( পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত একজন উদ্বাস্তু) একটা বোমা বিস্ফারণ ঘটিয়ে   একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে।  তাঁর অনুচর বৃন্দ গডসে এবং বাকিরা সেই এলাকা থেকে পালিয়ে যায় তৎক্ষণাৎ। এর পরের দিন মোরারজী এই কেসটিতে নাগরোয়ালকে নিয়োগ করেন। বইটার লেখকেরা উল্লেখ করেছেন ‘Nagarvala set the machinery in motion to identify him. For the young officer there seemed no question that, sooner or later, the road to the men who had tried to murder Gandhi had to pass by the quiet house among the palms and meddler trees of Keluksar Road, Savarkar’s residence in Bombay.’  Nagarvala had asked Desai for permission to arrest Savarkar on the basis of Madanlal’s visit to him the week before. Desai had refused with the angry query: ‘Are you mad? Do you think I want this whole province to go up in smoke?’” If Nagarvala could not confine Savarkar to a prison cell, however, he could at least confine him to a brilliant organisation created by the British that was the pride of the Bombay CID, its Watchers’ Branch” (page 417)। বোঝা যায় যে সাভারকারের সাথে মদনলালের সংযোগের ভিত্তিতে দেশাইয়ের কাছে সাভারকারেকে গ্রেফতার করার অনুমতি দেয়েছিলেন  কিন্ত  মোরারজী দেশাই সেই অনুমতি দেননি। সাভারকারকে পুলিশি নজরদারির আওতায় রাখা হয়। লেখকদের ধারনায় প্রতিফলিত হয় যে পুলিশি নজরদারী স্বত্ত্বেও সাভারকারের বাসভবনের মধ্যে একটা নতুন ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সাভারকারের মতে আরেকটা সুযোগ (ষড়যন্ত্র বা সন্ত্রাস) আগত  এবং তিনি সেই সুযোগের পরিবেশকে তিনি উপলব্ধি করতে পারছেন। ‘Savarkar was put under surveillance. “Jimmy Nagarvala’s Bombay investigation had yielded little new after its first 48 hours. The Bombay Watchers’ Branch continued its vigilance at the gates of Savarkar Sadan, but the Machiavellian leader inside was too clever to reveal his mind. And yet, some malignant radiation seemed to emanate from that house. Something in the constant flow of Savarkar’s followers in and out of its premises spoke to Nagarvala’s policeman’s instincts. ‘Don’t ask me why’, he told Sanjevi [the head in Delhi], ‘but I just know another attempt is coming. It’s something I can feel in the atmosphere here’ (ঐ , pages 429-30)। মোরারজী দেশাই, যিনি সেই সময়ে বোম্বে প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন , তিনি নিজেই বক্তব্য রাখেন যে গান্ধীহত্যায় ষড়যন্ত্রে সাভারকার জড়িত ছিলেন  কিন্ত  তিনি শেষপর্যন্ত ছাড় পেয়ে যান। মোরারজী দেশাই এর মতে, ‘ [I] kept myself in touch with the investigation that was going on in the Bombay Province। জামসেদ নাগারওয়াল তৎকালীন বোম্বে সি আই ডি’র ডেপুটি কমিশনার ছিলেন এবং দেশাইয়ের কাছের মানুষ বলে পরিচিত, তিনি এবং দেশাই আসল সত্যটিকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। মোরারজী দেশাই যখন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তখন যে ঘটনা ঘটেছিল সেটা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে। সরকারি পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি, সি কে দপ্তরী বিচারক আত্মাচরণের কাছে আগের দিনে যে আবেদন করেছিলেন সেটি ১ লা সেপ্টেম্বর, ১৯৪৮ সালে টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত হয়। সাভারকার সংক্রান্ত অংশটি পাঠ হলো এইরকম, ‘In cross-examination of the Honourable Mr Morarji Desai, counsel for accused number seven [V.D. Savarkar] asked the following question: ‘Did you have any other information about Savarkar, besides Professor Jain’s statement for directing steps to be taken as regards him?। ‘মাননীয় শ্রী মোরারজী দেশাই-এর জেরার সাত নম্বর অভিযুক্তের (ভি ডি সাভারকার) কৌঁসুলি প্রশ্ন করেন, ‘সাভারকারের প্রসঙ্গে কোনো ব্যবস্থা নেবার জন্য অধ্যাপক জৈনের বক্তব্যটি ছাড়া তাঁর বিষয়ে আপনার কি আর কোনো খবরাখবর জানা আছে?’  সাক্ষী এইভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর দেয় ঃ- ‘Shall I give the full facts? I am prepared to answer. It is for him [Savarkar] to decide.’ Counsel for accused number seven thereafter stated that he dropped the question. The prosecution submitted that the question, answer and the statement of counsel should be recorded but Your Honour declined to do so. It is submitted that the question, the answer and the statement of counsel for accused number seven should have gone on the record ‘আমি কি সমস্ত তথ্য জানাব? আমি উত্তর দিতে প্রস্তুত। তাঁকে (সাভারকার) এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে’। সাত নম্বর অভিযুক্তের কৌঁসুলি এরপর বলেন যে তিনি প্রশ্নটা বাদ দিচ্ছেন। সরকারী পক্ষ আবেদন জানায় যে, এই প্রশ্নোত্তর এবং কৌঁসুলির বক্তব্য নথিভুক্ত করা হোক। কিন্তু মাননীয় বিচারপতি সেটি খারিজ করে দেন। এই প্রশ্ন, উত্তর এবং সাত নম্বর অভিযুক্তের কৌঁসুলির বক্তব্য নথিভুক্ত করা উচিত এই মর্মে আবেদন করা হলো।  