সমকালীন বাংলাদেশে নাস্তিকতা প্রসারের প্রধান উপলক্ষ ছিল যুদ্ধাপরাধের
বিচার ইস্যু। আমরা তখন স্বনামে বা ছদ্মনামে ব্লগে লেখালেখি করি। সেসময়
বাংলা ব্লগগুলোতে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল রাজাকার আলবদরদের বিচার। এক পক্ষ
ঘোষণা করলো, যেকোন মূল্যেই হোক রাজাকারদের বিচার হতে হবে। অন্যপক্ষ এই
দাবি অস্বীকার করে বললো, এ বিচার কোনভাবেই ন্যায়সঙ্গত না। অভিযুক্ত
ব্যক্তিরা প্রায় প্রত্যেকেই ইসলামী আলেম। এদের বিচার চাওয়া এবং বিচার করা
একজন মুসলমানের দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়।
এই যুক্তির মাধ্যমে, ধর্মীয় অনুভূতির বিচারে দ্বিতীয় পক্ষ বেশ সুবিধাজনক অবস্থান পেল। বিপরীতে, প্রথম পক্ষে দেখা দিল বিভ্রান্তি। আর যাই হোক, একজন মুসলমান কখনোই একজন আলেমের বিচার চাইতে পারে না। দলের চেয়ে ধর্ম বড়। তারা তখন যুক্তি দিলো, অভিযুক্তরা এখন হয়তো ইসলামী আলেম, কিন্তু একাত্তরে তাদের ভূমিকা ছিল ইসলাম বিরোধী। বাঙালিদের গণহত্যায় তারা পাকিস্তানীদের সাহায্য করেছে। রীতিমতো তথ্য প্রমাণের ভান্ডার নিয়ে এটা প্রতিষ্ঠিত করা হলো যে, অভিযুক্তরা সত্যিকার অর্থেই দোষী। তখন বিপক্ষ দলের সামনে যুক্তির আর কোন পথ খোলা রইলো না। তাছাড়া, অভিযুক্তদের বিপক্ষে এত বেশি জলজ্যান্ত তথ্য প্রমাণ পেশ করা হলো যে, অন্তত ইসলামী আলেম বলেও কাউকে নির্দোষ দাবি করার সুযোগ রইলো না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিলো যে, প্রথম পক্ষটি নিশ্চিত অর্থে যুক্তি তর্কে জয়ী। দ্বিতীয় পক্ষ হয়তো পরাজিত। কিন্তু মূল ঘটনার তখনো বাকি।
ব্লগগুলো যখন অভিযুক্তদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্যপ্রমাণে ভরপুর, উপায় না দেখে দ্বিতীয় পক্ষটি তখন একাত্তর থেকে চলে গেল সরাসরি ইসলামের ইতিহাসে। যুক্তিতর্কের এই পর্যায়ে ব্লগগুলোতে আগমন ঘটলো কট্টর ইসলামী শিক্ষিত তরুণদের। তারা সরাসরি অভিযুক্তিদের পক্ষে যুক্তি দিলো এই বলে যে, একাত্তরে রাজাকার আল বদর বাহিনী যা করেছে, তা ইসলামেরে দৃষ্টিতে ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত। তারা অন্তত ইসলাম বিরোধী কিছু করেনি। প্রথম পক্ষ এই দাবির স্বপক্ষে যুক্তি প্রমাণ চাইলো। ইসলামপন্থি তরুণরা তখন কোরআন হাদিসের বিভিন্ন অংশের উদ্ধৃতি করে দালিলিক প্রমাণ দিলো এই বলে যে, পাকিস্তান ছিলো একটি ইসলামিক রাষ্ট্র। আর একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তাদের হত্যা করা ইসলামে জায়েজ। প্রথম পক্ষটি প্রশ্ন করলো, তাহলে এতো এতো নিরীহ লোককে হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করাও কি ন্যায়সঙ্গত? কট্টর ইসলামপন্থিরা যুক্তি দিলো, একটি ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিবে, তার বিরুদ্ধে এসব এসব কার্যকলাপ অন্যায় নয়। নবী রাসূল, সাহাবায়ে কেরামগণও এই কাজ করেছেন, জিহাদের পর গণিমতের মাল হিসেবে নারী, শিশু ও সম্পদ দখল করেছেন। তারা উপস্থাপন করলো বদর, উহুদ থেকে শুরু করে ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধীতার কারণে বনু কুরাইজার ৮০০ ইহুদী হত্যার ইতিহাস। বলা হলো, পারস্য, স্পেন, আফ্রিকা, ভারত প্রমুখ অঞ্চলে ইসলামের বিজয় হবার পরে কেমন হত্যাকান্ড ও ধর্ষণ চলেছিল, তার বিবরণ। এবং এর সবাই নবী রাসূলদের দ্বারা স্বীকৃত।
