প্রয়োজনে ভয় পান তবে ভীতু হবেন না।। অনাবিল সেনগুপ্ত


 'ভয়' যা জীবনে ভর করে বসে যাচ্ছে প্রতিদিন। সমাজে চারিদিকে মেয়েদের উপর নির্যাতন, ভয়ানক সব ধর্ষণের ঘটনা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, সন্ত্রাসী হামলা, সামাজিক অনিশ্চয়তা,  সাম্প্রদায়িকতার বিষ, মধ্যযুগীয় কুসংস্কারের নামে বর্বরতা যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি একজন সাধারণ সমাজ সচেতন মানুষকে এই  'ভয়'  কুঁকড়ে দিচ্ছে প্রতিদিন!
‘ভয়’ যা জীবনে পঙ্গুত্ব পর্যন্ত বয়ে নিয়ে আসে । সেই ভয়ের বীজ রোপণ হয় ছোট্টোবেলা থেকে। আমরা ভয় পাই এর আসল কারণ হচ্ছে আমাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ভয় হচ্ছে ভাইরাসের মতো। এটি ছোঁয়াচেও। যুক্তিবাদী মনের অধিকারী না হলে, অল্প চেষ্টাতেই যে কারো মধ্যেই  ভয়  যেমন শিশুকে খাওয়াতে, পড়াতে, ঘুম পারাতে, শিশুকালে তার মাথায় ভুত, জুজু, ব্রক্ষ্ম দৈত্য,স্কন্ধকাটা ইত্যাদি নামে ভয়ের বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিছু গুলগপ্প পুকুর , বাড়ি কিংবা কোনো পরিত্যক্ত  স্থান নিয়ে সম্পর্কে ভৌতিক কাহিনী শুনিয়ে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে তার মধ্যে যে ভীতি সঞ্চার হল, সেই শিশুটির  মস্তিষ্কের স্মৃতিতে ভয়টা লুকিয়ে থাকবেই। যেটা সময়মতো আক্রমণ করে মনকে কাবু করে দেবে; তথা ভয় ধরিয়ে দেবে। আমরা বেশিরভাগ মানুষই অন্ধকারকে ভয় পাই। পুরনোবাড়ি, কবরস্থান, বাঁশ-ঝাড় ইত্যাদি আমাদের অনেকের মনেই ভয়ের সৃষ্টি করে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন? এর কারণ আমরা ছোটবেলা থেকেই অনেক ভাবে জেনে এসেছি যে এসব জায়গা ভূতের আস্তানা হয়। হতে পারে সেটা কোনো গল্প, সাহিত্য, টিভি সিরিয়াল  বা সিনেমা যা আমাদের মধ্যে ভয় নামক ভাইরাসটি ঢুকিয়ে দিয়েছে। ভেবে দেখুন, একটা মানুষ যদি ছোটবেলা থেকে কখনোই এ জাতীয় গল্প, সাহিত্য, টিভি সিরিয়াল বা সিনেমা না দেখে থাকে, তাহলে কি সে একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে রাতের অন্ধকারে যেতে ভয় পাবে? তার মনে ভয়ের উদ্বেগই হবেনা।
তাই ভয়ের কারণ হিসেবে বলা হয় "মানুষ ভয় পেতে শেখে"।
সাঁতার না জেনে জলে পড়লে জল সম্পর্কে একটা ভয় সৃষ্টি হবেই। কিন্তু ভৌতিক বিষয়ে ভীতিটা একটু অন্যরকম। নিজে ভূতের সামনে না পরেও গল্প বা ছবির মাধ্যমে জানলেই যথেষ্ট। এভাবেই আমরা সাহিত্য বা সংস্কৃতির মাধ্যমে ভয় পেতে শিখে এসেছি। অতএব, আপনি ভয় পান কারণ আপনি ভয় পেতে শিখেছেন। আপনি হয়তো নিজের ইচ্ছেতে শেখেন নি, কিন্তু আপনাকে বিভিন্ন গল্প ও ছবির মাধ্যমে শেখানো হয়েছে, অর্থাৎ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ আপনাকে বাধ্য করেছে। আর এ জন্যই ওই ভয় নামক অনুভূতিটি আপনার মধ্যে কাজ করে। ছোট্টোবেলা থেকে বড়ো হওয়ার পারিপার্শ্বিক পরিবেশে তা পরিবার পরিজন  হোক  বা বন্ধুবান্ধব প্রতি পদেপদে তারা মনে ভয় ধরিয়ে যায়।  কিন্তু সেই ভয়কে তো জয় করেই জীবনের পথ পার করে।
কিন্তু ‘ভয়' কি? মানুষের মধ্যে কি নির্দিষ্টভাবে ভয়ের উৎপত্তি হয়? ভয়ের কি নির্দিষ্ট পরিমাপ আছে ? ভয় কি পুরোটাই মানসিক না তার শারীরবৃত্তীয় দিক আছে? ভয় থেকেই কি পঙ্গুত্ব শুধুই মানসিক? পৃথিবীর সমস্ত দুর্নীতির আঁতুড়ঘর এই ভয়, তাকে কি  নির্মুল করা সম্ভব?
