১) সমস্ত সৃষ্টির পিছনে যদি একজন সৃষ্টিকর্তার হাত থাকে, স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি যদি অসম্ভব হয়, তাহলে ভগবানের স্রষ্টা কে?
২) ভগবান স্থান (space) ও সময় (time) সৃষ্টি করেছেন কোন স্থানে বসে এবং কোন সময়ে?
৩) ঈশ্বর কি সাকার না নিরাকার? এক্ষেত্রে কোন ধর্মের কথা মানবো এবং কেন?
৪) যদি নিরাকার হন, তাহলে প্রায় সমস্ত ধর্মেই ঈশ্বরকে 'পুরুষ' বলে মনে করা হয় কেন? 'পিতা' সম্ভাষণ করা হয় কেন? নিরাকারের কি কোনো লিঙ্গ পরিচয় সম্ভব?
৫) যদি সাকার হন, তাহলে বিভিন্ন ধর্ম যারা ঈশ্বরকে সাকার বলে মানে, তাদের একের বর্ণিত ঈশ্বরের চেহারার সাথে অন্য ধর্মে বর্ণিত ঈশ্বরের চেহারার বিন্দুমাত্র মিল নেই কেন? উদাহরণ হিসাবে হিন্দু ও গ্রীক দেবদেবীদের একটা তুলনামূলক আলোচনা তুলে ধরা যাক। ভারতীয় দেবদেবীরা চেহারা, পোশাক, ভাষায় পুরোপুরি ভারতীয়, আবার গ্রীক দেবদেবীরা চেহারা, পোশাক, ভাষায় পুরোপুরি গ্রীক। ভারতীয় সব দেবদেবীদের চুলের রঙ ভারতীয়দের মতই কালো, আবার গ্রীক দেবদেবীদের চুলের রঙ গ্রীকদের মতই বাদামী। ভারতীয় দেবীরা ভারতীয় মহিলাদের পোশাক শাড়ি পড়েন, আবার গ্রীক দেবীরা ঝুলওয়ালা গাউন পরেন। কেন? কেন ভারতীয় দেবীদের পরণে গাউন আর গ্রীক দেবীদের পরণে শাড়ি নেই? কেন গ্রীক দেবতাদের চুল কালো এবং ভারতীয় দেবতাদের চুল বাদামী নয়? অনান্য ধর্ম সম্পর্কেও একথা খাটে। গ্রীক দেবরাজ জিউস কেন অলিম্পাস পর্বতে এবং শিব কেন কৈলাস পর্বতে থাকেন? মাঝে মধ্যে একে অন্যের জায়গায় ঘুরতেও কেন যান না?
৬) সমস্ত হিন্দু ধর্মের অবতাররা বেছে বেছে ভারতেই জন্ম নিলো কেন? পৃথিবীতে আর দেশ ছিলো না? তারা ভগবান মানতো না? নাকি ভারতই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ ছিলো বরাবর? তাই বারেবারে এই অবতারজন্ম গ্রহন? অনান্যরা ধোয়া তুলসীপাতা ছিলো? আবার, সমস্ত পয়গম্বররা আরবেই জন্ম নিলো কেন বেছে বেছে? অন্য জায়গায় মানুষ থাকতো না?
৭) আজ থেকে অত হাজার হাজার বছর আগে, যখন স্বাভাবিক ভাবেই সহজ সরল জীবনযাত্রার কারণে দূর্নীতি আজকের থেকে অনেক কম ছিলো, তখন ভগবান এতবার জন্ম নিলেন। অথচ আজকের এই ভয়ংকর দুর্নীতি, অবক্ষয়ের যুগেও ভগবান জন্ম নিচ্ছেন না কেন? যখন ইথিওপিয়া থেকে কালাহান্ডি দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাসে ধুঁকছে, না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ, যখন কর্পোরেট কোম্পানীগুলো জল জমি জঙ্গল দখল করে কারখানা তৈরী করছে, যখন মণিপুর, কাশ্মীর, গুয়াতেমালা বা মায়ানমারে সামরিক বাহিনীর হাতে বারংবার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তখন ভগবান কোথায় থাকেন? কেন একবার অবতার হিসাবে জন্ম নিয়ে এর প্রতিকার করার প্রয়োজন মনে করেন না?