বিচারক আত্মাচরণ  অত্যন্ত অধ্যবসায়ে তাঁর রায়ে ব্যাজ – এর শপথ  নেওয়া প্রামানিক বক্তব্যের বিচার বিশ্লেষণ করেছিলেন। ২৪ নং অধ্যায়ে তাঁর নিরীক্ষার যে যুক্তিগুলি রয়েছে সেগুলি বিস্তৃতভাবে উদ্ধৃত হওয়া উচিত। ‘কার্যত এখন এটাই আইনের অনুশাসন যে লিখিত বয়ান (corpus delicti) এবং অভিযুক্তের সনাক্তকরণ উভয় দিক থেকেই রাজসাক্ষীর বক্তব্য অবশ্যই সমর্থিত হতে হবে, যদিও অপরাধের প্রতিটি খুঁটিনাটি সমেত সমস্ত বিবরণের সমর্থণ প্রয়োজনীয় নয় অথবা সমর্থিত প্রমানাদি শাস্তি দানের পক্ষে যথেষ্ট হতেই হবে এটাও জরুরী নয়। প্রয়োজনীয় সমর্থনের প্রকৃতি এবং বিস্তৃতি প্রতিটি নির্দিষ্ট মামলায় পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এবং সেইমতো বদলে যায়। বিশেষত অভিযুক্তের অপরাধের প্রকৃতি, চরিত্র এবং রাজসাক্ষীর পুর্বপরিচয় ও তাঁর সাক্ষ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহের মাত্রা, রাজসাক্ষী তাঁর বক্তব্য নথিভুক্ত করাকালীন পরিস্থিতি, এবং অভিযুক্তকে তাঁর মিথ্যা দোষারোপ করার উদ্দেশ্য—এ –সবই বিচার্য’। বিচারপতির মতে রাজসাক্ষীর পরীক্ষা-নিরিক্ষা এবং জেরা চলেছিল ২০।০৭।১৯৪৮ থেকে ৩০।০৭।১৯৪৮ পর্যন্ত। ‘The examination and the cross-examination of the approver went on from 20.7.1948 till 30.7.1948. He was cross-examined for nearly seven days. There was thus an ample opportunity to observe his demeanour and the manner of his giving evidence. He gave his version of the facts in a direct and straightforward manner. He did not evade cross-examination or attempt to evade or fence with any question. It would not have been possible for anyone to have given evidence so unfalteringly stretching over such a long period and with such particularity in regard to the facts which had never taken place. It is difficult to conceive of anyone memorising so long and so detailed a story if altogether without foundation…. ‘প্রায় সাতদিন তাঁকে জেরা করা হয়েছিল। অতএব তার আচার-আচরণ এবং কিভাবে সে সাক্ষ্য দিচ্ছে তা লক্ষ্য করার প্রচুর সুযোগ ছিল। সে অত্যন্ত সোজাসুজি এবং সরাসরি তার বয়ান পেশ করেছিল। সে কখনই জেরা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য চাতুরী বা চাতুরীর চেষ্টা বা কোনো প্রশ্নে নিজের গা বাঁচানো এসব কিছুই করেনি। কোনো মানুষের পক্ষেই যে ঘটনা আদৌ ঘটেনি সে বিষয়ে এত নিখুঁতভাবে দীর্ঘ সময় ধরে এত বিস্তারিত এবং এত নির্দিষ্টভাবে সমস্ত বিষয়ে সাক্ষ্য দেওয়া কখনই সম্ভব হতে পারে না। যে কাহিনীর আদৌ কোনো ভিত্তি নেই সেটিকে কোনো মানুষ এত দীর্ঘ দিন ধরে এত বিস্তারিতভাবে মনে রেখেছে এমন ধারণা করা কঠিন’
 …The approver in his evidence says that in the Marina Hotel on 20.1.1948 they fixed primers to the gun cotton slabs and detonators to the hand grenades, discussed the plan and distributed the ‘stuff’ among them. Of course, no direct corroborative evidence to the effect could possibly have been produced on behalf of the prosecution. However, there is an illuminating piece of indirect corroborative evidence to the effect on behalf of the prosecution. The evidence of Nain Singh as supported by Exs. P/17 and P/24 goes to show that three extra teas had been ordered and supplied that day in Room No. 40। ‘রাজসাক্ষী তার সাক্ষ্যে বলেছে যে, ২০ ০১ ১৯৪৮ তারিখে মারিনা হোটেলে তারা gun-cotton-slab –এ প্রাইমার ও হ্যাণ্ড-গ্রেনেডে বিস্ফোরক আটকেছিল, ওখানেই সমস্ত পরিকল্পনা আলোচনা করেছিল এবং তাদের মধ্যে ‘মাল’ ভাগাভাগি করেছিল। অবশ্যই, সঙ্গত কারণে সরকারী পক্ষের তরফে এর কোনো প্রত্যক্ষ সমর্থণ উপস্থাপিত করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য সরকারী পক্ষের তরফে অপ্রত্যক্ষে সমর্থিত ছোট্ট একটি প্রমাণ... উপস্থাপিত করা হয়েছে। এক্সিবিট পি/১৭- এবং পি/২৪ – এর সমর্থিত নৈন সিংহের সাক্ষ্যে দেখা যায় যে, সেদিন ৪০ নং রুমে তিনটি বাড়তি চায়ের অর্ডার ছিল এবং যেগুলি দেওয়াও হয়েছিল’।
.... It is a well-known principle in the estimation of evidence that the earlier events may be construed in the light of the subsequent ones. The approver’s story as given above fits in fully with the events that took place subsequently and stands corroborated otherwise by independent evidence. There is thus no reason as to why reliance be not placed on the approver’s evidence that stands generally corroborated. Now I take up the approver’s evidence that does not stand corroborated in regard to the identity of a certain accused—Vinayak D. Savarkar.... The approver in this evidence says that on 14.1.1948 Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte took him from the Hindu Mahasabha office at Dadar to the Savarkar Sadan saying that arrangements will have to be made for keeping the ‘stuff’. He had the bag containing the ‘stuff’ with him, Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte then went inside leaving him standing outside the Savarkar Sadan. Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte came back 5-10 minutes later with bag containing the ‘stuff’.অর্থাৎ, ‘রাজসাক্ষী তার সাক্ষ্যে বলেছে১৪ ০১ ১৯৪৮ তারিখে নারায়ণ ডি আপ্তে ও নাথুরাম ভি গডসে তাকে দাদারের হিন্দু মহাসভার দপ্তর থেকে এই বলে সাভারকার সদনে নিয়ে গিয়েছিল যে, ‘মাল রাখার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। মাল ভ্ররতি থলে তার কাছে ছিলনাথুরাম ভি গডসে ও নারায়ণ ডি আপ্তে তারপর তাকে সাভারকার সদনের বাইরে দাঁড় করিয়ে ভিতরে গিয়েছিল। নারায়ণ আপ্তে ও নাথুরাম গডসে পাঁচ-দশ মিনিট পর মাল’- এর ব্যাগ নিয়ে ফিরে এসেছিল।   