তারা শুধু বলেই থেমে থাকেনি, রীতিমতো প্রমাণ স্বরুপ ইসলামী ইতিহাসের দলিল ও কোরআন হাদিস ভিত্তিক তথ্য প্রমাণের ভান্ডার উপস্থিত করলো। দাবি করা হলো, রাজাকার আল বদররা একাত্তরে যা করেছে তার সবই অতীতের ইসলামী মত অনুসরণ করেই করেছে। এখানে তাদের আলাদা করে কোনো দোষ নেই! ঠিক এই পর্যায়ে যুদ্ধপরাধের বিচারের পক্ষে সক্রিয় থাকা পক্ষটি চূড়ান্ত অর্থে ধাক্কা খেল। তারা কি অস্বীকার করবে ইসলামের ইতিহাসকে? না, তাতো সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, আমরা ইসলামের এই অন্ধকার দিকটি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। অথচ আমরা এমন একটি দাবি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, যাকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া চলে না। যুক্তিতর্কের এই স্তরে এসে প্রথম পক্ষটিতে দেখা দিলো চূড়ান্ত বিভ্রান্তি। এক অংশ ভাবলো, ইসলামই যেখানে এমন ঘৃণ্য কর্মকান্ডকে সমর্থন দিয়েছে, সেখানে অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে আর লাভ কি, আমরা কি আমাদের পিতৃধর্মের বিরুদ্ধে যেতে পারবো? আরেক অংশে তখন আমরা স্থির করলাম আমাদের লক্ষ্য, বলা যায় তখনো পর্যন্ত জীবনের সবচাইতে বড় বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত, আমরা বললাম, খোদ ইসলামের ইতিহাসেই যখন এমনসব ঘৃণ্য কাজকর্মের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়, তবে আজ থেকে ইসলামও সমালোচনার যোগ্য। ধর্মের দোহাই দিয়ে আজ থেকে আর কেউ অন্যায় করে পার পেয়ে যেতে পারবে না।
তখন ব্লগগুলোতে ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে লাগলো ইসলামের নানা অন্ধকার ইতিহাস, বর্বরতার ইতিহাস। অন্যদিকে, দ্বিতীয় পক্ষটি, অর্থাৎ কট্টর ইসলামপন্থি পক্ষটি ভেবেছিল, ইসলামের ইতিহাসের দোহাই দিয়ে অভিযুক্ত আলেমদের পক্ষে অবস্থান হয়তো জোরদার করা যাবে। তারা মনে করেছিল, বিচারের দাবি করা লোকগুলোও যেহেতু মুসলমান, সেহেতু অন্তত তাদের কেউ নিজের ধর্মের বিরুদ্ধে যাবে না। কিন্তু তারা কখনোই ভাবেনি যে, একটি অংশ খোদ ইসলামের বিরুদ্ধেই চলে যাবে। তারপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। পরিস্থিতি অনেকটা এরকম হলো যে, ইসলামী ইতিহাসের কেঁচো খুড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো বড় বড় কালো সাপ। সাইবার জগতে তখন রীতিমতো ঝড় চলছে যুক্তিতর্কের। এবং স্বাভাবিক ভাবেই পরাজিত হতে হলো দ্বিতীয় পক্ষটিকে।