শরীরবিজ্ঞানের  ভাষায় ভয়কে অনুভব করা যতটা সহজ, ব্যাখ্যা করা বোধ হয় ততটাই কঠিন। বিজ্ঞানীরা বলেন, ভয় হচ্ছে আমাদের মস্তিস্কে জন্ম নেওয়া একটি ‘চেইন রিঅ্যাকশন', যেটির সূচনা হয় বিশেষ কোনো উদ্দীপক থেকে আর যেটি শেষ হয় এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণের মাধ্যমে, যার কারণে আমাদের শারীরিক কর্মপ্রক্রিয়ায় ঘটে লক্ষণীয় পরিবর্তন। কিন্তু কী সেই উদ্দীপক, যেটি আমাদের মনে 'ভয়' নামের চেইন রিঅ্যাকশনটির সৃষ্টি করে। ভয় পাবার জন্য যে উদ্দীপক প্রয়োজন তা হতে পারে যেমন একটি মাকড়শা, আপনার গলায় ধরা চাকু, নির্জন ঘরে একা, অডিটরিয়াম ভর্তি লোকজনের সামনে স্টেজে কথা বলা, অন্ধকার রাস্তা, পরীক্ষার খাতা,  চাকরির প্রথমদিন বা হঠাৎ দরজা খুলে গিয়ে ফ্রেমের সাথে ধাক্কা খাওয়া অথবা অনেকের ক্ষেত্রেই ভূতের সিনেমা হতে পারে উদ্দীপক।
উদ্দীপক থেকে নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থগুলোর কারণেই হার্টবিট বেড়ে যায়, শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়, মাংশপেশী শক্ত হয়ে যায়, হাতের তালু ঘেমে যায়, পাকস্থলী খালি মনে হয়। দেহের এই ঘটনাকে ফাইট টু ফাইট রেসপন্স ও বলা হয়।
ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ভয় একইভাবে কাজ করে। মনোবিজ্ঞানীরা  বলেন, “প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কের গঠন যেহেতু একইরকম তাই ধারণা করা হয়, ভয় পেলে আমার যে অভিজ্ঞতা হবে আপনারও সেই একই অভিজ্ঞতা হবে।”  কীভাবে আমাদের ভয় পেতে হবে তা আমরা জন্মগতভাবে জেনেই আসছি এবং আমাদের মস্তিষ্ক সেভাবেই বিকশিত হয়। লক্ষ্য করে দেখা গেছে মানুষ যেভাবে ভয়ে সাড়া দেয় এবং ইঁদুর যেভাবে ভয়ে সাড়া দেয়, তা প্রায় একইরকম। এখানে ভয়ের ধরণাটা আলাদা হলেও প্রতিক্রিয়াটা কিন্তু একই রকম হয়।
কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ভয় পুরোপুরি একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কিছু মানুষ হয়তো ভয় পায় ভূতের সিনেমা  দেখে আবার কিছু মানুষ হয়তো ভয় পায় ভূতের সিনেমা দেখার পর নির্জন রাস্তায় হেঁটে আসার সময়। এখানে মূল সীমাবদ্ধতাটি হচ্ছে ভয়। যা অন্য কোনো আবগের মতো পরিমাপ করার কোন আদর্শ মাপকাঠি নেই।
আমাদের আশেপাশের লোকজনের আচরণ আমাদের ভয়ে সাড়া দেওয়াকে প্রভাবিত করে। আমরা ভয় পেতে শিখি ভীতিকর অভিজ্ঞতা থেকে কিংবা আমাদের চারপাশের লোকজনের থেকে। ভয় সংক্রামক, কাজেই অন্যদের ভয় আমাদের মধ্যেও প্রকাশিত হতে পারে।  এককথায় "মানুষ ভয় পেতে শেখে"।
ভয় পেলে নানাজন নানা কাজ করে। কেউ দৌড়ে পালায়, কেউবা থ মেরে  বসে থাকে, কেউ আবার চিৎকার জুড়ে দেয়। এটি হলো বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া। এর পাশাপাশি ভয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের অভ্যন্তরে কিছু পরিবর্তন ঘটে। এগুলো ঘটে এপিনেফ্রাইন, নোরিপাইনেফ্রাইনসহ কিছু হরমোন নিঃসরণের কারণে। কী সেই পরিবর্তন? হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বেড়ে যায়, চোখের মণি বড় হয়ে যায় এবং যত বেশি সম্ভব আলো গ্রহণ করার চেষ্টা করে, চামড়ার রক্তনালিগুলো টানটান হয়ে প্রধান পেশিগুলোতে বেশি করে রক্ত পাম্প করতে শুরু করে, রক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়ে, অ্যাড্রেনালিন ও শর্করার প্রভাবে মাংসপেশিগুলো শক্ত হয়ে যায় ইত্যাদি। সাময়িক বা চিরস্থায়ী শারীরিক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এই ভয়ের কারণে যেমন চোখে কম দেখা বা অন্ধত্ব, হার্টের রোগ বা স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে, পক্ষাঘাতগ্রস্থ,  কিডনি জটিলতা ইত্যাদি মারাত্মক ব্যাধি বা পরিবর্তন। 