The approver(রাজসাক্ষী)  then says that on 15.1.1948, in the compound of the temple of Dixitji Maharaj, Narayan D. Apte told him that Tatyarao Savarkar had decided that Gandhiji should be finished and had entrusted that work to them. The approver then says that on 17.1.1948 Nathuram V. Godse suggested that they should all go and take the last ‘darshan’ of Tatyarao Savarkar. They then proceeded to the Savarkar Sadan. Narayan D. Apte asked him to wait in the room on the ground floor. Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte went up to the first floor and came down after 5-10 minutes. They were followed immediately by Tatyarao Savarkar. Tatyarao Sarvarkar addressed Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte ‘ yashasvi houn ya’ (be successful and come) অর্থাৎ, ‘ রাজসাক্ষী বলে যে, ১৫ ০১ ১৯৪৮ দীক্ষিত মহারাজের মন্দির প্রাঙ্গণে নারায়ণ ডি আপ্তে তাকে বলেছিল, তাতিয়ারাও সাভারকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, গান্ধীজীকে ‘শেষ’ করে দিতে হবে এবং এ কাজের ভার তাদের ওপর দেওয়া হয়েছে। এরপর রাজসাক্ষী বলে, ১৭ ০১ ১৯৪৮ তারিখে নাথুরাম ভি গডসে পরামর্শ দেয় যে, তাদের সকলের গিয়ে তাতিয়ারাও সাভারকারের শেষ ‘দর্শণ’ করা উচিত। তারপর তারা সাভারকার সদনের দিকে যায়। নারায়ণ ডি আপ্তে তাকে নিচের তলার ঘরে অপেক্ষা করতে বলে। নাথুরাম ভি গডসে এবং নারায়ণ ডি আপ্তে দোতলায় যায় এবং পাঁচ- দশ মিনিটের মধ্যে নেমে আসে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের পিছু পিছু আসে তাতিয়ারাও সাভারকার। তাতিয়ারাও সাভারকার নারায়ণ ডি আপ্তে ও নাথুরাম ভি গডসেকে উদ্দেশ্য করে বলেন ‘যশস্বী হৌন ইয়া’ (সফল হও এবং ফিরে এস)’।
Narayan D. Apte on their way back from Savarkar Sadan said that Tatyarao Savarkar had predicted ‘ Tatyarao yani ase bhavishya kele ahe ki Gandhijichi sambhar varshe bharali ata apale kam nischita honar yat kahi sansaya nahi (Gandhiji’s hundred years were over – there was no doubt that their work would be successfully finished). অর্থাৎ, ‘ সাভারকার সদন থেকে ফেরার পথে নারায়ণ ডি আপ্তে বলে, তাতিয়ারাও সাভারকার ভবিষৎবাণী করেছেন গান্ধীজির শতক শেষ --- তাদের কাজ সফলতার সঙ্গে শেষ হভে এতে কোনো সন্দেহই নেই’।
The prosecution case against Vinayak D. Savarkar appears to rest just on the evidence of the approver and the approver alone. The contention on behalf of the prosecution is that part of the approver’s story as against Vinayak D. Savarkar to certain extent stands corroborated by the evidence of Miss Shantabai B. Modak and Aitappa K. Kotian. The court found their accounts less than specific.
There is nothing on the record of the case to show as to what conversation had taken place just prior to that on the first floor between Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte on the one hand and Vinayak D. Savarkar on the other. There is thus no reason to suppose that the remarks said to have been addressed by Vinayak D. Savarkar to Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte in the presence of the approver was in reference to the assassination plot against the life of Mahatma Gandhi. ‘অবশ্য রাজসাক্ষী যে বলেছে, সে বিনায়ক ডি সাভারকারকে নাথুরাম ভি গডসে এবং নারায়ণ ডি আপ্তেকে উদ্দেশ্য করে কথা বলতে শুনেছিল সে সম্পর্কিত রাজসাক্ষীর কাহিনীর সমর্থনে কোনো সাক্ষ্যই কার্যকর নয়। রাজসাক্ষী তার সাক্ষ্যে বলেছে যে, শুধুমাত্র বিনায়ক ডি সাভারকারকে নাথুরাম ভি গডসে এবং নারায়ণ ডি আপ্তেকে উদ্দেশ্য করে ‘যশস্বী হৌন ইয়া’ বলতে শুনেছিল।

It would thus be unsafe(বিপজ্জনক)  to base any conclusions on the approver’s story given above as against Vinayak D. Savarkar.’ 


প্রদত্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের পরিস্থিতিতে বিচারের বিশ্লেষণ বেশ তর্কসাপেক্ষ্য। ব্যাজ-এর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সাভারকারকে দোষী সাব্যস্ত করাকে তিনি ‘বিপজ্জনক’ মনে করেছেন , যদিও ব্যাজ-কে তিনি সত্যনিষ্ট সাক্ষী হিসেবেই দেখেছিলেন। অবশ্য তাঁর নিরীক্ষার পরবর্তী অধ্যায়ে, ঠিক সাত পাতার পরে, ব্যক্তিগত দোষাবহতা আলোচনা করতে গিয়ে, তিনি ব্যাজ- এর গৃহীত বিশ্বাসযোগ্যতা বিষয়ে তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাঁর সাক্ষ্য সাভারকারকে সারাক্ষণ দোষী বলা হলো, তবুও সাক্ষ্য প্রমাণ আইনের দৃষ্ঠিতে তাঁকে জেলে পাঠানোই ‘বিপজ্জনক’ হয়ে  গেলো। শেষপর্যন্ত ঘটনাটা এইরূপ দাঁড়াল। বিচারকের বক্তব্য এই বিষয়ে...  
Vinayak D. Savarkar in his statement says that he had no hand in the ‘conspiracy’, if any, and had no control whatsoever over Nathuram V. Godse and Narayan D. Apte. It has been mentioned above that the prosecution case against Vinayak D. Savarkar rests just on the evidence of the approver and the approver alone. It has further been mentioned earlier that it would be unsafe to base any conclusions on the evidence of the approver as against Vinayak D. Savarkar. There is thus no reason to suppose that Vinayak D. Savarkar had any hand in what took place at Delhi on 20.1.1948 and 30.1.1948.’ 