৮) ভারতীয়রা সরস্বতী পুজা করে ধুমধাম করে, অথচ ভারতেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী নিরক্ষর মানুষ বাস করে। আবার বছর বছর লক্ষ্মীপুজো করেও পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলির একটা হল ভারত। অন্যদিকে সরস্বতী বা লক্ষ্মীপুজা না করেও পাশ্চাত্যের দেশগুলি আমাদের চেয়ে সম্পদবান, শিক্ষার হার আমাদের চেয়ে অনেক বেশী। কেন?
৯) বিশ্বজগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে এক এক ধর্ম এক একরকম বর্ণনা দিয়েছে, এবং তাদের কারো সাথে কারো বর্ণনা মেলে না। এদের যেকোনো একটাকে বিশ্বাস করতে গেলে বাকিগুলিকে অবিশ্বাস করতে হয়। কেন? এদের মধ্যে কোনটাকে আমি ঠিক বলে ধরব এবং কিসের ভিত্তিতে ধরবো?
১০) কেন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বিশ্বসৃষ্টির তত্ত্বের সাথে বিজ্ঞানের বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব বিন্দুমাত্র মেলে না? বিজ্ঞান যে ব্যাখ্যা দেয় তার পিছনে যুক্তি ও প্রমান হাজির করে। ধর্মের বিশ্বতত্ত্ব সৃষ্টির পিছনে কোন প্রমান হাজির করা গেছে আজ অবধি?
১১) বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলি পড়লে একথাই মনে হয় যে ভগবান সরাসরি মানুষ, বিভিন্ন পশুপাখি, গাছপালা ইত্যাদিকে তাদের বর্তমান আকৃতিতে সৃষ্টি করে গেছেন। অথচ আমরা জানি তা সত্য নয়। বিবর্তনের পথ ধরে দীর্ঘ পথ হাঁটার পরে সমস্ত পশুপাখি, গাছপালা তাদের বর্তমান চেহারা পেয়েছে। পূর্বে এদের চেহারা সম্পূর্ণ অন্যপ্রকার ছিলো। এর কোনো উল্লেখ কোনো ধর্মগ্রন্থেই নেই কেন? বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে 'ভগবান মানুষ সৃষ্টি করলেন' বা 'ভগবান বাঘ সৃষ্টি করলেন' জাতীয় কথা থাকলেও 'ভগবান অ্যামিবা সৃষ্টি করলেন' বা 'ভিব্রিও কলেরি সৃষ্টি করলেন' জাতীয় কোনো কথা নেই কেন? কেন কোনো ধর্মগ্রন্থেই নেই ভগবানের 'ডাইনোসর' সৃষ্টির কথা? যারা ধর্মগ্রন্থগুলো লিখেছিলেন তারা না হয় পুরানো দিনের মানুষ, তখনও বিজ্ঞান বা প্রত্নতত্ত্ব এত অগ্রসর হয় নি, অণুবীক্ষণযন্ত্রও আবিষ্কার হয় নি, তাই এদের অস্তিত্বের কথা জানতো না। কিন্তু ভগবান তো জানতেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ। এদের সতর্ক করেন নি কেন?
১২) যে ধর্ম যে অঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে, সেই ধর্মের ধর্মগ্রন্থের সৃষ্টিতত্ত্বে শুধু সেই অঞ্চলের স্থানীয় পশুপাখি, গাছপালার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কেন হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন গাছপালা পশুপাখি ভগবানের সৃষ্টি বলে লেখা থাকলেও লেখা নেই 'ভগবান ক্যাঙ্গারু সৃষ্টি করলেন' বা আরবদের ধর্মে অনান্য পশুপাখির কথা লেখা থাকলেও লেখা নেই 'ভগবান উটপাখি তৈরী করলেন' জাতীয় কথা? হিন্দুরা সেইযুগে ক্যাঙ্গারুর বা আরবরা উটপাখির অস্তিত্বের কথা জানতেন না, যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়নের কারণে সেইসময়কার মানুষের ভৌগলিক জ্ঞান সীমাবদ্ধ ছিলো। ঠিক আছে। কিন্তু ভগবান তো জানতেন। কেন তাদের সংশোধন করে দেন নি?
