পৃথিবীতে কোনও দেবতার আবির্ভাব বা আবির্ভূত জীবদেহকে "অবতার" বলা হয়। শব্দটি সাধারণ ক্ষেত্রে "ব্যক্তিবিশেষের (দেবতা) আবির্ভাবের জন্য অবতরণ" অর্থে ব্যবহৃত হয়। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে সম্মানীয় বা শ্রদ্ধেয় বা স্রষ্টার বাণী নিয়ে জীবদেহ ধারন গুরু বা কোনও মানুষকেও অবতার বলে উল্লেখ করা হয়। বৈদিক সাহিত্যে অবতার শব্দটি পাওয়া যায় না। তবে বেদ-পরবর্তী সাহিত্যে এটি ক্রিয়াপদ আকারে উল্লিখিত হয়েছে। খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পরে রচিত পৌরাণিক সাহিত্যেই এই শব্দটিকে স্বতন্ত্রভাবে বিশেষ্য পদের আকারে ব্যবহার করা হয়েছে। ঋগ্বেদের বর্ণনা অনুসারে, ইন্দ্র একটি রহস্যময় শক্তির বলে ইচ্ছামতো যে কোনও রূপ ধারণ করতে পারেন। ভগবদ্গীতা গ্রন্থে অবতার মতবাদটি বিস্তারিত ও সুস্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা হলেও সেখানে অবতার শব্দটির পরিবর্তে অন্যান্য পারিভাষিক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সঙ্গেই অবতারবাদের বিশেষ সম্পর্ক। যদিও এই মতবাদ কিছু ক্ষেত্রে অন্য কয়েকজন দেবদেবীদের ক্ষেত্রেও প্রযুক্ত হয়। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে বিষ্ণুর অবতারগুলির ভিন্ন ভিন্ন তালিকা পাওয়া যায়। গরুড় পুরাণ গ্রন্থে বিষ্ণুর দশাবতার ও ভাগবত পুরাণ গ্রন্থে বিষ্ণুর বাইশটি অবতারের বর্ণনা পাওয়া যায়। যদিও শেষোক্ত পুরাণটিতে এও বলা হয়েছে বিষ্ণুর অবতারের সংখ্যা অগণিত। বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বে অবতারবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মতবাদ। হিন্দুধর্মের দেবী-কেন্দ্রিক শাক্তধর্মে মহাশক্তির বিভিন্ন অবতারের রূপ বর্ণিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কালী, দুর্গা ও ত্রিপুরাসুন্দরী সর্বাধিক পরিচিত। মধ্যযুগে রচিত কয়েকটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থে গণেশ ও শিব প্রমুখ অন্য কয়েকজন দেবতার অবতারের কথা উল্লিখিত হলেও সেই গ্রন্থগুলি অপ্রধান ও স্বল্পপরিচিত। উল্লেখ্য যে, হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব ও শৈব সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম প্রধান পার্থক্যই হল এই অবতারবাদ। বৌদ্ধধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও অন্যান্য কয়েকটি ধর্মেও অবতারবাদের অনুরূপ ধারণা দেখা যায়। শিখধর্মের ধর্মগ্রন্থগুলিতে অসংখ্য হিন্দু দেবদেবীর নাম উল্লিখিত হলেও সেখানে মানুষের ত্রাণকর্তা অবতারের ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। শিখেরা এই ব্যাপারে নামদেব প্রমুখ হিন্দু ভক্তিবাদী সন্তদের মত অনুসরণ করেন। তাঁদের মতে, নিরাকার নিত্য ঈশ্বর মানব হৃদয়ে অবস্থান করেন এবং মানুষ নিজেই নিজের রক্ষাকর্তা।
হিন্দুধর্মের অবতারবাদ মূলত বিষ্ণুকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে। বিষ্ণু ত্রিমূর্তির অন্যতম দেবতা ও হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী জগতের পালক ও রক্ষাকর্তা।অবতার হল, হিন্দু শাস্ত্রমতে ভগবানের বিষ্ণুর মনুষ্যরূপে অথবা প্রাণীরূপে পৃথিবীতে আগমন। বিভিন্ন গ্রন্থে অবতারের মোট সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। অবতারের সংখ্যা চার থেকে ঊনচল্লিশ যে কোন একটি সংখ্যা হতে পারে। অবতার দুই প্রকার আংশিক ও পূর্ণাবতার। বিষ্ণু পরিপূর্ণভাবে আভির্ভূত হলে তাকে বলে পূর্ণবতার এবং আংশিকভাবে আভির্ভূত হলে তাঁকে বলা হয় 'অংশাবতার'। বিষ্ণুর দশ সর্বাধিক প্রসিদ্ধ অবতার দশাবতার নামে পরিচিত। দশাবতারের তালিকাটি পাওয়া যায় গরুড় পুরাণ গ্রন্থে। এই দশ অবতারই মানব সমাজে তাদের প্রভাবের ভিত্তিতে সর্বাপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য হন। দশাবতারের প্রথম চার জন অবতীর্ণ হয়েছিলেন সত্যযুগে। পরবর্তী তিন অবতারের আবির্ভাব ত্রেতাযুগে। অষ্টম অবতার দ্বাপরযুগে এবং নবম অবতার কলিযুগে অবতীর্ণ হন। পুরাণ অনুসারে, দশম অবতার এখনো অবতীর্ণ হননি। তিনি ৪২৭,০০০ বছর পর কলিযুগের শেষ পর্বে অবতীর্ণ হবেন। গরুড় পুরাণ অনুসারে বিষ্ণুর দশ অবতার হলেন -
১) মৎস্য, মাছের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ।