 একটি অস্বাভাবিক ভীতিকে ব্যাখ্যা করা যায় একটি স্থায়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী ভয় হিসেবে। যা কোনো বস্তু, বিষয় বা স্থানের প্রভাবে  হতে পারে। যার ফলে ভুক্তভোগী বহুক্ষণ ধরে, 'বাস্তবে রূপ নেবে এইরূপ কোনো ধারণা করে এবং এর থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে অথবা অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় কষ্ট পায়'। কোনো কোনো সময় তা আরও মারাত্মক রূপ নেয় । তখন যেকোনো রকমের শারীরিকভাবে ক্ষতিকে সে মনের অবচেতনে স্থায়ীভাবে অবস্থান দেয় বা বাস্তব বলে মেনে নেয়।  আগেই বলেছি এটা সাময়িক বা চিরস্থায়ী রূপ নিতে পারে।  বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ভয়রোগ বা ভীতিরোগ বা ফোবিয়া বলে। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা ফোবিয়া কথাটি এড়িয়ে আরো বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন যেমন: ব্যক্তিত্ব ডিসঅর্ডার,এঙ্গযাইটি ডিসঅর্ডার ইত্যাদি। যেমনঃ ‘এগোরাফোবিয়াঃ-কোন স্থান বা ঘটনার ভয়ে সেখান থেকে পালানো।' এক বা একাধিক ফোবিয়া একি সময় একটি মানুষকে আক্রান্ত করে থাকতে পারে।
ভয় নানাজনের বেলায় নানারকম হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে এটা  হতে পারে নিরীহদর্শন একটি মাকড়শা, কারও ক্ষেত্রে উদ্যত অস্ত্র, আবার কারো ক্ষেত্রে  দরজায় সামান্য একটি টোকা। মনে রাখতে হবে ভয়ের জন্ম যে, মস্তিস্কে সেটি বড়ই জটিল একটি যন্ত্র। আমাদের এই মাথার ভেতর আছে ১০ হাজার কোটির মতো স্নায়ুকোষ, যারা পরস্পরের সঙ্গে মিলে তৈরি করেছে এক বিশাল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, যেখানে ঘটে চলে নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। আমাদের সমস্ত কাজ, চিন্তা, দেখা, শোনা- এ সবকিছুরই সূচনা সেই মস্তিস্কে। এসব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে সৃষ্টি হয় সচেতন চিন্তা ও কাজ, আবার কিছু কাজ ঘটে ‘অটোনমিক রেসপন্স' বা স্বয়ংক্রিয় সাড়া হিসেবে। ভয় নামের এই বিশেষ কর্মটি কিন্তু প্রায় পুরোটাই স্বয়ংক্রিয় : আমরা জেনে বুঝে এটির সূচনা ঘটাই না, এটি শুরু হওয়ার আগে অবধি আমরা বুঝতেও পারি না, কীভাবে এটি ঘটবে, কতক্ষণ ধরে ঘটবে এবং তার প্রতিক্রিয়াই বা কী হবে। আমাদের মস্তিস্কের কোষগুলো যেহেতু প্রতি মুহূর্তে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তথ্যকে পৌঁছে দিচ্ছে এবং নানারকম সাড়ার সৃষ্টি করছে সেহেতু মানব মস্তিস্কের অনেকগুলো জায়গা আছে যেখান থেকে ভয়ের জন্ম হতে পারে বা ভয়ের জন্মের ভূমিকা রাখতে পারে। বিজ্ঞানীরা মানুষের মস্তিস্কের পাঁচটি বিশেষ স্থানকে চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো ভয়ের জন্ম-প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এগুলো হচ্ছে :-থেলামাস যেটি ঠিক করে চোখ, কান, মুখ, চামড়া ইত্যাদি থেকে আসা উদ্দিপনা গুলোকে কোথায় পাঠাতে হবে; সেন্সরি কর্টেক্স যেটি অনুভূতি গ্রহণের এসব উপকরণ যেমন চোখ,কান ইত্যাদি থেকে আসা উদ্দিপনাকে ব্যাখ্যা করে; হিপোক্যাম্পাস এটি সচেতন স্মৃতিকে ধারণ ও পুনরুদ্ধার করে; বিভিন্ন উদ্দীপককে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ভয়সহ বিভিন্ন অনুভূতির প্রেক্ষাপট তৈরি করে; অ্যামিগডালা মানুষের আবেগ-অনুভূতির সংকেত উদ্ধার করে, সম্ভাব্য হুমকি কোনগুলো তা নির্ধারণ করে এবং ভয়ের স্মৃতিগুলোকে সংরক্ষণ করে; আর হাইপোথ্যালামাস ভয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করব নাকি ভয় পেয়ে পালিয়ে যাব সেটি ঠিক করে। তবে টেম্পোরাল লোবের নীচে অবস্থিত অ্যামিগডালাই মস্তিষ্কের ভয়ের কেন্দ্রবিন্দু। এই অ্যামিগডালাই প্রথম ভয়ে সাড়া দেয়।
 দুটি বিষয় ঘটতে পারে মানুষের মন থেকে 'ভয়' নামক  অনুভূতির অবসানে...    