১৩) স্বর্গ এবং নরক জায়গাগুলো ঠিক কোথায়? আজ বিজ্ঞান বহুগুন উন্নত হয়েছে। কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের জিনিষও আজ আমরা অতিশক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্তের কল্যানে দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু স্বর্গ বা নরকটা ঠিক কোনখানে অবস্থিত? পৃথিবী আর মঙ্গলের মাঝখানে, নাকি বৃহষ্পতি আর শনির মাঝখানে, নাকি এই সৌরজগতের বাইরে কোথাও? যদি বাইরে হয়, তাহলে ঠিক কোনখানে? জায়গাটির আয়তন কত? সেটা কি কোনো গ্রহ? সেখানে দিন রাত হয় শুনেছি। তারমানে কোনো গ্রহেই অবস্থিত স্বর্গ নরক। তা কোন নক্ষত্র সেখানে বিরাজ করছে, যার চারপাশে স্বর্গ বা নরক নামক গ্রহগুলি ঘুরছে? সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর চেয়ে বেশী না কম? বেশী কম হলে কতগুন বেশী বা কম? সেখানে কটি মহাদেশ বা মহাসাগর আছে?
১৪) সমস্ত ধর্মেই নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নানা তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা সূচক উক্তি ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে। কেন? ভগবানও কি তবে পুরুষতান্ত্রিকতার শিকার?
১৫) জীবহত্যায় পাপ হয় না পুন্য হয়? এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান পরিষ্কার করুন। কারণ এক এক ধর্মে এ ব্যাপারে এক এক প্রকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মানুষ বিভ্রান্ত হতে বাধ্য।
১৬) মানুষ বা অনান্য প্রাণীরা নাকি পূর্বজন্মের কর্মফল অনুসারে এ জন্মে জন্মগ্রহন করে। অর্থাৎ পূর্বজন্মে ভালো কাজ করলে এ জন্মে মানুষ হয়ে জন্মাবে বা মানুষ হয়ে জন্মে খারাপ কাজ করলে পরবর্তী জন্মে পশু হয়ে জন্মাবে ইত্যাদি। তা পূর্বজন্ম পূর্বজন্ম করে পিছাতে পিছাতে পৃথিবীতে প্রথম যে প্রাণের উন্মেষ ঘটেছিলো, সেটি তার কোন পূর্বজন্মের কর্মফলে পৃথিবীতে এসেছিলো? আর তাছাড়া মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রানীর তো ন্যায় অন্যায় বোধই নেই। তাদের পাপপূন্য নির্নয় হয় কিভাবে? কিভাবে নির্ণয় করবেন আমার বাড়ির সজনে গাছটার পাপপূণ্যের খতিয়ান?
এবার রইলো আস্তিকদের সম্ভাব্য কিছু মন্তব্য ও তার জবাব
১) বহু বিশিষ্ট মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন নিউটন, রবীন্দ্রনাথ ঠকুর থেকে আব্দুল কালামের মত প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিরা। তারা সবাই ভুল করেছেন? আপনি একা খালি ঠিক?
