আমি ডিপ্রেশনে ভুগছি অনেকদিন ধরে
। ডিপ্রেশন মনের অসুখ বা রোগ । ডিপ্রেশন মানে যে মন খারাপ নয় তা এখন অনেকেরই জানা হয়ে
গেছে, কিন্তু ডিপ্রেশনকে জানার আগ্রহটা বোধহয় আর দশটা অনাগ্রহের খাতায় নাম লিখিয়েছে
ফেলেছে আমাদের সমাজে । আমার মনের অসুখ, অথচ লক্ষ করলাম যখনই মা কাউকে আমার অসুস্থতার
কথা বলতে যান তখন বলেন শরীর খারাপ । কেন ? অভ্যাস ? নাকি taboo ? আসলে দুটোই । মনের
অসুখ বলাটা সমাজে ভয়ানক, ‘পাগল’ ট্যাগ পেতে আর বাকি থাকবেনা । অবশ্য ব্যাপারটা অত্যন্ত
স্বাভাবিকই, যে দেশে মেয়েদের পিরিয়ডের কথা বলা অনুচিত সে দেশে মনের অসুখ তো অনেক বড়
কথা । আমার আবার পাগল হতে আপত্তি নেই, তাই লেখার প্রথমেই নিজের কথাটুকু ভাগ করে নিলাম
। এবারে জানাবো ডিপ্রেশনের লক্ষন ? চিকিৎসা । অবশেষে নিজের অভিজ্ঞতা ।
ডিপ্রেশনের লক্ষন
- দুঃখের অনুভুতি, দুশ্চিন্তা, অথবা শূন্যতা
- আশাহীন হয়ে যাওয়া
- অপরাধবোধ কাজ করা, মূল্যহীন অথবা অসহায় ভাবতে শুরু করা
- একসময় উপভোগ করা জিনিস গুলো আর উপভোগ করতে না পারা
- মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া । সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যার সম্মুখিন হওয়া ।
- ঘুম খুব কমে যাওয়া অথবা খুব বেড়ে যাওয়া
- রুচির পরিবর্তন
- ওজন বৃদ্ধি অথবা হ্রাস
- মেজাজ চিরচিরে হয়ে যাওয়া
- আত্মহত্যা অথবা মৃত্যুর ভাবনা
কেন হয় ?
ডিপ্রেশনের
কারণ সহজভাবে নির্ণয় করা অসম্ভব এবং হতে পারে কারণ একটি নয় অনেকটি । ডিপ্রেশন নিম্নোক্ত
কারণগুলির একটি জটিল সমন্বয়ের ফলে হতে পারেঃ
- বংশগতি
- জৈবিক – নিউরোট্রান্সমিটার লেভেলের পরিবর্তন
- পরিবেশগত
- সাইকোলজিক্যাল এবং সামাজিক (psychosocial)
চিকিৎসা
ডিপ্রেশন
চিকিৎসাযোগ্য একটি মানসিক রোগ । নিমল্লিখিত তিন প্রকারে ডিপ্রেশন প্রতিকার করা হয়ে
থাকেঃ
- বৈষয়িক সমস্যার সমাধান করা, পীড়নের ভাগ নেয়া থেকে শুরু করে পরিবারকে এ ব্যাপারে শিক্ষিত করে তোলা ।
- ওষুধ সেবন, বিশেশকরে এন্টি ডিপ্রেসেন্ট
এবার
বলি ডিপ্রেশনে থাকতে কেমন লাগে । যদিও কেমন লাগে তা দু চারটা শব্দ পাশাপাশি সাজিয়ে
বোঝানো সম্ভব নয় । তারপরও, কিছুটা চেষ্টা করলে মন্দ হয়না… ভালো লাগেনা কিচ্ছু, যা
কিছু ভালো লাগতো, কোনো ইচ্ছা করেনা । ইচ্ছা করলেও কাজ করতে ইচ্ছে করেনা । মুক্তি
চাইতে থাকি, মরতে আসলে চাইনা, কিন্তু মুক্তির উপায় একমাত্র মৃত্যুই থাকে । ঘোরের মধ্যে
বেঁচে থাকা । কথা বলতে ইচ্ছে না করা, ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে পছন্দ করা । মানুষ
দেখলে রাগ, বিরক্তি বোধ করা । মানুষ হয়েও মানুষ না যেন । মাথায় অসম্ভব ব্যথা, যেকোনো
ব্যথার চেয়ে অধিক কষ্টদায়ক । কষ্ট এড়াতে কান্না করতে ইচ্ছে করে । কখনো হাসতে মন
চায় । কারণ ছাড়া । মন সবসময় মন খারাপ করার উপায় খোঁজতে ব্যস্ত থাকে, কোন বাহ্যিক
সমস্যার সমাধান করে ডিপ্রেশনের সমাধান হয়না । ভেতর থেকে যথাসম্ভব নির্মূল করতে হয়
।
আপনার
কাছের মানুষটি কি ডিপ্রেশনে ভুগছেন ? এরকম খিটখিটেতো আগে ছিলেননা, কি হয়ে গেলো হঠাৎ
? অনেক কিছুই হতে পারে, বোঝার চেষ্টা করুন, মনের আবার কিসের অসুখ ? এত এত আত্মহত্যা
কেন হয় ? আপনি নিজেই কি সুস্থ আছেন ? মনের ব্যামো থেকে সাবধান হন, সুস্থ জীবন বাঁচুন
।
0 মন্তব্যসমূহ