২) কূর্ম, কচ্ছপের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ।
৩) বরাহ, শূকরের রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ।
৪) নৃসিংহ, অর্ধনরসিংহ রূপে সত্যযুগে অবতীর্ণ।
৫) বামন, বামনের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ।
৬) পরশুরাম, পরশু অর্থাৎ কুঠারধারী রামের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ।
৭) রাম, রামচন্দ্র, অযোধ্যার রাজপুত্রের রূপে ত্রেতাযুগে অবতীর্ণ।
৮) কৃষ্ণ, ভ্রাতা বলরামের সঙ্গে দ্বাপরযুগে অবতীর্ণ।
৯) বলরাম, দ্বাপরযুগে অবতীর্ণ হন, কৃষ্ণের জোষ্ঠ ভ্রাতা।
১০) কল্কি, সর্বশেষ অবতার। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুযায়ী, কলিযুগের অন্তে তাঁর আবির্ভাব ঘটবে।
'ভাগবতপুরাণ' অনুসারে বলরাম শেষনাগের অবতার। কোনো কোনো বৈষ্ণব শাস্ত্রে তাঁকে বিষ্ণুর নবম অবতার মনে করা হয়। উল্লেখ্য, এই সকল গ্রন্থে বুদ্ধের কোনো উল্লেখ নেই।
ওদিকে 'ভাগবতপুরাণ' গ্রন্থের প্রথম স্কন্দে সংখ্যাক্রম অনুসারে বিষ্ণুর যে বাইশ অবতারের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা নিম্নরূপ -
১) চতুর্সন (ভাগবত ১।৩।৬) (ব্রহ্মার চার পুত্র)।
২) বরাহ (ভাগবত ১।৩।৭) (বন্য শূকর)।
৩) নারদ (ভাগবত ১।৩।৮) (ভ্রাম্যমাণ ঋষি)।
৪) নর-নারায়ণ (ভাগবত ১।৩।৯) (যমজ)।
৫) কপিল (ভাগবত ১।৩।১০) (দার্শনিক)।
৬) দত্তাত্রেয় (ভাগবত ১।৩।১১) (ত্রিমূর্তির যুগ্ম অবতার)।
৭) যজ্ঞ (ভাগবত ১।৩।১২) (সাময়িকভাবে ইন্দ্রের ভূমিকা গ্রহণ করা বিষ্ণু)।
৮) ঋষভ (ভাগবত ১।৩।১৩) (রাজা ভরত ও বাহুবলীর পিতা)।
৯) পৃথু (ভাগবত ১।৩।১৪) (যে রাজা পৃথিবীকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তুলেছিলেন)।
১০) মৎস্য (ভাগবত ১।৩।১৫) (মাছ)।
১১) কূর্ম (ভাগবত ১।৩।১৬) (কচ্ছপ)।
১২) ধন্বন্তরী (ভাগবত ১।৩।১৭) (আয়ুর্বেদের জনক)।
১৩) মোহিনী (ভাগবত ১।৩।১৭) (সুন্দরী নারী)।
১৪) নৃসিংহ (ভাগবত ১।৩।১৮) (নর-সিংহ)।
১৫) বামন (ভাগবত ১।৩।১৯) (খর্বকায়)।
১৬) পরশুরাম (ভাগবত ১।৩।২০) (পরশু অর্থাৎ কুঠার সহ রাম)।
১৭) ব্যাসদেব (ভাগবত ১।৩।২১) (বেদ সংকলক)।
১৮) রাম (ভাগবত ১।৩।২২) (অযোধ্যার রাজা)।
১৯) বলরাম (ভাগবত ১।৩।২৩) (কৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা)।
২০) কৃষ্ণ (ভাগবত ১।৩।২৩) (রাখাল বা স্বয়ং ভগবান)।
২১) বুদ্ধ (ভাগবত ১।৩।২৪) (জ্ঞানী)।
২২) কল্কি (ভাগবত ১।৩।২৫) (ধ্বংসকারী)।
এই বাইশ অবতার ছাড়াও উক্ত গ্রন্থের পরবর্তী অংশে আরও তিন অবতারের কথা আছে:
১) প্রশ্নিগর্ভ (ভাগবত ১।৩।৪১) (প্রশ্নির সন্তান)।
২) হয়গ্রীব (ভাগবত ২।৭।১১) (অশ্ব)।
৩) হংস (ভাগবত ১১।১৩।১৯) (রাজহংস)।
কল্কি অবতারের বর্ণনা দেওয়ার পর ভাগবত পুরাণ–এ ঘোষিত হয়েছে, বিষ্ণুর অবতার অসংখ্য। যদিও উপরিল্লিখিত পঁচিশ অবতারের গুরুত্বই সর্বাধিক।
ভাগবতপুরাণ–এর একটি শ্লোক, মহাভারতের কতকাংশ এবং অন্যান্য পৌরাণিক ধর্মগ্রন্থের মতে, চৈতন্য মহাপ্রভু হলেন বিষ্ণুর অন্যতম অবতার। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্য অনুসারে তাকে অবতার রূপে পূজা করার বিধান রয়েছে। এই কারণেই চৈতন্য মহাপ্রভুকে 'গৌরাঙ্গ অবতার' নামে অভিহিত করা হয়।
গরুড় পুরাণের প্রথম অধ্যায়ে বিষ্ণুর অবতার সমূহের বিবরণ দেওয়ার সময় একাদশ অবতার হিসেবে বুদ্ধের উল্লেখ করা হয়েছে - “একবিংশতি অবতারে ভগবান কলিযুগের সন্ধ্যা প্রবৃত্ত হইলে দেবদ্বেষীদিগের মোহনারথ কীকটে (মগধ দেশে) জিনসুত বুদ্ধনামে আবির্ভূত হইবেন। কলিযুগের সন্ধ্যার অবসান কালে রাজবরগ নষ্টপ্রায় হইলে, জগৎপতি কল্কি নামে বিষ্ণুযশা নামক ব্রাহ্মণের ভবনে অবতীর্ণ হইবেন”। (গরুড় পুরাণ, পূর্ব খন্ড, ১ম অধ্যায়, অনুবাদক - পঞ্চানন তর্করত্ন, নবভারত পাবলিশার্স)
গরুড় পুরাণের উত্তরখণ্ডের ৩০তম অধ্যায়ে বলা আছে - “মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, শ্রীরাম, পরশুরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ ও কল্কি পন্ডিতগণ সর্বদা এই দশ নাম স্মরণ করিবেন”।
বৃহন্নারদীয় পুরাণের ২য় অধ্যায়ে বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার বলা হয়েছে - “…স্বীয় বুদ্ধিতে ভূম্যাদি ত্রিলোক এবং আত্মাকে বিলীন করিয়া অবস্থিত যে পুরুষকে যোগিগণ অবলোকন করেন, সেই বুদ্ধাবতারকে ভজনা করি।”