উত্তর- রবীন্দ্রনাথ থেকে আবদুল কালাম, এদের ঈশ্বরবিশ্বাস কখনোই ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রমান করে না। এ থেকে এটুকুই প্রমানিত হয় তারা এই কাল্পনিক শক্তিতে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু বিজ্ঞানের কাছে ব্যক্তিবিশ্বাসের কানাকড়িও মূল্য নেই, যতক্ষন না তা প্রমাণিত হচ্ছে। এই কারণেই কয়েকশো বছর ধরে কিংবদন্তী বৈজ্ঞানিক হিসাবে পূজিত নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্বকে বাতিল করে আইনষ্টাইন নামের এক অজ্ঞাতকূলশীল (সেই সময়) যুবকের আপেক্ষিকবাদ কে আপন করে নিয়েছে বিজ্ঞান। ডালটনের পরমাণুবাদ পরবর্তীকালে পৃথিবী বাতিল করে দিয়েছে, পালটা যুক্তি প্রমানের কাছে তাদের তত্ত্ব হেরে গেছে বলে। 'নিউটন বা ডালটন কিংবদন্তী বৈজ্ঞানিক, অতএব তিনি যাহা বলিবেন তাহাই ধ্রুব সত্য' এই বলে বিজ্ঞান বসে থাকে নি। এভাবেই বিজ্ঞান সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে তোলে। কোপার্নিকাস থেকে গ্যালিলিও মনে করতেন পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে বৃত্তাকার পথে ঘোরে, কিন্তু পরবর্তীকালে কেপলার প্রমান করেছিলেন তারা ঘোরে উপবৃত্তাকার পথে। বিজ্ঞান কোপার্নিকাস গ্যালিলিওর তত্ত্বকে বাতিল করে কেপলারের তত্ত্বকে গ্রহন করেছে। কাজেই ব্যক্তিবিশ্বাস দিয়ে কিচ্ছু প্রমাণিত হয় না। আজ যদি প্রমাণিত হয় রবীন্দ্রনাথ বউকে ধরে পেটাতেন (কথার কথা), তাহলে আমরাও কি চোখ বুজে তাই আদর্শ ধরে নিয়ে যে যার বউকে পেটাতে শুরু করবো? এরকম অন্ধ গুরুবাদী মানসিকতা হলে তো মুশকিল!
২) সমস্ত ধর্মেই ঈশ্বর বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে। ঈশ্বর যদি নাই থাকবেন তাহলে এরা প্রত্যেকেই এক কথা বলেছে কেন?
উত্তর- হীনযান বৌদ্ধধর্ম ছাড়া সমস্ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মই ঈশ্বরবিশ্বাসী। যদিও তাদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য, এমনকি নিজেদের মধ্যেই অনেক স্ববিরোধিতা আছে। কিন্তু তাতেও কিচ্ছু কাঁচকলা প্রমাণিত হয় না। প্রতিটি ধর্মই অমানবিক অজস্র নির্দেশে ভরপুর। ইসলামে আছে স্ত্রীকে বেত্রাঘাত করার বিধান, স্ত্রীকে বর্ণনা করা হয়েছে স্বামীর শস্যক্ষেত্র হিসাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। একই ধরনের বহু খারাপ কথা নারী ও শুদ্রদের সম্পর্কে বলা হয়েছে হিন্দুধর্মেও। সেখানে নারীকে বিষাক্ত সাপের সাথে তুলনা করা হয়েছে। তারা প্রকৃতিগতভাবে চরিত্রহীনা বলা হয়েছে। শূদ্ররা বেদপাঠ শুনলে কানে গরম সীসা ঢেলে দেবার বিধান রয়েছে। তা থেকে কচুপোড়া কিছু প্রমান হয় কি? নাকি 'যেহেতু ধর্মে রয়েছে অতএব তা মান্য' ধরে নিয়ে এগুলোও আমরা ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করা শুরু করবো?
