রাণী ক্লিওপেট্রাকে না চিনলেও লিভারপুলের খেলোয়াড় সালাহকে সবাই চেনার কথা। দুজনেরই দেশ মিশর।
১০ লক্ষ ১ হাজার ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের(৩০ তম) দেশ মিশরের জনসংখ্যা দশ কোটির কাছাকাছি। এটি আয়তনে নিউ মেক্সিকোর চেয়ে সামান্য বড়।
শিকারি এবং মৎসজীবিরা নীলনদের তীরে প্রায় ৮ হাজার বছর আগে প্রথম বসতি গড়ে। তারা শস্য ফলাতে ও পশু পালন করতে জানত। নীল নদের তীরে প্রথম তারা গ্রামও শহর গড়ে তুলে। প্রতিবেশী এলাকার সাথে তারা বাণিজ্য শুরু করে এবং পালতোলা নৌকা বানায়।
খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে সেখানে সভ্যতা স্থাপিত হয়। নীল নদের তীরে খ্রীষ্টপূর্ব ৪০০০ সালে মিশরীয় সভ্যতার প্রথম সামাজ্যর উদ্ভব ঘটে।
মিশরীয় সভ্যতার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার লিপি বা অক্ষর আবিষ্কার। মিশরীয়রা ছাড়াও লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার করে সুমেরীয়, চাইনিজ ও মায়ানরা। নগর সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মিশরীয় লিখনপদ্ধতির উদ্ভব ঘটে।
পাঁচ হাজার বছর পূর্বে তারা সর্বপ্রথম ২৪টি ব্যঞ্জনবর্ণের বর্ণমালা আবিষ্কার করে।
শুরুতে তারা ছবির সাহায্যে মনের ভাব প্রকাশ করত। এটার নাম ছিল চিত্রলিপি। যাকে বলা হতো ‘হায়ারেগ্লিফিক’ বা পবিত্র অক্ষর।
পরে তারা নাল খাগড়া জাতীয় গাছের খণ্ড থেকে কাগজ বানাতে শেখে। সেই কাগজের উপর তারা লিখত। গ্রিকরা এই কাগজের নাম দেয় প্যাপিরাস। যে শব্দ থেকে ইংরেজিতে পেপার শব্দের উৎপত্তি।
প্রাচীন মিশরে বাড়ির মেয়ে ও স্ত্রীর ঋতুচক্রের সময় পুরুষ তাদের যত্ন নিত।মিশরের নারীরা সম্পত্তি কেনাবেচা, বিচারে দায়িত্ব পালন করতে পারত। সে কালে মিসরে ভাই-বোন বিয়ে প্রচলিত ছিল। মিশরের একজন মহিলা ৪৩ বছর পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করেন মেয়েকে বড় করার জন্যে।
তখন থেকেই আলগা চুল পরার প্রচলন শুরু হয়। গর্ভাবস্তার কথা তারা ৭০ শতাংশ নির্ভুলভাবে জানাতে পারতো। মহিলাদের কিছু বীজে প্রস্রাব করতে বলা হতো। সেই বীজ থেকে গাছ জন্মালে ধরে নেয়া হতো সে গর্ভবতী।
মিশরীয় সভ্যতা ছিল কৃষিনির্ভর ফলে নীল নদের প্লাবন, নব্যতা, পানিপ্রবাহের মাপ জোয়ারভাটা ইত্যাদি ছাড়াও জমির মাপ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
এর ফলে তারা জ্যোতিষশাস্ত্র ও অঙ্ক শাস্ত্রে আয়ত্ত্ব করেছিল। তারা অংক শাস্ত্রের দুটি শাখা জ্যামিতি এবং পাটিগণিতেরও প্রচলন করে।
তারা যোগ, বিয়োগ ও ভাগের ব্যবহার জানত। খ্রীষ্টপূর্ব ৪২০০ সালে প্রথম সৌর পঞ্জিকা আবিষ্কার করে তারা।
৩৬৫ দিনে বছর এ হিসাবের আবিষ্কারকও তারা। বার মাসের ব্যবহার শুরু করে প্রতিটা মাস ৩০ দিন ধরে। ৫ দিন রেখেছিল ছুটির দিন হিসেবে। সে হিসেবে বছর শেষ হতো ৩৬৫ দিন্।
সময় নির্ধারণের জন্য সূর্য ঘড়ি, ছায়াঘড়ি, জলঘড়ি আবিষ্কার করে। কলম, তালা ও টুথপেস্টও তাদের আবিষ্কার।
চোখ, দাঁত, পেটের রোগ নির্ণয় করতে জানত। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করার বিদ্যাও তাদের জানা ছিল। তারা হাড় জোড়া লাগানো, হৃৎপিণ্ডের গতি এবং নাড়ির স্পন্দন নির্ণয় করতে পারত।