ফলস্বরুপ শত শত মুসলিম তরুণ-তরুণী পরিণত হলো ইসলাম বিরোধী ধর্মহীন তরুণ-তরুণীতে। মূলত যুদ্ধাপরাধের পক্ষে ইসলামপন্থিদের ‘ইসলামের দোহাই’ দেওয়া এবং অভিযুক্তদের কর্মকান্ড জায়েজ করতে গিয়ে ইসলামের অন্ধকার ইতিহাস সামনে আনাটাই বাংলাদেশে নাস্তিকতার প্রসারে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল। যে গর্ত তারা খুড়েছিল তাদের বিরোধীদের জন্য, ইতিহাসের নির্দয় পরিণতি এই যে, সে গর্তেই তাদের রচিত হলো পতন। বাংলাদেশে কট্টর ইসলামপন্থিদের জন্য এই ঘটনা ছিল এক নির্মম ট্রাজেডি।
এই যুক্তির মাধ্যমে, ধর্মীয় অনুভূতির বিচারে দ্বিতীয় পক্ষ বেশ সুবিধাজনক অবস্থান পেল। বিপরীতে, প্রথম পক্ষে দেখা দিল বিভ্রান্তি। আর যাই হোক, একজন মুসলমান কখনোই একজন আলেমের বিচার চাইতে পারে না। দলের চেয়ে ধর্ম বড়। তারা তখন যুক্তি দিলো, অভিযুক্তরা এখন হয়তো ইসলামী আলেম, কিন্তু একাত্তরে তাদের ভূমিকা ছিল ইসলাম বিরোধী। বাঙালিদের গণহত্যায় তারা পাকিস্তানীদের সাহায্য করেছে। রীতিমতো তথ্য প্রমাণের ভান্ডার নিয়ে এটা প্রতিষ্ঠিত করা হলো যে, অভিযুক্তরা সত্যিকার অর্থেই দোষী। তখন বিপক্ষ দলের সামনে যুক্তির আর কোন পথ খোলা রইলো না। তাছাড়া, অভিযুক্তদের বিপক্ষে এত বেশি জলজ্যান্ত তথ্য প্রমাণ পেশ করা হলো যে, অন্তত ইসলামী আলেম বলেও কাউকে নির্দোষ দাবি করার সুযোগ রইলো না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিলো যে, প্রথম পক্ষটি নিশ্চিত অর্থে যুক্তি তর্কে জয়ী। দ্বিতীয় পক্ষ হয়তো পরাজিত। কিন্তু মূল ঘটনার তখনো বাকি।
ব্লগগুলো যখন অভিযুক্তদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্যপ্রমাণে ভরপুর, উপায় না দেখে দ্বিতীয় পক্ষটি তখন একাত্তর থেকে চলে গেল সরাসরি ইসলামের ইতিহাসে। যুক্তিতর্কের এই পর্যায়ে ব্লগগুলোতে আগমন ঘটলো কট্টর ইসলামী শিক্ষিত তরুণদের। তারা সরাসরি অভিযুক্তিদের পক্ষে যুক্তি দিলো এই বলে যে, একাত্তরে রাজাকার আল বদর বাহিনী যা করেছে, তা ইসলামেরে দৃষ্টিতে ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত। তারা অন্তত ইসলাম বিরোধী কিছু করেনি। প্রথম পক্ষ এই দাবির স্বপক্ষে যুক্তি প্রমাণ চাইলো। ইসলামপন্থি তরুণরা তখন কোরআন হাদিসের বিভিন্ন অংশের উদ্ধৃতি করে দালিলিক প্রমাণ দিলো এই বলে যে, পাকিস্তান ছিলো একটি ইসলামিক রাষ্ট্র। আর একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করবে, তাদের হত্যা করা ইসলামে জায়েজ। প্রথম পক্ষটি প্রশ্ন করলো, তাহলে এতো এতো নিরীহ লোককে হত্যা ও নারীদের ধর্ষণ করাও কি ন্যায়সঙ্গত? কট্টর ইসলামপন্থিরা যুক্তি দিলো, একটি ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিবে, তার বিরুদ্ধে এসব এসব কার্যকলাপ অন্যায় নয়। নবী রাসূল, সাহাবায়ে কেরামগণও এই কাজ করেছেন, জিহাদের পর গণিমতের মাল হিসেবে নারী, শিশু ও সম্পদ দখল করেছেন। তারা উপস্থাপন করলো বদর, উহুদ থেকে শুরু করে ইসলামী রাষ্ট্রের বিরোধীতার কারণে বনু কুরাইজার ৮০০ ইহুদী হত্যার ইতিহাস। বলা হলো, পারস্য, স্পেন, আফ্রিকা, ভারত প্রমুখ অঞ্চলে ইসলামের বিজয় হবার পরে কেমন হত্যাকান্ড ও ধর্ষণ চলেছিল, তার বিবরণ। এবং এর সবাই নবী রাসূলদের দ্বারা স্বীকৃত।