এই মামলার বস্তুত পারিপার্শ্বিক প্রেক্ষাপট থেকে কোনো সিদ্ধান্ত টানা হয়নি। ব্যাজ-এর সাক্ষ্যপ্রমাণে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে, ২০ শে জানুয়ারি এবং ৩০ শে জানুয়ারি, ১৯৪৮ সালে ‘দিল্লিতে যা ঘটেছিল তাতে’ সাভারকারের বেশ ভালই ‘একটা হাত’ ছিল। এর মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতার কোনো অভাব ছিল না, অভাব ছিল সমর্থনের। প্রাসঙ্গিকতাকে হিসেবের মধ্যে আনা হয়নি। আর ব্যাজ-এর বিশ্বাসযোগ্যতা বিষয়ে বিচারকের নিজের সিদ্ধান্তেরই  বিরোধিতা করা হয়েছে।  বিচারক আত্মাচরণ যা দেখতে পাননি, বিচারক জীবন লাল কাপুর সেই ‘আসল সত্যটি’ খুঁজে বের করেছিলেন। এই কাজ করতে গিয়ে সাভারকার সম্বন্ধিত পূর্ববর্তি সমস্ত অপরাধ – ১৯০৯ সালে কার্জন উইলির হত্যা, ১৯০৯ সালে জ্যাকসন হত্যা, ১৯৩১ সালে হটসনকে হত্যার চেষ্টা এবং ১৯৪৮ সালে গান্ধী হত্যা, এই সবগুলি উন্মোচিত করেছিলেন। কলিন্স ও ল্যাপিয়েরে মতে ‘আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ অবশ্যই সাভারকারকে একটা বিষয় শিখিয়েছিল। হত্যাকারীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ তিনি এত সতর্কভাবে গোপন করতেন যে, পুলিস কখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা সাজাতে পারেনি... একজন ধর্মান্ধ যার অদৃশ্য হাত অন্তত তিনটি হত্যাকাণ্ডের ধারা নিয়ন্ত্রিত করেছিল’ এই ভাবে তাঁরা তাঁর চরিত্রের মূল্যায়ন করেছিলেন। (সুত্রঃ – কলিন্স ও ল্যাপিয়ের, ফ্রিডম এয়াট মিডনাইট, পৃ ৭,৮, ৩৬২)।

যদিও গান্ধী – হত্যার পর আর এস এস এর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার প্যাটেল আর এস এস কাছ থেকে মুচলেখা হিসেবে  তাঁদের সংবিধানকে কে নতুন করে রচনা করার শর্ত রাখেন।  এই প্রেক্ষিতে হিন্দু দৈনিকে আর এস এস সম্বন্ধে তৎকালীন কার্যপ্রনালী ও সরকারের মূল্যায়নের কিছু প্রতিবেদন প্রাসঙ্গিক হবে ঃ-

The purpose of my article was to show how the RSS has incrementally increased its hold on the BJP — in breach of its 1949 commitment to Home Minister Sardar Patel and the written constitution that followed. That a written constitution with specific undertakings was a pre-condition for lifting the ban is fully established by the government of India’s July 11, 1949 notification lifting the ban. The conditions imposed and agreed to included: rejection of secrecy and violence, respect to the Indian flag and adoption of a non-political, cultural role. The preamble of the RSS constitution is self-explanatory: It states that “till now” the RSS had “no written constitution” whose writing had become “expedient” in “the present changed conditions.” Article 4(b) states that the Sangh “as such, has no politics.”
Patel’s relationship with the RSS was complex. He praised it in some forums and was convinced it was not involved in Gandhiji’s assassination. But Patel was emphatic that the RSS had created a climate in which Gandhiji’s murder became possible. The ban was handled entirely by the Home ministry which in its November 14, 1948 press note accused RSS members of a tendency to be “anti-national and often subversive.” Patel’s letters to S.P. Mookherjee and M.S. Golwalkar (cited in my article) reiterated this point in stronger words. So the ban was far from being a product of flimsy reasoning.
Patel did want the RSS to join the Congress but that was to subsume and contain its political ambitions within the larger umbrella of the Congress (Patel supporter A.G. Kher said as much at the October 7, 1949 meeting of the Congress working committee).
The fear of what an unfettered Sangh could do is the reason why Patel compelled Golwalkar to write a constitution undertaking, among other things, to abjure politics. Golwalkar and the Home Ministry exchanged bitter words over the writing of the constitution, and as Anderson and Damle, note in their authoritative and largely empathetic work, The Brotherhood in Saffron : “RSS writers exaggerate Patel’s pro-RSS sympathies … (but) Patel did not exactly deal gently with the RSS during the ban period and extracted some hard terms from them before he agreed to lift the ban.”
Just what the hard terms were can be seen from the July 11, 1949 notification and news reports from The Hindu from that period.

“In consultation with the Provincial Governments, the Central Government have had under consideration the question of removal of the ban on the R.S.S. The factors governing the problem clearly emerged during the discussion which the leader of the organisation (M.S. Golwalkar) had with Sardar Patel in October last year. In brief, they were that the R.S.S. should function under a written and published Constitution, restricting activities to the cultural sphere, abjuring violence and secrecy, professing loyalty to the Constitution of India and the National Flag, and providing for a democratic organisation. The public is already familiar with the history of the breakdown of these talks and the course which events took thereafter.
“Inspite of this, the Government’s attitude to this organisation was never prompted by any spirit of vindictiveness, and when certain non-official gentlemen approached them with requests to interview the R.S.S. leader in jail, with a view to persuading him to fulfil the above mentioned conditions, the Government offered them facility to do so. In March this year, the R.S.S. leader wrote to the Government forwarding a draft Constitution, the terms of which were examined by Government in consultation with the provinces. The Government of India conveyed to the R.S.S. leader their reaction on the draft and he has now generally accepted the suggestions made by the Government of India and the clarifications made by him indicate that the relevant provisions of the Constitution are intended to be worked in the spirit contemplated by the Government.