মদ এক সময় জাতীয় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেই যুগের সমাধিতে টয়লেটের সন্ধান পাওয়া গেছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো জামা পাওয়া গেছে মিশরে যেটি পাওয়া ৫ হাজার বছরের পুরোনো। তখন তারা পাথরের তৈরি বালিশে ঘুমাত।
বিয়ের রিং বিনিময়ের প্রথা শুরু করেছিল তারা।
eracleion শহরটি ১২০০ বছর পর সমুদ্রের নিচে আবিষ্কার করা হয়।
কোন বিড়াল হত্যা করা হলে হোক সেটা ভুলক্রমে ওই ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হতো।
২২০০ বছর আগে Eratosthenes পৃথিবী পরিধি অনুমান করেছিলেন মিশর থেকেই। তার এই পরিমাপ উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভুল ছিল। পরবর্তীতে Christopher Columbus তার ব্যাপারে পড়াশোনা করেন।
অধিকাংশ মিশরীয় সম্রাটদের অতিরিক্ত ওজন ছিল।
পৃথিবীর সর্বপ্রথম কৃত্রিম অঙ্গ(কাঠের আঙুল) ব্যবহার করেন মিশরের একজন মহিলা। অভিজাত মিশরীয় চুলের ভাঁজ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে মাথা নয় ঘাড় ঠেকিয়ে ঘুমাত।
অনেকেরই রাতে বিছানো ভেজানোর অভ্যেস আছে। সেটার সমাধান হিসেবে মিশরীয় কৃষকরা ইঁদুরের হাড়কে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করত।
কোন কুকর মারা গেলে সেটাকে সম্মান জানানোর অংশ হিসেবে তখন চোখের ভ্রু কেটে ফেলত তারা।
বিষ্ঠা দেখে মানুষের ভাগ্য বলে দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিল।
ল্যুভর মিউজিয়ামের সামনে গ্লাসের যে পিরামিডটি আছে সেটি মিশরের পিরামিডের সম্মানে তৈরি করা।
পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো মৃত্যু পরোয়ানা দেয়া হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ সালে। এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে জাদু বিদ্য চর্চার অভিযোগে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়।
তারা মনে করত ঘরে কুকর রাখা পবিত্রতা এবংএতে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়।
তখন মহিলা ও পুরুষ উভয়ই রুপচর্চার প্রসাধনী ব্যবহার করত লেদ, কপার দিয়ে মেকআপ তৈরি করত।
স্টাচু অফ লিবার্টি প্রথমে মিশরের জন্যেই তৈরি করার কথা ছিল পরে সরকারের সমর্থন না পাওয়াতে সেটা চলে যায় আমেরিকায়।
প্রচলিত আছে পিরামিড দাস দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু আধুনিক গবেষকরা জানিয়েছেন পিরামিড কোন দাস দ্বারা নির্মাণ করা হয়নি। নিয়মিত শ্রমিকরাই কাজ করেছিল।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিরামিড মিশরে নয় মেক্সিকোতে। মিসরের গাজা পিরামিডে অসংখ্যা গোপন সুড়ঙ্গ পথ আছে যেগুলো এখনো পাওয়া যয়নি।
মিসর পিরামিডের জন্যে পরিচিত হলেও মিসরের চেয়ে বেশি পিরামিড আছে সুদানে। সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে প্রাচীন গির্জার খুফুর পিরামিড পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তমাশ্চর্যের একটি।
এ পর্যন্ত মিশরে ১৩০ টি পিরামিড আবিষ্কৃত হয়েছে। Pyramid of Khufu at Giza সবচেয়ে বড় পিরামিড এবং এটি ১৬টি Empire State building এর সমান।
তারা Mercury, Venus, Saturn, Mars, and Jupiter এই গ্রহগুলো নাম জানত তারা বলত Set , (Mercury), “god of the morning” (Venus), “bull of the sky” (Saturn), “Horus the red” or “Horus of the horizon” (Mars), and “Horus who limits the Two Lands” (Jupiter).