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে অসুরদের বৈদিক ধর্ম হতে ভ্রষ্ট করতেই বিষ্ণু বুদ্ধ অবতার নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন করেন। বৌদ্ধ ধর্মকে আসুরিক ধর্ম হিসাবে দেখানো হয়েছে। হিন্দু শাস্ত্র রচয়িতারা কেন এই কাজটি করেছিলেন তা জানার জন্য আমাদের খুঁজে দেখতে হবে অতীতে হিন্দুদের সাথে বৌদ্ধদের সম্পর্ক কেমন ছিল। এখন বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমন বিদ্বেষ-সহিংসতা দেখা যায়, তেমনি অতীতেও হিন্দু ও বৌদ্ধদের মধ্যেও হিংসা-দ্বেষ ছিল। একতরফা নয়, দুই তরফেই পারস্পরিক বিদ্বেষের ঘটনা আজও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
নীলকান্ত তাঁর প্রায়শ্চিত্ত ময়ুখে মনু হতে একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেন। তাতে বলা হয়েছে, “যদি কোনো ব্যক্তি কোনো বৌদ্ধকে বা পশুপাতের ফুলকে, লোকায়তিককে, নাস্তিককে এবং মহাপাতকীকে স্পর্শ করে তবে সে স্নান করে শুদ্ধ হবে।” অপরার্কও তার স্মৃতিতে একই ধরণের মতবাদ প্রচার করেন। বৃদ্ধ হারিত বৌদ্ধ মন্দিরে প্রবেশ করার ফলে হওয়া পাপ শুদ্ধিকারক স্নানের মাধ্যমে দূর করতে বলেন। রামায়ণে রামচন্দ্র বনবাসে গেলে তাঁকে ফেরাতে ভরত, জাবালি প্রভৃতি মুনিদের সাথে নিয়ে যান। জাবালি রামকে চার্বাক মত অনুযায়ী উপদেশ দিয়ে রাজ্যে ফিরতে বললে রাম জাবালিকে ভর্ৎসনা করতে গিয়ে বলেন - চোর যেমন বুদ্ধও তেমন। জানবেন যে তথাগতেরা নাস্তিক। তারা মানুষের মধ্যে সবচাইতে অবিশ্বাসযোগ্য। জ্ঞানী মানুষদের নাস্তিকদের পরিত্যাগ করা উচিত। ওদিকে কল্কি পুরাণে দেখানো হয়েছে, বিষ্ণুর অবতার কল্কি বৌদ্ধদের হত্যা করার জন্য কলিযুগে অবতীর্ণ হবেন। কল্কি অনেক বৌদ্ধ, জৈন, নাস্তিকদের হত্যা করবেন। কল্কি কিকটপুরে আক্রমণ করবেন বৌদ্ধদের ধ্বংস করার জন্য। কল্কি পুরাণের বিবরণ অনুযায়ী -
“পরে তিনি (কল্কি) সেনাসমূহে পরিবৃত্ত হইয়া প্রথমত কীকটপুর (জয় করিবার নিমিত্ত) বহির্গত হইলেন। এই কীকটপুর অতীব বিস্তীর্ণ নগর।ইহা বৌদ্ধদিগের প্রধান আলয়। এই দেশে বৈদিক ধর্মের অনুষ্ঠান নাই। এখানকার লোকেরা পিতৃ অর্চনা বা দেব অর্চনা করে না, এবং পরলোকের ভয়ও রাখে না। এই দেশের অনেকেই শরীরে আত্মাভিমান করে। তাহারা দৃশ্যমান শরীর ভিন্ন অন্য আত্মা স্বীকার করে না। তাহাদের কুলাভিমান বা জাত্যাভিমান কিছুমাত্র নাই। তাহারা ধনবিষয়ে, স্ত্রীপরিগ্রহ বিষয়ে বা ভোজন বিষয়ে সকলকে সমান জ্ঞান করে, কাহাকেও উচ্চ নীচ বোধ করে না।” সংস্কৃত নাটকেও বৌদ্ধদের প্রতি হিন্দুদের বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে। উদাহরণ হিসেবে মৃচ্ছকটিকের সপ্তম অঙ্ককে নেওয়া যেতে পারে।
এছাড়া ইতিহাসেও বৌদ্ধদের প্রতি হিন্দুদের বিদ্বেষের সাক্ষ্য পাওয়া যায়। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং শশাঙ্কের বৌদ্ধ বিদ্বেষ প্রসঙ্গে রীতিমতন অভিযোগ করেছেন। হিন্দু রাজা শশাঙ্ক কুশিনগরে এক বিহারের ভিক্ষুদের বহিষ্কার করেছিলেন। পাটলীপুত্রে বুদ্ধ পদাঙ্কিত একখণ্ড প্রস্তরখণ্ড গঙ্গায় নিক্ষেপ করেছিলেন। বুদ্ধগয়ার বোধিবৃক্ষ কেটে তার মূল পর্যন্ত ধ্বংস করে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। একটি বুদ্ধ মূর্তি সরিয়ে সেখানে শিব মূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। শশাঙ্কের মৃত্যু সম্বন্ধেও হিউয়েন সাং একটি অলৌকিক কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন; সেই প্রসঙ্গেও শশাঙ্কের বৌদ্ধ বিদ্বেষ এবং তার ফলে শশাঙ্কের শাস্তির প্রতি ইঙ্গিত আছে। বোধিদ্রুম ধ্বংস ও এই মৃত্যু কাহিনীর প্রতিধ্বনি হয়েছে মঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থেও। এমনকি সোমপুরের বৌদ্ধ বিহারের একাংশও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঐতিহাসিক নীহার রঞ্জন তাঁর বাঙ্গালীর ‘ইতিহাস আদিপর্ব’ গ্রন্থে লিখেছেন - “বৌদ্ধ ধর্ম এই সময় বিলীন হইয়া গিয়াছিল, সংঘ বিহার ইত্যাদি ছিল না, একথা বলা চলে না; অথচ রাষ্ট্রের কোনো অনুগ্রহই সেদিকে বর্ষিত হইল না। শুধু যে বর্ষিত হয় নাই, তাহা নয়; বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি একটা বিরোধীতাও বোধহয় আরম্ভ হইয়াছিল, এবং রাষ্ট্রের সমর্থনও এই বিরোধীতার পশ্চাতে ছিল। বর্মণ রাজ রাজবর্মার রাজত্বকালেই সম্ভবত বর্মণ রাষ্ট্রের বঙ্গাল সৈন্যদল সোমপুরের বৌদ্ধ মহাবিহারের অন্তত একাংশ পুড়াইয়া দিয়াছিল; নালন্দার একটি লিপিতে এই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মৃতি উল্লিখিত আছে।” তিনি বৌদ্ধদের প্রতি বিদ্বেষ প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, “… বৃন্দাবন দাসের চৈতন্য-ভাগবতের উক্তি সত্য হইলে স্বীকার করিতে হয়, বৌদ্ধদের প্রতি গৌড়ীয় বৈষ্ণবেরা অত্যন্ত বিদ্বিষ্টই ছিলেন। অবধুত নিত্যানন্দের তীর্থ ভ্রমণ উপলক্ষে প্রভু যেসকল বৌদ্ধ দেখিয়াছিলেন, তাহাদের প্রতি ‘ক্রুদ্ধ হই প্রভু লাথি মারিলেন শিরে’। যে চূড়ান্ত অবমাননাটুকু বাকি ছিল এবার তাহা হইল! লাথি মারা সত্য সত্যই হউক বা না হউক, মনোভাবটা এইরূপই ছিল। মহাপ্রভুর দাক্ষিণাত্য ভ্রমণ কালে ত্রিপতি (তিরুপতি) ও বেঙ্কটগিরিতে যেসব বৌদ্ধদের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ ঘটিয়াছিল তাহাদের কথা বলিতে গিয়া বৃদ্ধ কৃষ্ণদাস কবিরাজ তাহার চৈতন্য চরিতামৃতে সেই সব বৌদ্ধদের বলিয়াছেন পাষণ্ডী, পাষণ্ডীগণ, এবং এই গ্রন্থেরই অন্যত্র বৌদ্ধদিগকে শবর, ম্লেচ্ছ ও পুলিন্দের সঙ্গে এক পর্যায়ে উল্লেখ করিয়াছেন। … কবি কঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে বুদ্ধাবতার বর্ণনা প্রসঙ্গে বলিয়াছেন , ‘ধরিয়া পাষণ্ডমত, নিন্দা করি বেদপথ, বৌদ্ধরূপী লেখে নারায়ণ।’ বেশ বুঝা যাইতেছে পঞ্চদশ শতক নাগাদ বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্ম ও সম্প্রদায় প্রায় নিশ্চিহ্নই হইয়া গিয়াছিল, দুই চারিজন যাহারা তখনও এই ধর্ম আকড়াইয়া ছিলেন, ব্রাহ্মণ্য ধর্মাবলম্বীরা তাহাদের খুব নীচু স্তরের জীব বলিয়াই মনে করিতেন।’’ নীহার রঞ্জন রায় সেন-বর্মণ রাজবংশের শাসনকালে বৌদ্ধদের দুরবস্থা সম্বন্ধে লিখেছেন, “… সাধারণভাবে সেন ও বর্মণ রাজবংশ বৌদ্ধ ধর্ম ও সংঘের উপর খুব শ্রদ্ধিত ও সহানুভূতিসম্পন্ন ছিলেন না এবং প্রত্যক্ষ অত্যাচারে না হউক পরোক্ষ নিন্দায় এবং অশ্রদ্ধায় বৌদ্ধদের উৎপীড়িত করিবার চেষ্টায় ত্রুটি হয় নাই। ভোজবর্মার বেলাব লিপিতে বলা হইয়াছে, ত্রয়ী বা তিন বেদবিদ্যাই হইতেছে পুরুষের আবরণ এবং তাহার অভাবে পুরুষেরা নগ্ন। এই উক্তিতে বেদবাহ্য বা বেদবিরোধী বৌদ্ধ, নাথ, জৈন প্রভৃতি ধর্মের প্রতি যে প্রচ্ছন্ন শ্লেষ তাহা আরও প্রকট হইয়া উঠিয়াছে হরিবর্মার মন্ত্রী ভট্ট-ভবদেবকে যখন বলা হইয়াছে ‘বৌদ্ধাম্ভনিধি-কুম্ভ-সম্ভব-মুনিঃ’ এবং ‘পাষণ্ডী-বৈতণ্ডিক-প্রজ্ঞা-খণ্ডন-পণ্ডিত’। বেদবাহ্য বৌদ্ধদের পাষণ্ড বলিয়া অভিহিত করা যেন এই পর্বে পর্ব হইতেই ক্রমশ রীতি হইয়া দাঁড়াইল। বল্লাল সেন তাহার দানসাগর গ্রন্থের উপক্রমণিকায় বলিতেছেন পাষণ্ড (অর্থাৎ বৌদ্ধ) কর্তৃক প্রক্ষিপ্ত দোষে দুষ্ট বলিয়া বিষ্ণু ও শিবপুরাণ দানসাগর গ্রন্থে উপেক্ষিত হইয়াছে। অন্য আর একটি শ্লোকে তিনি বলিতেছেন, একই কারণে দেবীপুরাণও ঐ গ্রন্থে নিবন্ধ হয় নাই। এই গ্রন্থেরই উপসংহারে একটি শ্লোকে বলা হইয়াছে কলিযুগে বল্লালসেন নামা শ্রী ও সরস্বতী পরিবৃত্ত প্রত্যক্ষ নারায়ণের আবির্ভাবই হইয়াছিল ধর্মের অভ্যুদয়ের জন্য এবং নাস্তিকদের (বৌদ্ধদের, নাথপন্থিদের প্রভৃতিদের) পদোচ্ছেদের জন্য …”
বৌদ্ধদের মনেও যে হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষ ছিল না এমনটা নয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় তাঁর ‘বৌদ্ধ ধর্ম’ গ্রন্থে লিখেছেন, “… তাহারা বলেন, হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মে কিছু মাত্র দ্বেষভাব ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি চন্দ্রকীর্তির টীকার সহিত আর্যদেবের চতুঃশতিকার কিয়দংশ ছাপা হইয়াছে, তাহাতে আচার্য সংঘসেন একজন বালকের সেবায় অত্যন্ত তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা লইবার জন্য জিদ করিতে লাগিলেন। তখন সে বলিল, “আর কিছুদিন মাত্র যাক, আমি দীক্ষা লইব।” মাসখানেক পরে সে আসিয়া বলিল, “আচার্য আমি এখন দীক্ষিত”। আচার্য জিজ্ঞাসা করেন, “কীসে তোমার দীক্ষা হইল?” সে বলিল, “এখন ব্রাহ্মণ দেখিলেই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি তাঁহাকে মারিয়া ফেলি, সুতরাং আমি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত।” বৌদ্ধদের হিন্দু বিদ্বেষ প্রসঙ্গে নীহার রঞ্জন রায় বলেছেন,