“The R.S.S leader has undertaken to make the loyalty to the Union Constitution and respect for the National Flag more explicit in the Constitution of the R.S.S and to provide clearly that persons believing or resorting to violent and secret methods will have no place in the Sangh. The R.S.S. leader has also clarified that the Constitution will be worked on a democratic basis. In particular, the office of the Sarsanghchalak would, in effect, be elective in that the successor would be nominated with the consent of the then Karyakari Mandal…
“In the light of the modification made and clarifications given by the R.S.S. leader, the Government of India have come to the conclusion that the R.S.S. organisation should be given an opportunity to function as a democratic, cultural organisation owing loyalty to the Indian Constitution and recognising the National Flag eschewing secrecy and abjuring violence. Indeed, the Government feel that, under a Constitution embodying these principles and worked in the right spirit, no reasonable objection can be taken to such functioning. They have accordingly decided to withdraw the ban on the organisation …”
Source: D.R. Goyal, 1979 )

 ১৯৩৭ সালে বৃটিশ জেল থেকে মুক্ত হয়ে সাভারকার হিন্দু মহাসভাকে পুনরুজ্জীবিত করতে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে গোলওয়ালকারের সমর্থন চাইলেন যখন মহাসভা কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে একটা পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিশেবে প্রতিষ্টিত হয়েছে সাভারকারের অনুপেরণায় ও নেতৃত্ব। আর এস এস এই নিয়ে নাকি তখন কোনো উৎসাহ দেখায় নি।   আজও আর এস এর এর প্রবক্তাদের এবং সদস্যরা  মহাসভার সাথে সংযোগ এবং প্রতক্ষ্য রাজনৈতিক কার্য্যকলাপে অংশগ্রহণ ও প্রভাব বিস্তারের প্রবনতা স্বীকার করেন না। বিশেষ করে স্মর্ত্যব্য যে সময় এই বিশয় নিয়ে হয়েছে , তার ঠিক কয়েকমাস আগে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য  প্রার্থী নির্বাচনে মহাসভার বিবর্তিত মুখপাত্র বি জে পির মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল সামলাতে আর এস এস এর প্রধান মোহন ভাগবতকে নাক গলাতে হয়েছে এবং গুজরাতের মুসলমান নিধনযজ্ঞের প্রধান নায়ক নরেন্দ্র মোদীর সুপারিশ আর এস এস এর পক্ষ্য থেকে এসেছে। আর এস এস, মহাসভা , জনসঙ্ঘ, বি জে পি,  সঙ্ঘ পরিবারের মধ্যে সখ্যতা এবং রাজনীতিতে আর এস এস এর ভূমিকা ও প্রভাবে অসংখ্য সাক্ষ্য ইতিহাস বহন করে। স্বাধীনতার ঠিক পরেই আর এস এস এর নেতারা অনুভব করলেন যে রাজনৈতিক পরিধির বাইরে তারা অবস্থান করতে পারবেন না। জানুয়ারী, ১৯৪৮ –এ আর এস এস এর সদস্য নাথুরাম গডসে গান্ধীজিকে হত্যা করে (বর্তমান হিন্দুত্ববাদীর আর এস এস এবং মহাসভার সঙ্গে গডসের সংযোগ স্বীকার করতে চান না,  কিন্ত  এই সংযোগে এবং গান্ধীহত্যায় আর এস এস এর প্রত্যক্ষ্য মদতের বিশয় পরে আলোচনায় আসবে)। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নেহেরু সাথে সাথে আর এস এস –এর ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আর এস এস –এর প্রবক্তারা উপলব্ধি করেন যে এই সঙ্কটের সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে তাঁরা পাশে পাবে না। আর এস এস এর মধ্যে যে অংশ আর এস এস রাজনৈতিক অভিমুখে অংশ নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতেন, তারা এবার আর এস এস – এর নিজস্ব অস্তিত্বের জন্য একটি রাজনৈতিক দল গড়ার যুক্তি খাড়া করলেন। নিমরাজী হওয়া সত্ত্বের গোলওয়ালকর আর এস এস –এর নেতৃত্বকে তৎকালীন মহাসভার সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মূখার্জীর সাথে আলোচনা  করার অনুমতি দিলেন। এই আলোচনার পরিনীতিতে ১৯৫১ সালে জন্ম নিল বর্তমান ভারতীয় জনতা পার্টির পূর্বশুরী ভারতীয় জনসঙ্ঘ, ঠিক প্রথম লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে। বস্তুত ১৯৪৮ সালের আগেই আর এস এস আর মহাসভার মধ্যে যোগাযোগ এবং সক্ষ্যতা সাক্ষ্য ইতিহাস বহণ করে। এই বিশয়ে কিছু ঐতিহাসীক লিপিবদ্ধ করা তথ্য তুলে দেওয়া হল।  ক) ‘১৯৪২ সালে আর এস এস সংক্রান্ত একটি টীকা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে ঃ হিন্দু মহাসভার ঘোষিত নেতা ডঃ বি এস মুঞ্জে প্রায়শই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন এবং বারবার তাদের বলতেন যে, হিন্দুস্তান হিন্দুদেরই এবং বৃটিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে হবে। খ) আর এস এস প্রসঙ্গে ১৯৪৩ সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে একটি টিকায় লেখা হয়েছে ঃ আর এস এস –এর আন্দোলন সম্পর্কে হিন্দু মহাসভার সহানুভূতি ও সমর্থন বিষয়ে আরও কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। ভি ডি সাভারকারের পুনে শিবির পরিদর্শনের উল্লেখ আগেই করা হয়েছে। ১ লা আগস্ট তিনি আরাওটিতে সংঘ এবং রাষ্ট্রীয় সেবক সমিতির ৫০০ সদস্যকে পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু একতার পক্ষে লড়াই  চালানোর জন্য তাদের আহ্বান জানান। সঙ্ঘের আরো বিকাশের স্বার্থেই যে বাংলার দুর্ভিক্ষের জন্য বাদাউন সংঘের রিলিফ সংগ্রহ এমন কথা বলা হয়েছে। এটিও বেশ তাতপর্যময়। (অন্য দিকে, আগস্টের শেষে রিপোর্ট পাওয়া গেল যে, নানান কারণে দিল্লি শাখা যেহেতু মহাসভার সঙ্গে একত্রে পরিচিত হতে চায়নি, সেকারণে শেষোক্ত সংগঠনটি সংঘের প্রতি একধরনের বৈরি মনোভাব পোষণ করত এবং তারা মহাসভা ভবনে প্রাত্যহিক কুচকাওয়াজের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিল’।  (সুত্রঃ – Towards Freedom : Documents on the movement for Indian Independence in India 1943-44, Part – III, Ed. Partha Sarathi Gupta, Indian Council for Historical research, Oxford Press, 1997, Page 3066)
