নিঝুমপুরের দীপ ।। শুভব্রত মন্ডল



 
কুন্ডলিনী পিসির বড় দুঃখ। জমিদার বরদাচরণ তার ভাই, কোনোমতেই দুধের সর খাননা। এদিকে শরীর তো ভেঙ্গে যাবে। কুন্ডলিনী পিসি রোজ মান্ডবী গাভীর দশসের দুধের সর, চাঁছি তৈরী করেন আর সব খায় দারোয়ান ছেদী সিং আর পুরুত পঞ্চানন তর্করত্ন। বরদাবাবুর পেয়ারের চাকর মকরকন্ঠিও সরের লোভ ত্যাগ করেছে। বাবু না খেলে সেও খায় কি করে?

এমনিতে বরদাবাবু আমিষের উপর থাকতে ভালোবাসেন। ইদানিং তিনি সব ভুলে যাচ্ছেন, আরো রোগ হয়েছে সকালে আটটি পরোটা, আলুর দম, মাখা সন্দেশ দিয়ে খাবার আধঘন্টা পর আবার জলখাবার চাইলেন। মকর আর রান্নার ঠাকুর অবাক হলেও কিছু বলতে পারলনা। খাসদাসী আন্নাকালি কুন্ডলীনি দেবীকে জানালে উনি আনন্দে আত্মহারা। 

যাইহোক
, বরদাচরণ বাবুর রান্নাঘরে এখন ডবল রান্না হয়। নায়েব মশাই শুধু খসখস করে খরচ লিখছেন।
বরদাবাবু খাবার আধঘন্টা পর যেই আরেকবার খাননি বলে হুকুম জারি করেছেন ঠিক সেই সময় ছেদী সিং এক রোগাপাতলা লম্বা-নাক বিচিত্রপোষাকের মানুষকে এনে হাজির করে সেলাম ঠুকে বললো, "হুজুর ই আদমি দারওয়াজে  কে পাশ বাঁশুরিয়া ফোড়ছিল।"

"তাই নাকি, এতে তোমার কি অসুবিধে হলো ছেদিলাল?"

"ছেদিলাল আমার নাম নাই আছে হুজুর হামি ছেদী সিং আছে, গাঁও আওরিয়া টোলা জিলা আরা।"

" থাক, বলো এতে কি হলো? তা বাঁশীবাদকের নাম কি?"

"ইতে মান্ডবীয়া মাতা ইতনা সারা দুধ দিতেছে হুজুর মাই বাপ।"

" এ কি কথা, মকর পিসিমা কে খবর দাও
তা তোমার নাম কি নিবাস কোথায়?"

" অধম ধৃতিকান্ত, নিবাস দেরিয়াপুর।"

" ছেদীরাজ, ওকে এখানে রেখে যাও দেউড়িতে। আর মকর তুমি আমাকে জলখাবারে আপাতত গন্ডাখানেক লুচি আর রসগোল্লা নিয়ে আসো। মনিপুরের ধৃতিরাজেরও নিয়ে এসো। খেয়ে ও আমাকে সরোদ শোনাবে।"

"আজ্ঞে, যে ধৃতিকান্ত সেই ধৃতিরাজ। বাঁশীর সুরের বেহাগ আর সরোদের ইমনকল্যান সব এক।"

"ওরে ইমলি বাজিয়ে কে নাকি মান্ডবীর দুধ বের করে। সে এসেছে। বাছাকে ধরে রাখ। পরশু পুন্নিমেতে পূজো দেবো বাবা ভোলেনাথকে। বাবার কৃপায় আমার বরদার খিদে খুলেছে।" বলেই কুন্ডলিনী পিসি চোখ সরু করে আগন্তুককে দেখতে লাগলেন।

 আর মকর দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে রান্নাঘরের দিকে। 

পুরুত মশায় গুনগুনিয়ে গাইছেন তখন
"অনলজ্বালা জঠরে ধরেছি, লাবনীমাখা মালপো কই মা
এ নিঝুমপুরে দীপ জ্বলে যদি জঠর অনল নিভে কই মা।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