“এই দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের কিছু প্রমাণ একধরণের বজ্রযানী দেবদেবী কল্পনার মধ্যেও আছে। বজ্রযানী প্রসন্নতারা, বজ্রজালানলার্ক, বিদ্যুজ্বালাকরালী প্রভৃতি দেবতার সাধনমন্ত্রে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও ইন্দ্র প্রভৃতিকে বলা হইয়াছে মার। শিব দশভুজা মারীচির পদতলে পৃষ্ট; তাঁহাকে এবং গৌরিকে একত্র পদদলিত করিতেছেন ত্রিলোক্যবিজয়। ইন্দ্র অপরাজিতার ছত্রধর; ইন্দ্রানী পরমশ্ব দ্বারা অপদস্ত। ইন্দ্র আবার উভয়বরাহাননা মারীচির কৃপা প্রার্থী, তিনি আবার অষ্টভূজা মারীচী, পরমশ্ব ও প্রসন্নতারার পদতলে পিষ্ট। সিদ্ধিদাতা গণেশ অপরাজিতা, পর্ণ শবরী এবং মহাপ্রতিসরার পদদলিত। অবলোকিতেশ্বরের অন্যতম রূপ হরিবাহনোদ্ভব অবলোকিতেশ্বর গরুড়োপরি আসীন বিষ্ণুর স্কন্ধে আরোহণ করিয়া ব্রাহ্মণ্য ধর্মের উপর জয়ঘোষণা করিয়াছেন। সন্দেহ নাই, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের দেবদেবীদের কিছুটা লাঞ্ছিত ও অপমানিত করিবার জন্যই এইরূপ করা।”
বিনয়তোষ ভট্টাচার্য তাঁর ‘বৌদ্ধদের দেবদেবী’ গ্রন্থে বিভিন্ন বৌদ্ধ দেবদেবীদের মূর্তির বিবরণ দিয়েছেন। এসব বিবরণ হতে দেখা যায়, বৌদ্ধরা এমনভাবে তাদের অনেক দেবতার রূপ কল্পনা করেছিল, যার মাধ্যমে হিন্দু দেবদেবীদের অপমান করা যায়। বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের গ্রন্থ হতে সরাসরি কিছু অংশের উদ্ধৃতি দেওয়া যাক -
“হরিহরিহরিবাহনোদ্ভব অবলোকিতেশ্বর - অবলোকিতেশ্বরের এই মূর্তিটির নামও যেমন অদ্ভুত, কল্পনাও তেমনি অদ্ভুত। তিনটি হরি রূপ বাহন হইতে যাঁহার উদ্ভব তিনিই হরি হরি হরি বাহনোদ্ভব। সংস্কৃতে হরি মানে সিংহ হয়, গরুড়ও হয় ও বিষ্ণুও হয়। যে অবলোকিতেশ্বরের নিম্নতম বাহন সিংহ, সিংহের উপরে গরুড় ও গরুড়ের উপর বিষ্ণু বাহনরূপে বিরাজ করে তাহাকেই হরি হরি হরি বাহন লোকেশ্বররূপে অভিহিত করা হয়। এই লোকেশ্বরের বর্ণ সাদা, মুখ একটি এবং হাত ছয়টি। দক্ষিণ প্রথম করে সাক্ষীমুদ্রা অর্থাৎ এই কর দিয়া তিনি শূণ্য ভগবানকে সাক্ষী করেন, দ্বিতীয় করে অক্ষমালা ধারণ করেন এবং তৃতীয় করে লোকদের উপদেশ করেন। বামে প্রথম করে দণ্ড, দ্বিতীয় করে কৃষ্ণাজিন এবং তৃতীয়ে কমন্ডলু ধারণ করেন।
এইরূপ অদ্ভুত মূর্তি প্রস্তরে এবং ধাতুতে কেবল নেপালেই দেখিতে পাওয়া যায়।
বিঘ্নান্তক - অক্ষোভ্যকুলের এই দেবতা প্রধানত দ্বারপালরূপে পরিগণিত হন। বিঘ্ন অর্থ বাধা, কিন্তু বজ্রযানে বিঘ্ন বলিতে হিন্দু দেবতা গণেশকে বুঝায়। যেহেতু গণেশ সিদ্ধিদাতারূপে পূজিত হইয়া থাকেন, সেইজন্য বৌদ্ধেরা তাহাকে বিঘ্নরূপী মনে করেন এবং বিঘ্নান্তকের কল্পনা করেন। বিঘ্নান্তক মূর্তিতে গণেশকে দেবতার পদতলে নিষ্পেষিত অবস্থায় দেখা যায়।
বিঘ্নান্তক নীলমূর্তি, একমুখ, দ্বিভুজ ও ভীষণদর্শন। দক্ষিণ করে উদ্যত বজ্র এবং বাম করে পাশযুক্ত তর্জনী-মুদ্রা প্রদর্শন করেন। প্রত্যালীঢ় পদে ইনি গণেশকে পদদলিত করেন। ইহার আরও অনেক প্রকার রূপ আছে, গ্রন্থবিস্তার ভয়ে তাহা আর এখানে দেওয়া সম্ভব হইল না।
বজ্রজ্বালানলার্ক - আক্ষোভ্যকুলের এই দেবতার বর্ণ নীল, আকৃতি ভীতিপ্রদ ও জ্বালামালাকুল, চতুর্মুখ ও অষ্টভুজ। ইনি আলীঢ় পদে সপত্নীক বিষ্ণুকে পদদলিত করিয়া থাকেন। চারিটি মুখে শৃঙ্গার, বীর, বীভৎস ও করুণ রস অভিব্যঞ্জিত হইয়া থাকে। চারিটি দক্ষিণভুজে বজ্র, খড়্গ, চক্র ও বাণ ধারণ করেন। চারিটি বাম করে ঘণ্টা, ধনু, পাশ এবং বিচিত্র পতাকাযুক্ত খট্বাঙ্গ ধারণ করেন।
ত্রৈলক্য বিজয় - এই দেবতার কুলেশ অক্ষোভ্য। ইহার বর্ণ নীল ও মূর্তি ভীতিপ্রদ। ইনি চতুর্মুখ ও অষ্টভুজ। প্রত্যালীঢ় পদে ইনি শিব ও গৌরীকে পদদলিত করেন। ইহার প্রথম মুখ সক্রোধশৃঙ্গার রস, দ্বিতীয় রৌদ্র রস, বাম মুখ বীভৎস রস এবং পশ্চাতের মুখ বীররস প্রদর্শন করিয়া থাকে। প্রধান ভুজদ্বয়ে ঘণ্টা ও বজ্র ধারণ করিয়া হস্তদ্বয়ের অঙ্গুলিসংযুক্ত করিয়া হৃদয়দেশে বজ্রহুঙ্কার মুদ্রা ধারণ করেন। দক্ষিণ করত্রয়ে খট্বাঙ্গ, অঙ্কুশ ও বাণ এবং বাম করত্রয়ে ধনু পাশ ও বজ্র ধারণ করেন। বজ্রহুঙ্কার মুদ্রার আর একটি নাম ত্রৈলোক্যবিজয়-মুদ্রা। এই দেবতার দুই-একটি মূর্তি পাওয়া গিয়াছে। তাহার মধ্যে একটি আছে বুদ্ধগয়ার মোহন্তের মন্দিরে।