দুটিই পরস্পর বিবাদমান পক্ষ এটা দেখাবার জন্য এইরকম কিছু বিছিন্ন পার্থক্যের উদাহারণ এখন নিয়ে আসা হচ্ছে। কাজেই সাভারকার আর আর এস এস- এর মধ্যে মতবিরোধ আর গডসে আর এস এসের মধ্যে ছিলোই না, এই মত প্রতিষ্ঠিত করার দরকার হয়ে পড়েছিল হিন্দুত্ববাদীদের। অম্লমধুর সম্পর্কের মতন  এই  যুদ্ধ ও মতবিরোধ তৈরি করার এক কৃত্তিম পরিবেশ তৈরী করার দরকার হয়ে পড়েছিল।

গ) ‘১৮ই মে, ১৯৪২ তারিখে আর এস এস সম্পর্কে গোয়েন্দা দপ্তরের টীকায় বলা হয়েছে ঃ এর ( আর এস এস) আসল উদ্দেশ্য হলো ‘হিন্দুদের জন্য হিন্দুস্থান’ দখল করা। আর এই উদ্দেশ্যে এস আকাঙ্খা হলো – সমস্ত হিন্দুদের একত্র করা, তাদের সামরিক উদ্যমে উদ্দীপ্ত করতে সামরিক শিক্ষণে শিক্ষিত করা, তাদের শরীর, তাদের চরিত্র গঠন করা এবং সর্বোপরি একটি শক্তিশালী হিন্দু সামরিক বাহিনী গঠন করা। শেষাবধি বৃটিশ এবং মুসলিম উভয়ের শাসন থেকে মুক্ত একটি স্বাধীন ভারতবর্ষ পাওয়াই এর লক্ষ্য। সংঘে অন্তর্ভূক্তির জন্য প্রত্যকটি প্রার্থীকে সংগঠনের পতাকাতলে দণ্ডায়মান হয়ে নিম্নলিখিত গোপন শপথ অবশ্য নিতে হয় । ‘সর্বশক্তিমান ইশ্বর এবং আমার পূর্বপুরুষদের সামনে একান্ত ভক্তিভরে আমি এই শপথ করছি যে আমার পবিত্র হিন্দু, হিন্দু সমাজ এবং হিন্দু সংস্কৃতিকে সম্পূর্ন অক্ষুন্ন রেখে হিন্দু রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীনতা অর্জন করতে আমি রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য হচ্ছি। সততায় এবং ব্যক্তিস্বার্থহীনভাবে আমরা কায়মনোবাক্যে সঙ্ঘের কাজ সম্পাদন করবো এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই শপথের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবো। জয়  বজরং-বলি- বলভীম- কি জয়’। ১৩ঐ নভেম্বর, ১৯৩৯ সালে ভি ডি সাভারকারের ভাই ডঃ এন ডী সাভারকার নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের ৩০০ স্বেচ্ছাসেবককে বলেন যে, হিন্দুবাদের শত্রু বৃটিশ সরকার, মুসলিম এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আর্য সমাজ এবং হিন্দুসভার সহযোগী মিত্র তারা।  গোটা ১৯৪০ সালে, বক্তারা অনবরত সংঘের সাম্প্রদায়িক চরিত্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ‘স্বরাজ’ পাবার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশিত মুসলিম আক্রমণের মোকাবিলা করতে একটি কার্যকর সম্ভাবনাময় শক্তি গড়ে তোলা এবং হিন্দুবাদকে রক্ষার লক্ষ্যটিতে বার বার গুরুত্ব আরোপ করেন



এম এস গোলওয়ালকার

১৯৪০  সালের নভেম্বর মাসে বোম্বাই প্রদেশে একটি সভাকে সম্বোধিত করে সংঘের বর্তমান প্রধান সংগঠক, প্রফেসর এম এস গোলওয়ালকার মহাসভার হিন্দু শাসনাধীন একটি অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্যান-হিন্দু তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত করেন।  নীতিঃ-  হিন্দু মহাসভার সংস্পর্শে সঙ্ঘের নীতি বেশ লক্ষণীয় মাত্রায় প্রভাবিত হয়। কোনো সংগঠনের নেতারাই যেহেতু প্রকাশ্যে তাদের পারস্পরিক সাহচর্যের কোনো উল্লেখ কখনো করেননি, তাই হিন্দু মহাসভা এবং আর এস এস পরস্পরের কতটা ঘনিষ্ট বন্ধনে যুক্ত সেটা সঠিকভাবে জানা নেই। যাইহোক, ভি ডি সাভারকার , ডঃ বি এস মুঞ্জের মতো হিন্দু মহাসভার নেতৃবর্গ সংঘের কাছ থেকে যেরকম শ্রদ্ধাসম্মান পেয়ে থাকেন, আর সংঘের সম্পর্কে জনসমক্ষে এইসব নেতৃবৃন্দ যেমন ঘোষনা করেন, তাতেই এটা বেশ পরিষ্কার। ডঃ হেডগেওয়ার যখন মারা যান, তখন হিন্দু মহাসভার সভাপতি হিসেবে ভি ডি সাভারকার ৩০ শে জুন, ১৯৪২ তারিখটি তাঁর সম্মানে শোকদিবস হিসেবে পালনের জন্য গোটা ভারতবর্ষের হিন্দুসভাগুলিকে নির্দেশ দিলেন। এটি বেশ তাতপর্যপূর্ণ। অতএব একথা স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, হিন্দু মহাসভার কোনো ঘোষিত নীতি সম্ভবত সংঘের নীতিকেও প্রভাবিত করবে।
১৯৩৯ সালে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদনে বলা হলো যে, সংঘের নেতৃবৃন্দ কয়েকবছরের জন্য প্রকাশ্যে কোনোরকমের রাজনৈতিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণের পক্ষে নয়। কেননা সময় আসার আগেই এ-ধরণের কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার অর্থ হলো সংগঠনের সমাপ্তি ডেকে আনা। গনতন্ত্রে তাদের কোনো বিশ্বাস নেই। তারা বিশ্বাস করে যে, কেবলমাত্র হিংসার পথেই স্বাধীনতা আনা সম্ভব...যদি ভবিষ্যতে – এ কোনো সময় সংঘ অথবা তার রাজনৈতিক সঙ্গী হিন্দু মহাসভা এমন কোনো নীতি অনুসরণ করার সিধান্ত নেয়, যাতে সরকারের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ডেকে আনতে পারে, সে সময়ের জন্য সংঘের নেতাদের হাতে কাজে লাগবার মতো বিপুল সংখ্যক সুশৃঙ্খলিত এবং সুশিক্ষিত সেনা অফিসার এবং সক্ষম মানুষের মজুত ভাণ্ডার থাকবে। কেননা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে শিক্ষণপ্রাপ্ত নতুন নতুন মুখের সংখ্যা ব্যাপখারেই বেড়ে চলেছে। ব্যায়াম, কুচকাওয়াজ এবং ইউনিফর্মের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞার প্রতি উপর্যুপরি অশ্রদ্ধা এবং মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক ঝঞ্ঝাটে নেমে পড়া ছাড়া সংঘের কাজকর্মের বিষয়ে বিশেষ আপত্তিকর কিছুই নেই।  