মিশরীয়রা জড়বস্তুর পূজা করত, মূর্তি পূজা করত, আবার জীবজন্তুর পূজাও করত। মিশরীয়দের ধারণা ছিল, সূর্যদেবতা ‘রে’ বা ‘আমন রে’ এবং প্রাকৃতিক শক্তি, শস্য নীলনদের দেবতা ওসিরিস মিলিতভাবে সমগ্র পৃথিবী পরিচালিত করেন।
তারা সমাধি আর মন্দিরের দেয়াল সাজাতে গিয়ে চিত্রশিল্পের সূচনা করে। তাদের প্রিয় রং ছিল সাদা-কালো।
মিসরকে এক সময় বলা হত মধ্যপ্রাচ্যের হলিউড। বর্তমানে সিনেমাতে কোন রোমান্টিক দৃশ্যধারণে অলিখিত বাধা রয়েছে।
মিশরের রাজধানী কায়রোকে বলা হচ্ছে মেয়েদের জন্য 'সবচেয়ে বিপজ্জনক' শহর।
২০১৫ এর আগে মিশরের সব প্রেসিডেন্ট হয় অফিসে থাকাকালে মৃত্যুবরণ করেছেন নয়ত আটক হয়েছেন। আরব দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র মিশরেই ফিল্ম ইন্ড্রাস্টি আছে।
প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বার করত ঈশ্বরের কান্নার কারণে নীল নদ প্রাবিত হয় ফলে বন্যা হয়। এ উপলক্ষ্যে Night of the Tear Drop নামে একটি অনুষ্ঠান পালন করত তারা। প্রাচীন মিশরীয়রা প্রায় ১৪,৩০০ দেব-দেবীর পুজা করত।
নীল নদ নিয়ে রসিকতার করায় শিরিন আবদেল ওয়াহাব নামে আরব বিশ্বে পরিচিত একজন তারকা শিল্পীকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে।
মিশরের নীল নদের উৎপত্তি আফ্রিকার লেক ভিক্টোরিয়া থেকে। সেখান থেকে নদটি নানা দেশ হয়ে মিশরের মধ্য দিয়ে ভূ-মধ্যসাগরে এসে পড়েছে।
প্রাচীন মিশরের ভাষায় এর নাম ছিল "কমেট" (km.t) বা কালো মাটির দেশ। নীল নদের বন্যার সাথে বয়ে আনা উর্বর কালো মাটি যা মরুভূমির মাটি "deshret" (dšṛt) অথবা "লাল জমি" থেকে আলাদা।
ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস বলেছেন, মিশর নীল নদের দান। নীল নদ না থাকলে মিশর মরুভূমিতে পরিণত হতো। প্রাচীনকালে প্রতিবছর নীল নদে বন্যা হতো।বন্যার পর পানি সরে গেলে দুই তীরে পলিমাটি পড়ে জমি উর্বর হয়ে যেত। জমে থাকা পলিমাটিতে জন্মাতো নানা ধরনের ফসল।
নীল নদ পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ নদীগুলোর একটি। নীল নদের আয়তন ৬৬৭০ কিলোমিটার।
মিশর উত্তর আফ্রিকার একটি প্রাচীন রাষ্ট্র। ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত এই দেশ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এর উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে লোহিত সাগর, পশ্চিমে সাহারা মরুভূমি, দক্ষিণে সুদান ও অন্যান্য আফ্রিকার দেশ। গাজা, সুদান ও লিবিয়া এবং ঈসরাইলের সাথে সীমান্ত আছে।
মিশর ও সুদানের সীমান্তে ২০৬০ কিলোমিটার ভূমি আছে আছে যেটা কেউই দাবি করে না।
সুয়েজ খাল ভূমধ্যসাগর ও ভারত মহাসাগরকে যুক্ত করেছে
মধ্যপ্রাচের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ এবং আরব জনসংখ্যায় মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় দেশ।
মিশরের ৯৩ শতাংশ এলাকা মরুভুমি।
মিসর আরবি শব্দ, যার মানে সরকার ও আইন-কানুন বিশিষ্ট রাষ্ট্র। পবিত্র কুরআন ইজিপ্টকে মিসর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। মধ্যপ্রাচের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ এবং আরব জনসংখ্যায় মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় দেশ।
আরবি ভাষা মিশরের সরকারি ভাষা। মিশরের জনগণেরর অধিকাংশই আরবি ভাষাতে কথা বলে। মিশরে আরবি ভাষার বেশ কিছু স্থানীয় কথ্য উপভাষা প্রচলিত। মিশরের জিপসি সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধেক লোক জিপসি দোমারি ভাষাতে কথা বলেন। এছাড়াও এখানে আর্মেনীয় ভাষা, গ্রিক ভাষা এবং নীল নুবীয় ভাষা প্রচলিত। কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে সীমিত পরিমাণে কপ্টীয় ভাষা ব্যবহার করা হয়।