পরমাশ্ব - অক্ষোভ্যকুলের এই দেবতাটির মুরতি অদ্ভুত প্রকারের। ইহার নাম পরমাশ্ব অর্থ শ্রেষ্ঠ ঘোড়া। নাম হইতে মনে হয় ইহার সহিত হয়গ্রীবের কিছু সম্বন্ধ আছে। ইহার রঙ লাল এবং ইনি চতুর্মুখ ও অষ্টভুজ এবং অশ্বের ন্যায় চতুষ্পদ। চারিটি মুখের একটি অশ্বমুখ, একটি ব্রহ্মমুখ অর্থাৎ ব্রহ্মার চতুর্মুখযুক্ত একটি কাটামাথা বসানো। মূলমুখ রক্ত সক্রোধশৃঙ্গার, দক্ষিণ রৌদ্র, বাম মুখ ব্রহ্মমুখ এবং ঊর্ধ্বমুখ হরিত অশ্বমুখ।চারিটি দক্ষিণ হস্তের একটি বিশ্ববজ্র সহিত ‘উত্তিষ্ঠ’ অভিনয় করেন, দ্বিতীয়টিতে ত্রিপতাকা-মুদ্রা ধারণ করিয়া ওইরূপ ‘উত্তিষ্ঠ’ অভিনয় করেন। তৃতীয়ে খড়্গ ও চতুর্থে বাণ থাকে। বামের প্রথমে ছড়ির সহিত বিশ্বপদ্ম, দ্বিতীয়ে শক্তি, তৃতীয়ে দণ্ড ও চতুর্থে ধনু ধারণ করেন। প্রত্যালীঢ় পদে দাঁড়াইয়া প্রথম দক্ষিণ পদে ইন্দ্রাণী ও লক্ষ্মীকে ও দ্বিতীয় দক্ষিণ পদে রতি ও প্রীতিকে দলন করেন। বামে প্রথম পদদ্বারা ইন্দ্র ও মধুকরকে এবং দ্বিতীয় চরণ দ্বারা জয়কর ও বসন্তকে দলিত করিয়া থাকেন। এইরূপ চতুষ্পদবিশিষ্ট অদ্ভুত রূপে দেবতা আবির্ভূত হইয়া থাকেন।
কালচক্র - কালচক্র আদিবুদ্ধ যান বা আদি যানের প্রধান দেবতা। এই যানকে দেবতার নাম অনুসারে কালচক্র যানই বলা হইয়া থাকে। কালচক্রের উপর একখানি পৃথক তন্ত্র লেখা হইয়াছিল। বৌদ্ধদিগের ইহা একখানি মৌলিক তন্ত্র এবং বিশেষ প্রয়োজনীয় গ্রন্থ। অদ্যাবধি ইহা ছাপা হয় নাই। কালচক্র তন্ত্রের একখানি বিশেষ দামি টীকা আছে, তাহার নাম বিমলপ্রভা। এই টীকাখানি ইতালির বিশ্বপণ্ডিত Giuseppe tucci ছাপাইতেছেন এবং নিপুনভাবে কালচক্র যানের তথ্যাদি অনুসন্ধান করিতেছেন। তাহার নিকট হইতে অনেক বহুমূল্য ঐতিহাসিক সত্যের সন্ধান পাওয়া যাইবে বলিয়া আশা করা যায়।
কালচক্র দেবতার একটি মূর্তির বিশদ পরিচয় নিষ্পন্নযোগাবলীতে পাওয়া যায়। কালচক্রমণ্ডলে প্রাপ্ত বিবরণ হইতে দেখা যায় তাহার মূর্তি অক্ষোভ্যের ন্যায় নীলবর্ণ। তাহার মুখ চারিটি এবং হাত চতুর্বিংশতি । তিনি আলীঢ় আসনে অনঙ্গ এবং রুদ্রদেবতার শয়ান দেহের উপর নৃত্য করিতে থাকেন। তাহার পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম এবং চারিটি মুখে বারোটি চক্ষু থাকে। তাহার গ্রীবা তিনটি এবং স্কন্ধ ছয়টি। প্রধান হাত চব্বিশটি, তাহার বারোটি দক্ষিণে আর বারোটি বামে । প্রধান হাতের পর অনেকগুলি গৌণ হাত আছে। সর্বশুদ্ধ প্রধান ও অপ্রধানে মিলাইয়া তাহার হাত চব্বিশ সহস্র। মূল হাত অবশ্য চব্বিশটি, এক এক দিকে বারোটি করিয়া। এই হাতের রঙ আবার ভিন্ন ভিন্ন। দক্ষিণ দিকে নীল বর্ণের চারিটি হাতে বজ্র, অসি, ত্রিশুল ও কর্ত্রি থাকে; চারিটি রক্তবর্ণের হাতে অগ্নি, শর, বজ্র এবং অঙ্কুশ থাকে; এবং শুক্ল বর্ণের চারিটি হাতে চক্র, ছুরিকা, দণ্ড এবং পরশু থাকে। সেইরূপ বামদিকে নীলবর্ণ চারিটি হাতে ঘণ্টা, পাত্র, খট্বাঙ্গ ও কপাল থাকে; চারটি রক্তবর্ণ হস্তে ধনু, পাশ, রত্ন এবং পদ্ম থাকে; এবং চারিটি শুক্লবর্ণ হস্তে দর্পণ, বজ্র, শৃঙ্খল এবং ব্রহ্মমুন্ড থাকে। সংক্ষেপে ইহাই কালচক্রের বিচিত্র মূর্তির বিবরণ। আশ্চর্যের বিষয়, যদিও তাহার ধাতু বা প্রস্তুর মূর্তি বেশি দেখা যায় না, কাপড়ে আঁকা প্রাচীরচিত্র প্রচুর নেপালে ও তিব্বতে পাওয়া যায়।
প্রসন্নতারা - পীতবর্ণের প্রসন্নতারা দেখিতে অতি ভয়ঙ্কর। তাহার বদনমণ্ডল ক্রোধোদ্ভাসিত, অগ্নিশিখার ন্যায় তাহার পিঙ্গল কেশরাজি মস্তকের উপর উত্থিত হয়। তিনি অষ্টমুখা ও ষোড়শভুজা। আটটি দক্ষিণ হস্তে খট্বাঙ্গ, উৎপল, বাণ, বজ্র, অঙ্কুশ, মুদ্গর, কর্ত্রি এবং অভয়মুদ্রা প্রদর্শন করেন। আটটি বাম হস্তে পাশযুক্ত তর্জনী, কপাল, ধনু, খট্বাঙ্গ, বজ্র, পাশ, ব্রহ্মমুণ্ড এবং রত্নপূরিত ঘট ধারণ করিয়া থাকেন। দেবী প্রত্যালীঢ় পদে দাঁড়াইয়া বাম পদে ইন্দ্রকে এবং দক্ষিণ পদ দ্বারা উপেন্দ্রকে দলিত করেন এবং দুই পদের মধ্যে রুদ্র, ব্রহ্মা ও অপরাপর মারগণকে নিষ্পেষিত করিয়া থাকেন। ইহার মূর্তি অতীত দুষ্প্রাপ্য।”