কিন্ত  তার মধ্যে  সাংঘাতিক কিছু ঘটাবার সম্ভাবনা রয়ে গেছে এটা নিশ্চিত। কয়েকটি জায়গা থেকে এই মর্মে মতামত পাঠানো হয়েছে যে, সংঘের জাপান- ঘেঁষা প্রবণতা রয়েছে। এর পক্ষে নেহতই অল্প যুক্তি আছে এবং কোনোভাবেই তাতে বিশ্বাস করা যায় না। সর্ব্বভারতীয় হিন্দু মহাসভার সঙ্গে যোগসূত্রের সুবাদেই সংঘকে জাপানপন্থী বলে ধরা হচ্ছে, এই মুহুর্তে খুব বেশী হলে এই কথা বলা যেতে পারে। অবশ্য শেষোক্ত দলটি অর্থাৎ মহাসভা যদি এরকম কোনো কাজকর্মের উদ্যোগ নেয় কিংবা তাদের বিকশিত করে তোলে তবেই এমন হওয়া সম্ভব’।(সুত্রঃ – Towards Freedom : Documents on the movement for Indian Independence in India 1943-44, Part – III, Ed. Partha Sarathi Gupta, Indian Council for Historical research, Oxford Press, 1997, Page 3047-48, 50, 51)। মহাসভার বিভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনে এবং তার প্রয়োগে নানাবিধ অসংলগ্নতা প্রতীয়মান হয়। চল্লিশদশকের মাঝামাঝি সময়ে রাজনৈতিক ভাবে সাভারকার নিস্তেজ হয়ে পড়লো। ১৯৪৪ সালের ১লা আগস্ট ভারত সরকারের দপ্তরে রাজনৈতিক বিভাগের বড় কর্তা জন পার্সিভাল খাতায় লিপিবদ্ধ করলেন যে, ২৬ শে জুলাই, ১৯৪৪ ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রসচিব লিওপোল্ড এর আর্নিকে পাঠানো সাভারকারের কেবলটির ‘প্রাপ্তি স্বীকার করার কোনো প্রয়োজন বোধ তিনি করেননি’। ঐ কেবলটিতে দাবি করা হয়েছিলো যে, মহাসভা হলো ‘হিন্দুদের সর্বভারতীয়  প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংস্থা’। (সুত্রঃ – নিকোলাস মানসার্গ, দি ট্রান্সফার অফ পাওয়ার, ১৯৪২ – ১৯৪৭, M M S O, London, 4th Part, Page 1123)।  নিয়মিত সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে প্রভাব হারাতে বসা সাভারকার রাজনৈতিক মঞ্চে প্রাসঙ্গিক হবার আপ্রান প্রয়াস প্রতিভাত হয়  সাধারণের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য সাভারকার একটার পর একটা দ্রুউ বিবৃতি নজরে আসে। ১৯৪৪ সালে ১৪ঐ মে এমন এক বিবৃতিতে তিনি হিন্দুদের কস্তুরবা গান্ধী মেমোরিয়াল ফান্ডে কোনো অর্থ না দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর আত্মত্যাগকে তিনি ছোট করে দেখেন , সে কারণে নয়। কারণ একটাই, তাঁর স্বামীকে তিনি ঘৃণা করেন। ‘The proposal is definite in one point at any rate that it is to be handed over to Gandhiji. Consequently, it amounts to nothing but a new Congressite fund to fill up the empty pockets which once overflowed when the Tilak Fund poured in. The Congressites are welcome to contribute to this fund or any other fund which they like, But they should not dupe the people by putting on a false label and call it a national fund and spend it entirely in propagating the congress work which especially the Hindu Sanghatanists feel highly detrimental to Hindu interest and therefore inevitably to the truly national, interests as well. This particular Congress fund falsely labelled as Kasturba fund is bound to be spent directly and indirectly in propagating and popularising the ‘regional’ vivisection of India, perhaps especially among the women just as a large part of it will flow under-channel into the Moslem pockets as well as it is ostensibly reserved for the uplift of the Indian women. Under Gandhijis leadership the ahimsa, charkha, Hindu-Moslem unity and vote for the Congress can not but be the chief planks on which he wants women also to work orgonisedly. We can have positive proof of them in the ashrams conducted upto this time on those lines. Just as half of the Tilak-Swaraj fund to which the Tilakites. beguiled under the false label, contributed largely was spent in vilifying and exterminating the Tilakite principles and parties and nearly half of the sum went to-enrich the Moslem purse to drive the propaganda for “Khilafat” which as predicted by the Hindu sanghatanists proved a veritable ‘Afat’ for the Hindus, even so this fund labelled by the innocuous name as the Kasturba National fund will make the Tilakite and Hindu Sanghatanist millions all over India to curse the day they contributed to it.’ (সুত্রঃ –Historic Statements by Savarkar, Page 71, Internet version)। অর্থাৎ , ‘এক অর্থে প্রস্তাবটি নির্দিষ্ট, যে কোনোভাবেই সংগৃহীত অর্থ গান্ধীজীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। ফলত, নতুন কংগ্রেসী তহবিলের শূন্য পূরণ করা ছাড়া এর আর কোনো কাজই নেই। ঠিক যেমন তিলক তহবিলের সংগ্রহে তহবিল উপচে পড়েছিল। এই তহবিল কিংবা পছন্দমতো যে কোনো তহবিলে টাকা দেবার জন্য কংগ্রেসীদের স্বাগত জানাই। কিন্তু এর গায়ে একটা মিথ্যা তকমা এঁটে একে জাতীয় তহবিল বলে ঘোষণা করে, তারপর সব টাকা কংগ্রেসের কাজকর্ম প্রচারের জন্য খরচ করা এইভাবে জনগণকে বোকা বানাবার অধিকার তাদের নেই, বিশেষত যে কাজকে হিন্দু সংঘাবলম্বীরা হিন্দু স্বার্থের ক্ষতিকারক বলে মনে করে...