৩) ধর্মবিশ্বাসী মাত্রেই মৌলবাদী নন। অনেকেই আছেন নিজের ধর্মে আস্থাশীল থেকেও অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
উত্তর- ধর্ম বিশ্বাসী মানেই ISIS বা RSS এটাও কোথাও বলে নি কোনো নাস্তিক। এটা যারা বলেন তারা নিজের ধর্মের মৌলবাদে আকন্ঠ নিমজ্জিত। মৌলবাদীদের বলা কথা নাস্তিকদের গায়ে সেঁটে দেবেন না।
৪) ঈশ্বরবিশ্বাস যদি 'ভুল' হবে, তাহলে আজও কেন পৃথিবীর কোটি কোটি লোক ঈশ্বরবিশ্বাসী? তারা সবাই ভুল? নাস্তিকদের সংখ্যা তো গুটিকয় মাত্র।
উত্তর- সারা পৃথিবীতেই ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। ইউরোপের অনেক দেশেই আজ নাস্তিকরা মোট জনসংখ্যার ৫০% এরও বেশী। একটু দয়া করে গুগল করে দেখে নিন। কিন্তু সেটা যদি নাও হত, পৃথিবীর ১০০% মানুষই যদি ঈশ্বরবিশ্বাসী হত তাতেও বা হাতিঘোড়া কিচ্ছু প্রমাণিত হত না। 'পৃথিবীর সব মানুষ স্বীকৃতি দেয়, অতএব তা সত্য' এটা বিজ্ঞানের কথা নয়। সত্য কখোনো সংখ্যা দিয়ে নির্ধারিত হয় না। একসময় গোটা পৃথিবীর মানুষ মনে করত পৃথিবী স্থির, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরপাক খায়। গ্যালিলিও প্রমান করেছিলেন তা ভুল। বিজ্ঞান সারা পৃথিবীর কথাকে না মেনে গ্যালিলিওর কথাকে মেনে নিয়েছিলো, কারণ তার পিছনে যুক্তি প্রমান ছিলো। একসময় সারা পৃথিবীর মানুষ মনে করত রোগের কারণ ভগবানের অভিশাপ। প্যারাসেলসাস প্রমাণ করেছিলেন রোগের কারণ জীবানু। বিজ্ঞান প্যারাসেলসাসের তত্ত্বকে গ্রহন করেছে, সারা পৃথিবীর তত্ত্বকে নয়। এরকম আরো অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায়। কাজেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে রাজনীতি চলতে পারে, বিজ্ঞান চলে না।
৫) বিজ্ঞান কি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে? সামান্য একটা এককোষী জীব তৈরী করেও কি বিজ্ঞান দেখাতে পারবে? পারবে না। ঈশ্বরের অস্তিত্বকে শেষ অবধি স্বীকার করতেই হবে।
উত্তর- ধরে নিলাম বিজ্ঞান কৃত্রিম কোষ কেন, এমাইনো এসিডও তৈরী করতে পারে নি। তাতেই বা কি এসে গেলো? আজ পারে নি, ভবিষ্যতে পারবে। বা হয়ত পারবে না। আজ বিজ্ঞান বহু জিনিষের কারণ খুঁজে বের করেছে যা অতীতে জানা ছিলো না। অতীতে আমরা জানতাম না গাছের পাতা সবুজ কেন, আকাশ নীল কেন। আজ জেনেছি। কিন্তু 'ভগবান আকাশকে নীল রঙে তৈরী করেছে, তাই আকাশ নীল', এটা ধরে বসে থাকলে আমরা কোনোদিনই জানতে পারতাম না আকাশের নীলের প্রকৃত কারণ। তেমনি আজ যা জানি না ভবিষ্যতে তা জানা যাবে। কিন্তু বিজ্ঞানের অসফলতা ভগবানের অস্তিত্বের প্রমান হয় কি করে? ধরা যাক আমি বললাম রামগোড়ুরের ছানারা বাস্তবে আছে। তারা আকাশে থাকে। কোনো নাস্তিক আমাকে বোঝাতে আসলো এরকম কিছুর অস্তিত্ব নেই। আমি তাকে বললাম 'তোমার বিজ্ঞান একটা কোষও তৈরী করে দেখাতে পারে নি, অতএব এটা থেকেই প্রমান হয় রামগোড়ুরের ছানার বাস্তব অস্তিত্ব আছে'। মানবেন তো সেই যুক্তি? তলিয়ে ভাবলেই বুঝতে পারবেন এটা আসলে কোনো যুক্তিই নয়। 'রাম পরীক্ষায় পাস করতে পারে নি, অতএব শ্যামকে ফুল মার্কস দিতে হবে' মার্কা বোকা বোকা কথা এটা।
তাই, এই দীর্ঘ আলোচনার শেষে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতেই পারি, 'ঈশ্বর হচ্ছেন সর্বকালের সেরা গুজব'। তাই নয় কি বন্ধুরা?
0 মন্তব্যসমূহ