এমন দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ-বিদ্বেষের পটভূমিতেই বুদ্ধকে বিষ্ণুর অবতার বলে ঘোষণা করা হয়। সেটা শাস্ত্রকারদের একটা ছলনা ছাড়া অন্য কিছু ছিল না। পৌরাণিক কাহিনীতে বলা হয়েছে, অতীতে অসুরেরা বৈদিক ধর্ম অবলম্বন করে অপরাজেয় হয়ে উঠলে বিষ্ণু বুদ্ধ রূপে অবতীর্ণ হয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করে অসুরদের বিভ্রান্ত করেন। যার ফলে দেবতারা অসুরদের পরাজিত করতে সমর্থ হয়। অগ্নিপুরাণে বলা হয়েছে, “অগ্নি বললেন, সম্প্রতি বুদ্ধাবতার বর্ণনা করছি। এটা পাঠ বা শ্রবণ করিলে অর্থ লাভ হয়ে থাকে। পুরাকালে দেবাসুর সংগ্রামে দেবতারা দানবগণ কর্তৃক পরাজিত হয়ে ঈশ্বরের কাছে গিয়ে তার শরণাগত হন এবং আমাদের রক্ষা করুন, রক্ষা করুন বলে দীনভাব প্রকাশ করেন। তখন মায়ামোহস্বরূপ ভগবান শুদ্ধোধনের পুত্ররূপে অবতীর্ণ হয়ে বুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ হলেন। তার মায়ায় দানবেরা বেদ ধর্ম পরিত্যাগ করে বৌদ্ধ হল, এই প্রকারেই বেদ ধর্ম বিবর্জিত পাষণ্ডদের সৃষ্টি হয়, তারা সর্বদাই নরকার্হ কর্মের অনুষ্ঠান করত। কলিযুগের অবস্থানে সকল ব্যক্তিই ঐরুপ বেদাচারবিহীন সঙ্কর ধর্ম কুঞ্চকধারী, দস্যু ও অধর্ম লিপ্সু হবে। তখন ম্লেচ্ছগণ রাজরূপী হয়ে মানুষদের ভক্ষণ করবে। পরে ভগবান কল্কি বিষ্ণুযশার পুত্ররূপে অবতীর্ণ হয়ে অস্ত্রশস্ত্র গ্রহণ পূর্বক তাদের উৎসাদিত করবেন। মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য তার পুরোহিত হবেন। তখন পুনরায় বর্ণাশ্রমাচার আগের মত সংস্থাপিত হবে এবং প্রজাগণ সৎ কর্মানুষ্ঠান ও ধর্মাচরণে আস্থা প্রদর্শন করবে। অবশেষে ভগবান কল্কিরূপ পরিত্যাগ করে স্বর্গ ধামে প্রস্থান করবেন। এরপর পুনরায় সত্যযুগের উদয় হবে তখন সব রকম বর্ণ; আশ্রম ও ধর্ম স্বপদে প্রতিষ্ঠিত থাকিবে। (১-১০)”
(অগ্নিপুরাণ/১৬ অধ্যায়, অনুবাদক - পঞ্চানন তর্করত্ন, নবভারত পাবলিশার্স, ১৯৯৯)
ভাগবতেও একই কথা বলা হয়েছে -
“তারপর কলিযুগ প্রবৃত্ত হইলে।
জন্মিবেন বুদ্ধরূপে অবনীমণ্ডলে।।
বুদ্ধরূপে হয়ে প্রভু অঞ্জন নন্দন।
দুষ্টগণে বিমোহিত করিবে তখন।।
এরূপে কলিযুগে জন্মি গয়াদেশে।
প্রচার করিবে বৌদ্ধ ধর্ম প্রভু বিংশে।।”
(ভাগবত, ১ম স্কন্ধ, ৩য় অধ্যায়, অবতার কথন দ্বারা ভগবানের চরিত্র বর্ণন, বেণীমাধব শীলস কর্তৃক সম্পাদিত, অক্ষয় লাইব্রেরী)
এবং ২য় স্কন্ধের সপ্তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে,
“অসুরেরা হয় যবে বেদ অনুগত।
বুদ্ধরূপে করিলেন সবে মোহাগত।।
কলিশেষ হবে যবে ওহে মতিমান।
যাগ, যজ্ঞ, স্বাহা নাহি রবে বিদ্যমান।।
ম্লেচ্ছ হবে ধরা পতি জানিবে অন্তরে।
তাহারে নাশিবে প্রভু কল্কি অবতারে।।”
(ভাগবত, ২য় স্কন্ধ, ৭ম অধ্যায়, ব্রহ্মা কর্তৃক নারদের নিকটে ভগবানে লীলাবতার কথন এবং তত্তদবতারের কর্ম ও গুণ বর্ণন)
সারদা তীলক তন্ত্রে (১৭/১৫৮) দশাবতার স্তোত্রে বুদ্ধ বন্দনায় বলা হয়েছে, “পুরাকালে দেবতাদের অসুর বিজয় সম্ভব করতে যিনি চীবর পরিধান করেছিলেন, সেই মূলকারণ বুদ্ধকে প্রণাম করি।”
অবতার ঘোষিত হওয়ার পরে বুদ্ধ অবশ্য হিন্দু ধর্মে খানিকটা সম্মানও পেয়েছিলেন। কবি জয়দেব তাঁর গীতগোবিন্দে বলেছেন, “যিনি বৈদিক যাগযজ্ঞের নিন্দা করলেন, যজ্ঞে বলি প্রদত্ত পশুদের প্রতি করুণা প্রকাশ করলেন, সেই মহাপুরুষের প্রভাব এমনই অনতিক্রমণীয় হয়ে পড়েছিল যে তিনি বিষ্ণুর প্রকাশরূপে স্বীকৃতি পেলেন।” বৃহন্নারদীয় পুরাণের ২য় অধ্যায়ে বলা হয়েছে - “… নিজ বুদ্ধিতে ভূমি প্রভৃতি ত্রিলোক এবং আত্মাকে বিলীন করে অবস্থিত যে পুরুষকে যোগীরা অবলোকন করেন, সেই বুদ্ধাবতারকে ভজনা করি।”
শুধুমাত্র বুদ্ধের হিন্দুকরণ নয়, বৌদ্ধ ধর্মের অবনতিকালে হিন্দুরা বৌদ্ধদের অনেক ধর্মীয় স্থান দখল করে নিজেদের বলে প্রচার করেছিল। বুদ্ধগয়ার একটি দেবালয়ে গোল পাথরে দুইটি পদচিহ্ন রয়েছে। তার নাম 'বুদ্ধপদ'। কানিং হ্যাম দেখেছিলেন, অমর দেবের খোদিত লিপিতে তা বিষ্ণু পদ বলে লিখিত। তাই তিনি অনুমান করেছিলেন, আগে তা বুদ্ধপদ ছিল, পরে হিন্দুরা তাকে বিষ্ণুপদ বলে প্রচার করে। গয়াও পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মস্থল ছিল। গয়ার অনেক হিন্দু মন্দিরে আজও বুদ্ধদেবের খোদিত লিপি বিদ্যমান রয়েছে। পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরও আগে বৌদ্ধদের মন্দির ছিল বলে অক্ষয় কুমার দত্ত মত প্রকাশ করেন। অক্ষয়কুমার দত্ত বলেছেন, “জগন্নাথের ব্যাপারটিও বৌদ্ধ ধর্ম মূলক বা বৌদ্ধ ধর্ম মিশ্রিত বলিয়া প্রতীয়মান হয়। জগন্নাথ বুদ্ধাবতার এইরূপ একটি জনশ্রুতি সর্বত্র প্রচলিত আছে। চীন দেশের তীর্থ যাত্রী ফা হিয়েন ভারত বর্ষে বৌদ্ধ তীর্থ পর্যটন যাত্রা করিয়া পথিমধ্যে তাতার দেশের অন্তর্গত খোটান নগরে একটি বৌদ্ধ মহোৎসব সন্দর্শন করেন। তাহাতে জগন্নাথের রথযাত্রার ন্যায় অবিকল এক রথে তিনটি প্রতিমূর্তি দৃষ্টি করিয়া আইসেন। মধ্যস্থলে বুদ্ধ মূর্তি ও তাহার দুই পার্শে দুইটি বোধিসত্ত্বের প্রতিমূর্তি সংস্থাপিত ছিল। খোটানের উৎসব যেই সময়ে ও যতদিন ব্যাপিয়া সম্পন্ন হইত, জগন্নাথের রথযাত্রাও প্রায় সেই সময়ে ও ততদিন ব্যাপিয়া অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে। মেজর জেনেরল কনিংহম বিবেচনা করেন, ঐ তিনটি মূর্তি পূর্বোক্ত বৌদ্ধ ত্রিমূর্তির অনুকরণ বই আর কিছুই নয়। সেই তিনটি মূর্তি বুদ্ধ, ধম্ম ও সংঘ। বৌদ্ধেরা সচরাচর ঐ ধর্মকে স্ত্রীরূপ বলিয়া বর্ণন করিয়া থাকে। তিনি জগন্নাথের সুভদ্রা। শ্রীক্ষেত্রে বর্ণ বিচার পরিত্যাগ প্রথা এবং জগন্নাথের বিগ্রহ মধ্যে বিষ্ণু পঞ্জরের অবস্থিতি প্রবাদ এ দুটি বিষয় হিন্দু ধর্মের অনুগত নয়; প্রত্যুত নিতান্ত বিরুদ্ধ। কিন্তু এই উভয়ই সাক্ষাৎ বৌদ্ধমত বলিলে বলা যায়। দশাবতারের চিত্রপটে বুদ্ধাবতারের স্থলে জগন্নাথের প্রতিরূপ চিত্রিত হয়। কাশি এবং মথুরার পঞ্জিকাতেও বুদ্ধাবতার স্থলে জগন্নাথের রূপ আলেখিত হইয়া থাকে। এই সমস্ত পর্যালোচনা করিতে করিতে, জগন্নাথের ব্যাপারটি বৌদ্ধ ধর্ম মূলক বলিয়া স্বতই বিশ্বাস হইয়া উঠে। জগন্নাথ ক্ষেত্রটি পূর্বে একটি বৌদ্ধ ক্ষেত্রই ছিল এই অনুমানটি জগন্নাথ বিগ্রহ স্থিত উল্লিখিত বিষ্ণু পঞ্জর বিষয়ক প্রবাদে একরূপ সপ্রমাণ করিয়া তুলিতেছে। যে সময়ে বৌদ্ধেরা অত্যন্ত অবসন্ন হইয়া ভারতবর্ষ হইতে অন্তর্হিত হইতেছিল সেই সময়ে অর্থাৎ খ্রিষ্টাব্দের দ্বাদশ শতব্দীতে জগন্নাথের মন্দির প্রস্তুত হয়, ইহা পূর্বে সুস্পষ্ট প্রদর্শিত হইয়াছে। এই ঘটনাটিতেও উল্লিখিত অনুমানের সুন্দররূপ পোষকতা করিতেছে। চীন দেশীয় তীর্থ যাত্রী হিউয়েন সাং উৎকলের পূর্ব দক্ষিণ প্রান্তে সমুদ্র তটে (অর্থাৎ উড়িষ্যার যে অংশে পুরি সেই অংশে) চরিত্রপুর নামে একটি সুপ্রসিদ্ধ বন্দর দেখিয়া যান। ঐ চরিত্রপুরই এক্ষণকার পুরী বোধহয়। তাহার নিকটে পাঁচটি অত্যুন্নত স্তূপ ছিল। শ্রীমান এ. কনিং হেম অনুমান করেন, তাহারই একটি অধুনাতন জগন্নাথ মন্দির। স্তূপের মধ্যে বুদ্ধাদি অস্থি কেশাদি সমাহিত থাকে। এই নিমিত্তই জগন্নাথের বিগ্রহ মধ্যে বিষ্ণু পঞ্জরের অবস্থিতি বিষয়ক উল্লিখিত প্রবাদ প্রচলিত হইয়াছে।”
ভারতীয় সংবিধানের প্রণেতা ডক্টর বি.আর. আম্বেদকর বুদ্ধের বিষ্ণুর অবতার হবার বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন। তাঁর লেখা দলিত আন্দোলনের ২২ টি সঙ্কল্পের মধ্যে ৫ম সংকল্পে তিনি লিখেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি না এবং করবো না যে ভগবান বুদ্ধ বিষ্ণুর অবতার। আমি বিশ্বাস করি এটা নিছক পাগলামি এবং মিথ্যা প্রচার।”
শ্রীলঙ্কার জনপ্রিয় ভিক্ষু কে. শ্রী ধম্মানন্দ অভিযোগ করেছিলেন, কিছু গোঁড়া ধার্মিকেরা বুদ্ধের উদার শিক্ষার জন্য তাঁর নিন্দা করার চেষ্টা করেন কিন্তু যখন তাঁরা তাঁদের লক্ষ্যে সফল হলেন না, তাঁরা তাঁকে তাঁদের ভগবানের অবতার বলে পরিচয় দিয়ে তাঁর মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা করলেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে ছিল তাঁদের ধর্মে বৌদ্ধ ধর্মের আত্মীকরণ। তিনি আরও বলেছিলেন, এই পন্থা ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের উৎসস্থল হতে বৌদ্ধ ধর্মকে উৎখাত করতে কাজ করেছিল।
(তথ্যসূত্র:
১- বাঙ্গালীর ইতিহাস আদিপর্ব, নীহার রঞ্জন রায়।
২- বৌদ্ধ ধর্ম, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
৩- ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়, অক্ষয় কুমার দত্ত।
৪- বৌদ্ধদের দেবদেবী, বিনয়তোষ ভট্টাচার্য।
৫- Untouchables, B.R Ambedkar।
৬- উইকিপিডিয়া।)
0 মন্তব্যসমূহ