গান্ধীজির নেতৃত্বে অহিংসা, চরকা, হিন্দু-মুসলিম একতা, কংগ্রেসী ভোট দেওয়া--- এসব আসলে বড়ো বড়ো একটা জুয়াচুরি ছাড়া আর কিছুই নয়। আসলে তিনি চান যে, মেয়েরাও সংগঠনের মধ্যে কাজ করবে। এই নীতিতে পরিচালিত এখনকার আশ্রমগুলিতেই তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে আছে। তিলক-স্বরাজ ছাপ লাগানো তহবিলের জমা-পড়া বিপুল টাকার অর্ধেক যেমন তিলকের নীতি এবং তাঁর মতানুসারী দলগুলির বিরুদ্ধে কুৎসা করার জন্য, তাদের শেষ করে দেবার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, যে ‘খিলাফত’ হিন্দু সংঘাবল্বীদের অনুমান মতোই হিন্দুদের পক্ষে একটি সত্যিকারের ‘আফত’ হিসেবে প্রমানিত হয়েছে, সেই খিলাফাতের প্রচার চালাবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মুসলিমদের পকেট বোঝাই করতে যেমন তহবিলের প্রায় বাকি অর্ধেক খরচ হলো, ঠিক তেমনি কস্তরবা জাতীয় তহবিলের নির্দোষ তকমা আঁটা এই তহবিলটির জন্য সারা ভারতের লক্ষ লক্ষ তিলকপন্থী এবং হিন্দু সংঘাবলম্বীরা ভবিষ্যৎ -এ যে দিনে তাঁরা টাকা দিয়েছেন সেই দিনটিকে অভিসম্পাত দেবেন’। এই মানসিক প্রতিফলন হচ্ছে নিম্ন রুচির রাজনৈতিক অসংলগ্নতার পরিচায়ক।  ইসরাইল প্রতিষ্টায় সাভারকার জয়ধ্বনি করলেন কারণ এই নয় যে ইহুদীদের তিনি ভালোবাসতেন আর আরবদের তিনি ঘৃণা করতেন। কারণ তার মতে সমগ্র আরব ভুখন্ড মানেই মুসলমান।  তাঁদের জনসংখ্যার বেশীরভাগ মানুষই মুসলমান। আরবের স্বার্থে বিশেষ করে করে সেখানকার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি, যেমন চার্লস এইচ মালিক, এডয়ার্ড সঈদ এবং হাসান আশরঙ্গি, যে সকলেই আরবের খৃষ্টান, সেটা সাভারকারের বিচারে আসে নি। তাতে তার কিছু এসে যায় না। ‘I am glad to note that the overwhelming majority of the leading nations in the world should have recognised the claim of the Jewish People to establish an Independent Jewish state, in Palestine and should have promised armed assistance to get it realised. After centuries of sufferings, sacrifices and struggle the Jews will soon recover their national Home in Palestine which has undoubtedly been their Fatherland and Holyland. Well may they compare this event to that glorious day in their history when Moses led them out of The Egyptian bondage and wilderness? and the promised land flowing with milk and honey came well within sight.... In justice, therefore, the whole of Palestine ought to have been restored to the Jews. But taking into consideration the conflict of self-interests of the powerful nations in the UNO, their support to the resuscitation of the Jewish State in a part of Palestine at any rate wherein they still happen to be in majority and which includes some of their prominent Holy Places constitutes an event of historical justice and importance.
It is consequently to be regretted that the delegation which represented our Hindusthani Government in the UNO should have voted against the creation of the Jewish State. The speeches of Shrimati Vijayalaxmi in particular were justly ridiculed when she declaimed melodramatically that the Indian Government refused to stab the unity and integrity of the Palestine State in the back by carving out a seperate Jewish State,—forgetting for the while that the very Indian Govern-ment had stabbed the unity and integrity of their own nation only the other day and gloated over it as an event for public jubilations!’ (সুত্রঃ – Historic Statements by Savarkar, Page 134-135, Internet version)
ক্রমাগত রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা হতে হতে সাভারকার তার বোধবুদ্ধি খুইয়ে বসলেন। সভারকারের অন্তর তিক্ততা, ঘৃণা ও বিদ্বেশে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। প্রধানত গান্ধিজি ছিলেন তাঁর কাছে সমস্ত রকমের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। গান্ধীজির বিরুদ্ধে তিক্ততার নিদর্শন হিসেবে গান্ধীজির ওপর নির্লজ্জ মিথ্যা অভিযোগের তকমা এঁটে দিয়েছিলেন। ‘Had not Gandhiji himself conspired with the Ali Brothers to invite an invasion by the Pathans and to enthrone the Amir of Afghanistan as the Emperor of India? Had he not declared again in the year 1940 in writing and repeated it now and then that if the Nizam subduing the Hindu Princes and with the support of Frontier tribes took Delhi and became the ruler of India that would be a perfect Home rule, a cent percent Swaraj? Thus a Pathani or a Nizami Moslem Raj is. to Gandhiji a cent per cent Swaraj। (সুত্রঃ-Historic Statements by Savarkar, Page 132, Internet version)। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