 ১) ভয়ের অবসান বা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে গোটা বিশ্বজুড়ে আর্থসামাজিক পরিবর্তন দেখা দেবে রাতারাতি। কুক্ষিগত ক্ষমতার অবসান ঘটবেই । রাষ্ট্রের ‘বজ্র আঁটুনির' অচল হয়ে যাবে। প্রাতিষ্ঠানিক ভীতি প্রদানকারীরা উবে যাবে। এবং ২) জীবনে ভয়ের অবসান হলে প্রাণের স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশে বাঁধাও আসতে পারে। কারণ 'ভয়ের উপকরণ প্রাকৃতিক'।  তবে নিয়ন্ত্রণে অনেক ব্যধির নির্মুলও সম্ভব।  
ভয়! ভয়! আর ভয়! 
দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের সেই বিখ্যাত উক্তি থেকে  'সব কুসংস্কারের জন্ম হচ্ছে ভয় থেকে। নিষ্ঠুরতারও প্রধান উৎস হচ্ছে এই ভয়। ভয়কে জয় করা থেকেই মানুষ প্রজ্ঞাবান হতে শুরু করে।' 
মানব মনের সবচেয়ে মৌলিক প্রবৃত্তিগুলোর একটি হচ্ছে ভয়। কেবল মানুষ কেন, প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই চেতনে বা অবচেতনে কাজ করে এই প্রবৃত্তি।  ভয় থেকে শুধুই কুসংস্কার বা নিষ্ঠুরতার বারবৃদ্ধি  সাথেসাথেই  বর্তমান নাগরিক সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে চলছে। নৃতত্ত্ববিদদের কথায় "ভয়ের থেকে সৃষ্টি হয়েছে যাবতীয় দেবতা (ঈশ্বর) আর অপদেবতার (শয়তান)। "প্রাণীর মৌলিক প্রবৃত্তি বা অনুভূতি যেমন ভয়, তেমনি  ‘বিশ্বাস’ ও একটি ‘অনুভূতি’ বা ‘প্রবৃত্তি ’।  অনুভূতি বা প্রবৃত্তি মানুষের মস্তিষ্কের বিশেষ ক্রিয়াকলাপ জনিত ফলাফল। ‘অনুভূতি’ কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তা বিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা গেলেও তার নিয়ন্ত্রণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। বিশ্বাস নামক প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রণ মানে সত্যজিৎ রায়ের ‘মগজধোলাই যন্ত্র'। আর এই প্রবৃত্তির জন্য এখনো  বিশ্বাসঘাতকদেরও  জন্ম হয়।  
ভয় কিন্তু আমাদের বিপদের বন্ধুও হতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ভয়ই আপনাকে বলে দেয় যে, আপনাকে বিপদ থেকে বাঁচতে হবে, নিজেকে রক্ষা করতে হবে। মানুষ সভ্যতার ইতিহাসে প্রতি পদে পদেই ভয়ানক জিনিসের দেখা পেয়েছে এবং সে সবতে মানুষ ভয় পেয়েছে। ভয় পেয়ে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নিয়েছে। আর এটা করেছে বলেই মানুষ বহাল তবীয়তে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। ভয়ের জিনিসে যদি মানুষ ভয়-টয় না পেয়ে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করতো তাহলে তা মানুষের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দিতো। ভয় পেয়ে ভয়ানক জিনিস থেকে সরে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিপদে ভয়ই নির্ধারণ করে পরবর্তী করণীয় কী। তাই একদিক থেকে বলা যায় ভয় পাবার এই প্রক্রিয়া মানুষের দরকার আছে। এই প্রক্রিয়া মানুষের অনেক উপকার করেছে। তাই প্রয়োজনে ভয় পান তবে ভীতু হবেন না।
                                                       

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