কায়রো দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। কায়রো আফ্রিকার সবচেয়ে বড় শহরগুলোর একটি।
মাথাপিছু আয় ১১, ১১০ মার্কিন ডলার। । Egyptian pound (EGP) হলো মুদ্রার নাম। মিশরে ইউনেস্কো ঘোষিত সাতটি বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে। প্রান্তর ঈগল মিশরের জাতীয় প্রাণী।
উত্তর আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে নীল নদের নিন্মভূমিতে গড়ে উঠে মিশরীয় সভ্যতা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১৫০ অব্দ নাগাদ প্রথম ফারাওয়ের অধীনে উচ্চ ও নিম্ন মিশরের রাজনৈতিক একত্রীকরণ হলে এই সভ্যতা সুসংহত হয়। এরপর তিন সহস্রাব্দ কাল ধরে চলে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার বিকাশপর্ব। মিশরের শাসকগোষ্ঠীককে বলা হতো ফেরাউন।
মিশরীয় সভ্যতা ২৫০০ বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে স্থায়ী হয়েছিল। মিশরীয় সভ্যতার গোড়াপত্তন হয় মেনেসের নেতৃত্বে, প্রায় তিন হাজার বছর ধরে টিকে ছিল।
খ্রীষ্টপূর্ব ১০ শতকে লিবিয়ার এক বর্বর জাতি ফারাওদের সিংহাসন দখল করে নেয়।
খ্রীষ্টপূর্ব ৬৭০-৬৬২ অ্যাসিরীয়া মিশরে আধিপত্য বিস্তার করে। খ্রিঃপূর্বঃ ৫২৫ পারস্য মিশর দখল করে নিলে প্রাচীন মিশরের সভ্যতার সূর্য অস্তমিত হয়।
খ্রীষ্টপূর্ব ৩২০০ প্রাক-রাজবংশীয় যুগে মিশর কতগুলো ছোট ছোট নগর রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিল। এগুলোকে নোম বলা হতো। মিশরের প্রথম রাজা বা ফারাও (মেনেস বা নারমার) সমগ্র মিশরকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। রাজধানী ছিল দক্ষিণ মিশরের মেম্ফিসে তখন থেকে মিশরে ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র ও রাজবংশের উদ্ভব। মিশরীয় ‘পের-ও’ শব্দ থেকে ফারাও শব্দের জন্ম।
ফারাওরা ছিল অত্যন্ত ক্ষমতাশালী। তারা নিজেদেরকে সূর্য দেবতার বংশধর মনে করতেন। ফারাও পদটি ছিল বংশানুক্রমিক। অর্থাৎ ফারাওয়ের ছেলে হতো উত্তরাধিকার সূত্রে ফারাও। খ্রিষ্টপূর্ব ৩১ অব্দে আদি রোমান সাম্রাজ্য মিশর অধিকার করে এই দেশকে একটি রোমান প্রদেশে পরিণত করলে ফারাওদের শাসন আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত হয়।
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নারী শাসক ক্লিওপেট্রার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৬৯ সালে প্রাচীন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায়। তাকে নিয়ে গল্প-কবিতা-উপন্যাসের পাশাপাশি নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রও যেমন, উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘অ্যান্টনি অ্যান্ড কিওপেট্রা’, জর্জ বার্নাড শর ‘সিজার কিওপেট্রা’, জন ড্রাইডেনের ‘অল ফর লাভ’, হেনরি হ্যাগার্ডের ‘ক্লিওপেট্রা’।
মেসিডোনিয়ান বংশোদ্ভূত সপ্তম মিসরীয় রানী হওয়ায় তাকে বলা হতো ক্লিওপেট্রা সপ্তম। খ্রিস্টপূর্ব ৫১ অব্দে রোম সম্রাট টলেমি অলেতিস মারা গেলে তার বিশাল সাম্রাজ্য ১৮ বছর বয়সী কন্যা ক্লিওপেট্রা ও ১৮ বছর বয়সী পুত্র টলোমকে উইল করে দিয়ে যান। তখনকার মিসরীয় আইন অনুসারে দ্বৈত শাসনের নিয়মে রানী ক্লিওপেট্রার একজন নিজস্ব সঙ্গী থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কাজেই ক্লিওপেট্রাকে বিয়ে করতে হয় তারই ছোটভাই টলেমিকে, তখন টলেমির বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর। এরই মধ্যে ৪৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ফারসালুসের যুদ্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাপতি পম্পে পরাজিত হলেন। সে বছরই আলেকজান্দ্রিয়ায় ফেরার পথে ফারসালুসের হাতে নিহত হন। যুদ্ধ থেকে পালাতে গিয়ে ক্লিওপেট্রার স্বামী ও ভাই টলেমি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর ক্লিওপেট্রা হয়ে ওঠেন মিশরের একচ্ছত্র রানী।