তারা শুধু বলেই থেমে থাকেনি, রীতিমতো প্রমাণ স্বরুপ ইসলামী ইতিহাসের দলিল ও কোরআন হাদিস ভিত্তিক তথ্য প্রমাণের ভান্ডার উপস্থিত করলো। দাবি করা হলো, রাজাকার আল বদররা একাত্তরে যা করেছে তার সবই অতীতের ইসলামী মত অনুসরণ করেই করেছে। এখানে তাদের আলাদা করে কোনো দোষ নেই! ঠিক এই পর্যায়ে যুদ্ধপরাধের বিচারের পক্ষে সক্রিয় থাকা পক্ষটি চূড়ান্ত অর্থে ধাক্কা খেল। তারা কি অস্বীকার করবে ইসলামের ইতিহাসকে? না, তাতো সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, আমরা ইসলামের এই অন্ধকার দিকটি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। অথচ আমরা এমন একটি দাবি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, যাকে কোনভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া চলে না। যুক্তিতর্কের এই স্তরে এসে প্রথম পক্ষটিতে দেখা দিলো চূড়ান্ত বিভ্রান্তি। এক অংশ ভাবলো, ইসলামই যেখানে এমন ঘৃণ্য কর্মকান্ডকে সমর্থন দিয়েছে, সেখানে অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে আর লাভ কি, আমরা কি আমাদের পিতৃধর্মের বিরুদ্ধে যেতে পারবো? আরেক অংশে তখন আমরা স্থির করলাম আমাদের লক্ষ্য, বলা যায় তখনো পর্যন্ত জীবনের সবচাইতে বড় বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত, আমরা বললাম, খোদ ইসলামের ইতিহাসেই যখন এমনসব ঘৃণ্য কাজকর্মের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়, তবে আজ থেকে ইসলামও সমালোচনার যোগ্য। ধর্মের দোহাই দিয়ে আজ থেকে আর কেউ অন্যায় করে পার পেয়ে যেতে পারবে না।
তখন ব্লগগুলোতে ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে লাগলো ইসলামের নানা অন্ধকার ইতিহাস, বর্বরতার ইতিহাস। অন্যদিকে, দ্বিতীয় পক্ষটি, অর্থাৎ কট্টর ইসলামপন্থি পক্ষটি ভেবেছিল, ইসলামের ইতিহাসের দোহাই দিয়ে অভিযুক্ত আলেমদের পক্ষে অবস্থান হয়তো জোরদার করা যাবে। তারা মনে করেছিল, বিচারের দাবি করা লোকগুলোও যেহেতু মুসলমান, সেহেতু অন্তত তাদের কেউ নিজের ধর্মের বিরুদ্ধে যাবে না। কিন্তু তারা কখনোই ভাবেনি যে, একটি অংশ খোদ ইসলামের বিরুদ্ধেই চলে যাবে। তারপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। পরিস্থিতি অনেকটা এরকম হলো যে, ইসলামী ইতিহাসের কেঁচো খুড়তে গিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো বড় বড় কালো সাপ। সাইবার জগতে তখন রীতিমতো ঝড় চলছে যুক্তিতর্কের। এবং স্বাভাবিক ভাবেই পরাজিত হতে হলো দ্বিতীয় পক্ষটিকে।
ফলস্বরুপ শত শত মুসলিম তরুণ-তরুণী পরিণত হলো ইসলাম বিরোধী ধর্মহীন তরুণ-তরুণীতে। মূলত যুদ্ধাপরাধের পক্ষে ইসলামপন্থিদের ‘ইসলামের দোহাই’ দেওয়া এবং অভিযুক্তদের কর্মকান্ড জায়েজ করতে গিয়ে ইসলামের অন্ধকার ইতিহাস সামনে আনাটাই বাংলাদেশে নাস্তিকতার প্রসারে প্রধান ভূমিকা রেখেছিল। যে গর্ত তারা খুড়েছিল তাদের বিরোধীদের জন্য, ইতিহাসের নির্দয় পরিণতি এই যে, সে গর্তেই তাদের রচিত হলো পতন। বাংলাদেশে কট্টর ইসলামপন্থিদের জন্য এই ঘটনা ছিল এক নির্মম ট্রাজেডি।
0 মন্তব্যসমূহ