ক্লিওপেট্রার রূপ-লাবণ্যের কথা শুনে রোম থেকে চলে আসেন বীর অ্যান্টনি। অবশ্য কারও কারও মতে মিসর আক্রমণ করতে এসে ক্লিওপেট্রার প্রেমে পড়ে যান রোমান বীর অ্যান্টনি। শক্তিশালী রোমান বীর ক্লিওপেট্রার প্রেমে কাবু হলেন। রাণী তখন একটি সঙ্গীই নয়, বরং তার সিংহাসন রক্ষায় এক পরাক্রমশালী বীরের সমর্থন পেয়ে গেলেন।অ্যান্টানিও বিবাহিত ছিলেন । তার পত্নী ফুলভিয়ার মৃত্যু এবং পম্পের বিদ্রোহ ঘোষণা এলোমেলো করে দিল বীর অ্যান্টনির সুবর্ণ সময়কে। তখন গৃহযুদ্ধে রীতিমতো বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো রোম।
এর মধ্যেই ক্লিওপেট্রার জীবনে আবির্ভাব ঘটে মধ্যবয়সী বীর জুলিয়াস সিজারের। এলোমেলো মুহূর্তে সিজারকেও আকড়ে ধরেন ক্লিওপেট্রা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একসময় অসহায় অ্যান্টনি আত্মহত্যা করেন। মাত্র ৩৯ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন ক্লিওপেট্রা।
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে বিভিন্ন বিদেশী শক্তি দেশটি দখল করে এবং এখানে নতুন নতুন ধর্ম ও ভাষার প্রবর্তন করে। চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকের দিকে খ্রীষ্ট ধর্ম ছিল এখানে প্রধান ধর্ম।
৬৪১ সালে আরব মুসলিম আক্রমণকারীরা মিশর দখল করে। মহানবী (সা) তাঁর জীবদ্দশায় মিশর ও আলকজানিন্দ্রায় রোমক শাসনকর্তা বাদশাহ জুরায়হ মকুকাশ ইবনে ইয়ামিনকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়ে একটি পত্র প্রেরণ করেন।
তখন থেকেই মিশর মুসলিম ও আরব বিশ্বের একটি অংশ। খ্রিস্টপূর্ব ৫২৫ সালের দিকে পারস্য আক্রমণকারীরা মিশর দখল করে ফেলে এবং মেমফিসের উত্তরে ব্যাবিলন-অন-দ্যা-নাইল দুর্গ স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২ সাল পর্যন্ত এখান থেকেই তারা মিশর শাসন করে। এর পর আলেক্সান্ডার দখল করেন মিশর। তার সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে স্থাপিত হয় আলেক্সান্দ্রিয়া এবং ব্যাবিলনের গুরুত্ব কমে যায়।
আধুনিক মিশরের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী। দেশটি যখন উসমানীয় সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছিল, তখন ১৮০৫ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির বড়লাট ছিলেন। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ সেনারা মিশর দখল করে। এরপর প্রায় ৪০ বছর মিশর ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল।
১৯২২ সালে দেশটি একটি রাজতন্ত্র হিসেবে স্বাধীনতা অর্জন করলেও ব্রিটিশ সেনারা মিশরে থেকে যায়। ১৯৫২ সালে জামাল আব্দেল নাসের-এর নেতৃত্বে একদল সামরিক অফিসার রাজতন্ত্র উৎখাত করে এবং একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে মিশর প্রতিষ্ঠা করে। নাসের ১৯৫৬ সালের মধ্যে মিশর থেকে সমস্ত ব্রিটিশ সেনাকে সরিয়ে দেন। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি আনওয়ার আল-সাদাতের নেতৃত্বে মিশর প্রথম জাতি হিসেবে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত প্রথম আরব দেশ হিসেবে ১৯৭৯ সালে ঈসরাইলের সাথে শান্তিচুক্তি করে নোবেল পুরস্কার জিতেন। পরবর্তীতে সাদাত হত্যার শিকার হন এবং মিশরকে আরব লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সিসি বর্তমানে শাসন করছেন। শাসনের নমুনা হিসেবে্ একটা তথ্য যুক্ত করা যেতে পারে।
মিশরের একটি মানবাধিকার সংগঠন জানাচ্ছে, সেদেশে গত চার বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৫০০ লোক নিখোঁজ হয়েছে বলে তাদের কাছে দলিলপত্র আছে। কিন্তু তাদের মতে আসল সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
0 মন্তব্যসমূহ